চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের প্রধান সড়কের পাশের একটি দোকানের শাটার ভেঙে চুরি হয়েছে। চোর ট্রাক ভিড়িয়ে দোকানর ১২টি আইপিএসসহ বিভিন্ন মডেলের ২৪০টি ব্যটারি চুরি করে নিয়ে গেছে। ব্যাটারিগুলোর প্রায় প্রতিটিরই ওজন ১৫ কেজির বেশি। অতোগুলো ব্যাটারি নিশ্চয় দু-একজন চোখের পলকে ট্রাকে তুলতে পারেনি। সময় লেগেছে। সঙ্গত প্রশ্ন, তাহলে কি দীর্ঘ সময় ধরেই জেলা শহরের প্রধান সড়কে পুলিশি টহল ছিলো না? তাছাড়া নৈশপ্রহরী নিশ্চয় নাক ডেকে ঘুমিয়েছিলেন অথবা উদ্দেশেপ্রণোদিত অন্য কোথাও অবস্থান করেছেন। সিসি ক্যামেরা? ওই এলাকায় এখনও পৌর এবং পুলিশের ওই প্রযুক্তির আওতায় নেয়া সম্ভব হয়নি। চুরির দৃশ্য কোনো পথচারীরও দৃষ্টিগোচার হয়নি? হবে কীভাবে? জেলা শহরের প্রধান সড়কের অধিকাংশ দু’ধার জুড়ে এমনিতেই তো রাখা হয় ট্রাক। বুঝবে কীভাবে- কোন ট্রাকে কোন দোকানের চোরাই মালামাল তোলা হচ্ছে? গতপরশু রাতে জেলা শহরের প্রধান সড়ক তথা শহীদ আবুল কাশেম সড়কের টাউন ফুটবল মাঠের বিপরীতে ন্যাশনাল ব্যাটারি হাউসে দুঃসাহসিক চুরির পর স্বাভাবিকভাবেই অধিকাংশের মুখে এসব প্রশ্নযুক্ত সমালোচনা উচ্চারিত হয়েছে। না, চুরির দীর্ঘসময় পার হলেও চোরাই মালামাল উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। পারবে? বিশ্বাস করা কঠিন।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার বর্তমান অফিসার ইনচার্জ দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই শহরের প্রাণকেন্দ্র শহীদ হাসান চত্বরের দোকানপাটগুলো রাত ১২টার পর বন্ধ করার নিদের্শ জারি করেন। দূরপাল্লার কোচ থেকে মাঝরাতে যাদের নামতে হয়, করতে হয় সকালের অপেক্ষা, সেই যাত্রীদের থাকতে হয় গা ছমছম পরিবেশে। তাতেও দোষ হতো না যদি জেলা শহরের যে সড়কের এক মাথায় থানা, আর এক মাথায় শহর পুলিশ ফাঁড়ি থাকার পরও দুঃসাহসিক চুরি না হতো। শহরে চুরির পর পুলিশকে প্রথমেই যে বিষয়টি করতে দেখা যায়, সেটা হলো নৈশপ্রহরীকে বেধে থানায় নেয়। চলে জিজ্ঞাসাবাদ। সন্দেহভাজন কিছু ব্যক্তিকে গ্রেফতারও করা হয়। আগে চুরির পর প্রকৃত চোর ধরাপড়া এবং চোরাই মালামাল উদ্ধারের কিছু নজির মিলতো। এখন? দীর্ঘদিন ধরেই সেটা তেমন পরিলক্ষিত হয় না। কখনো কখনো আটক আর ছাড়ার নাটকও চোখে পড়ে। দুষ্টুলোকে বলে ওর মধ্যেই নাকি অর্থবাণিজ্য লুকিয়ে থাকে। অবশ্য বর্তমান অফিসার ইনচার্জের আমলে তেমন উদাহরণ বিরল বলেই প্রকৃত চোর ধরা পড়বে আশা করা অমূলক নয়। পুলিশের সেই চৌকস সক্ষমতাই প্রত্যাশা করে শান্তিপ্রিয় আমজনতা। তাছাড়া অত্যাধুনিক বিজ্ঞানযুগেও ব্যবসায়ীদের প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা ক্যামেরা স্থাপন না করার বিষয়টিও দায়িত্বজ্ঞানহীনতারই বহির্প্রকাশ নয়কি? সম্প্রতি পৌরসভা-পুলিশ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে উচ্চক্ষমতার নিরাপত্তা ক্যামেরা স্থাপন করেছে। পুলিশের বিশেষ শাখায় তা সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে। প্রশংসনীয় এ উদ্যোগকে ত্বরান্বিত করতেও ব্যবসায়ীদের সহযোগিতার হাত বাড়ানো উচিত। ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা পেলে পৌরসভা-পুলিশ নিশ্চয় শহীদ আবুল কাশেম সড়কসহ সর্বস্তরেই সিসি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পথটা সুগম হতে পারতো। সেটাও হয়নি, ব্যবসায়ীরাও সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেননি। তারপর পুলিশি টহলও তেমন নেই। নৈশপ্রহরীকেও জাগিয়ে রাখার মতো নজরদারির অভাব। সড়কের দু ধারে সারিবদ্ধভাবে ট্রাক রাখাটা বন্ধ করার জন্য ট্রাক টার্মিনালও করা সম্ভব হয়নি। ফলে মওকা নিয়েছে চোর।
অপরাধের পরে নয়, অপরাধমূলক কর্মকা-ের উদ্দেশে পা বাড়ালেই অপরাধী ধরা পড়বে এমন পরিবেশেরই প্রত্যাশা করে সমাজ। তা না হলে কি আর এমনি এমনিই গোপন সংবাদদাতা নিযুক্ত করার জন্য কাড়ি কাড়ি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়? যদিও তা যথেষ্ট নয় বলে দায় এড়ানো যায়। তাছাড়া পুলিশে অপ্রতুলতা তো সর্বজন স্বীকৃত। সে কারণেই অপরাধমূলক কর্মকা- শূন্যের কোঠায় নয় কেন প্রশ্নটি পুলিশ নিয়োগ কর্তারা তথা আমজনতা করে না। তাই বলে দীর্ঘসময় ধরে ট্রাক ভিড়িয়ে চুরি হলো অথচ টহল পুলিশও তা দেখলো না কেন- প্রশ্নতি করা যাবে না? নৈশপ্রহরীর ঘুম বা অনুপস্থিতির আড়ালে অন্যকিছু? জিজ্ঞাসাবাদতো চলছেই। তাতেই থেমে থাকলে চলবে না, প্রকৃত চোর ধরে চোরাই মালামল উদ্ধারে কালবিলম্ব কাম্য নয়। পদস্থ কর্তার প্রশ্নের জবাবের জন্য যাকে তাকে ধরে গ্রেফতারের সংখ্যা বাড়ানো অন্যায়, অনাকাক্সিক্ষত। যে পুলিশ অন্যায় রোধে আইন প্রয়োগে নিযুক্ত, সেই পুলিশকে কি অন্যায় করা মানায়? প্রকৃত চোর দ্রুত ধরা পড়–ক, পুলিশের ওপর জানমালের নিরাপত্তাকামী জনগণের আস্থা বাড়ুক। একই সাথে চুরিসহ অপরাধমূলক কর্মকা- রুখতে নিজের এবং নিজের প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে সার্মথ্য সকলে সিসি ক্যামেরা স্থাপনে আন্তরিক হোক। এ প্রত্যাশা আমাদের।