হত্যার সময় লক্ষ্মীরানীর পেটে চাকুও মারে ঘাতক!

ময়নাতদন্ত শেষে লক্ষ্মীরানীর মৃতদেহ সমাহিত : আলমডাঙ্গা থানায় মামলা হচ্ছে আজ

স্টাফ রিপোর্টার: লক্ষ্মীরানীকে হত্যা করে নদীতে ফেলে আত্মগোপনে যাওয়া দুখিরামের হদিস মেলেনি। প্রতিবন্ধী বড় ছেলেকে ফেলে গেলেও দুখিরাম নিয়ে গেছে তার ছোট ছেলেকে। এদিকে গতকাল চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে লক্ষ্মীরানীর ময়নাতদন্ত শেষে মৃতদেহ তার বাবা পাবনা বেরুর ত্রিমহনির গোরা চন্দ্র দাশ গ্রহণ করেন। গতকালই তার লাশ মুন্সিগঞ্জ খুদিয়াখালী শ্মশানে সমাহিত করা হয়।
নিখোঁজের ৯ দিনের মাথায় গতপরশু শনিবার লক্ষ্মীরানীর মৃতদেহ মাথাভাঙ্গা নদীর মুন্সিগঞ্জ গোয়ালবাড়ির অদূরবর্তী স্থান থেকে উদ্ধার হয়। লাশ গুম করার জন্যই তার পায়ে রশি বেঁধে পানিতে ফেলা হয়েছে। তাছাড়া লাশ যাতে না ভাসে সে জন্য পেটও ফুটো করে দেয়া হয়। হত্যার সময়ই এ নৃশংসতা চালিয়েছে তার স্বামী দুখিরাম। এ অভিযোগ করে লক্ষ্মীরানীর বাবা বলেছেন, আনুমানিক ১০ বছর আগে বিয়ে হয়। বিয়ের পর ওদের ঘরে দু সন্তান আসে। বড় ছেলে প্রতিবন্ধী। ছোট ছেলেটা ভালো। ৯দিন আগে হত্যা করে লাশ গুমের পর দিব্যি ঘুরতে থাকে সে। স্ত্রীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে সে তার শ্বশুরদের মোবাইলফোনে জানান। গতপরশু শনিবার গোসুল করতে নেমে স্থানীয়রা মৃতদেহ দেখে পুলিশে খবর দেয়। গলিত লাশ উদ্ধারের পর পরিচয় মেলে। আত্মগোপন করে দুখিরাম। দুখিরাম চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার খাদিমপুরের লক্ষ্মীপুরের স্বর্গীয় জগদীশের ছেলে। দুখিরাম খেয়াঘাটের মাঝি হিসেবে কাজ করতো। লক্ষ্মীরানীকে হত্যা করা হয়েছে। বিষয়টি স্পষ্ট হলেও গতকাল পর্যন্ত তেমন কেউ বাদী হয়ে মামলা করেনি।
লক্ষ্মীরানীর কাকা অভিযোগ করে বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরেই লক্ষ্মীর ওপর নানাভাবে নির্যাতন করে আসছিলো দুখিরাম। ওকে ধরে ঠিক মতো জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে নির্যাতনের কারণ বেরিয়ে আসবে। ওর বড় বউদিও জড়িয়ে পড়তে পারে। কারণ, দুখিরামের সাথে ওর বড় বৌদির অনৈতিক সম্পর্ক নিয়েই লক্ষ্মীর সাথে দুখিরামের মাঝে মাঝে ঝগড়াঝাটি হতো বলে আমরা শুনেছি। সেই কারণেই লক্ষ্মীকে অকালে চলে যেতে হলো।
মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গ্রামসূত্রে জানা গেছে, আলমডাঙ্গার লক্ষ্মীপুর গ্রামের স্বর্গীয় জগদীশ ওরফে জ্যোতিষ রামের ছেলে দুখিরামের সাথে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় পাবনা জেলার আমিনপুর উপজেলার শিতলপুর গ্রামের গোরা চন্দ্র দাশের মেয়ে লক্ষ্মীরানীর। বিয়ের বছর ঘুরতেই তাদের কোল জুড়ে আসে একটি প্রতিবন্ধী পুত্র সন্তান তার বয়স এখন ৭ বছর। কিছুদিন আগে আর একটি পুত্র সন্তান জন্ম নেয়, তার বয়স মাত্র ২ বছর। লক্ষ্মীরানীর নামে ব্যাংকে ২ লাখ টাকা ছিলো সেই টাকা দুখিরাম তুলে নিয়ে এসে ঘরের মেঝেই পুতে রাখে। এক বছর পর সেই টাকা ঘরের মেঝে থেকে তুলতে গেলে টাকা নষ্ট হয়ে যায়। কিছু টাকা ভালো থাকলে সেই টাকা দিয়ে দুখিরাম একটি স্যালোইঞ্জিন চালিত লাটাহাম্মার কেনে। ঘাট পারাপারের কাজ ছেড়ে দিয়ে ভালোই চলছিলো সংসার। কিছুদিন আগে লক্ষ্মীরানীর ছোট বোনের সাধ খাওয়াবার জন্য দাওয়াত আসে। কিন্তু দুখিরাম নিজে ও স্ত্রীকে নিয়ে যাবে না বলে জানালে বাধে পারিবারিক কলহ। গত ৩০ ডিসেম্বর দুখিরাম ও তার পরিবারের লোকজন প্রচার করতে থাকে গৃহবধূ লক্ষ্মীরানী বাড়ি থেকে ৬০ হাজার টাকা নিয়ে অন্য একটি ছেলের সাথে পালিয়েছে। লক্ষ্মীরানীর পিতার বাড়ি থেকে লোকজন আসলে দুখিরামের ভাবি গিতারানীর মুখের কাছে কেউ টিকতে না পেরে সম্ভব্য জায়গাতে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। দুখিরামের পরিবারের লোকজনের রহস্যজনক আচরণ বিভিন্ন প্রশ্নের জন্ম দিতে থাকে। গতপরশু শনিবার দুপুর ১২টার দিকে কৃষ্ণপুর-গোয়ালবাড়ি মাথাভাঙ্গা নদীর কালিতলার ঘাট নামক স্থানের মাথাভাঙ্গা নদীর একটি কোমরে এক নারীর লাশ ভাসতে দেখে চমকে উঠে মাঠের কয়েকজন কৃষক। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে উৎসুক জনতার ভিড় জমে। মহিলার লাশ উদ্ধারের সংবাদে দুখিরামসহ তার পারিবারের লোকজন গা ঢাকা দেয়। সংবাদ পেয়ে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের এসআই সাজ্জাদ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে লাশ উদ্ধার করলে লাশের হাতে শাখা ও শাড়ি দেখে গ্রামের মানুষ দুখিরামের স্ত্রী বলে চিহৃত করে। থানা পুলিশ লাশ উদ্বার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে প্ররণ করে।
এ ব্যাপারে গৃহবধূ লক্ষ্মীরানীর পিতা গোরা চন্দ্র দাশ অভিযোগ করে বলেন, আমার মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে দুখিরাম, তার ছোট ভাই সন্নারাম ও তার স্ত্রী গীতারানী নৃশংসভাবে হত্যা করে। হত্যার পর পায়ে দড়ি বেঁধে নদীতে খুঁটি মেরে রেখে লাশ গুমের চেষ্টা চালায়। লাশ ভেসে উঠতে পারে সন্দেহে ধারলো অস্ত্র দিয়ে পেট ফুটো করে দেয়। এছাড়া দুখিরামের সাথে তার ছোটভাই সন্নারামের স্ত্রী গীতারানীর রয়েছে পরকীয়া সম্পর্ক এটাই হত্যার মূল কারণ বলে তিনি জানান।
গ্রামাবাসী জানায়, নিখোঁজের পর থেকে দুখিরামসহ তার পরিবারের লোকজনদের আচরণ ছিলো সন্দেহজনক। দুখিরাম ও তার পরিবারের লোকজন গভীর রাতে গোয়ালবাড়ি গ্রামের মৃত হানিফের ছেলে ইকবারীর  দেয়া মাথাভাঙ্গা নদীর অবৈধ্য কোমরে বাশেঁর খুটি মেরে বেঁধে রাখে লাশ। দুখিরামকে মাঝে মাঝে নদীর পাড়ে প্রায় ঘুরাঘুরি করতে দেখা যেতো। লাশ ভেষে ওঠার পর থেকে দুখিরাম ও তার পরিবারের লোকজন পালিয়ে থাকায় এলাকাবাসীর আর বুঝতে বাকি নেই যে দুখিরাম ও তার পরিবারের লোকজন লক্ষ্মীরানীকে হত্যার পর লাশ গুমের চেষ্টা করেছে। গতকাল বেলা ৪টার দিকে ময়নাতদন্ত শেষে খুদিয়াখালী শ্মশাণ ঘাটে লাশের সৎকার করা হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মামলার প্রস্তুতি চলছিলো। আজ সোমাবার আলমডাঙ্গা থানায় মামলা হতে পারে।

ন।

Leave a comment