মুক্তার মৃতদেহ ময়নাতদন্ত শেষে দাফন : শিশুকন্যা রুহির দিকে তাকিয়ে অশ্রু ঝরালেন অনেকে
স্টাফ রিপোর্টার: ধুরন্ধর স্বামীর নৃশংসতার শিকার মুক্তা খাতুনের মৃতদেহ গতকাল রোববার ময়নাতদন্ত শেষে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। গতপরশু তাকে হত্যা করে তার স্বামী রুবেল হোসেন টুটুল আত্মগোপন করে। এ বিষয়ে গতরাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মামলা হয়নি। সদর থানার অফিসার ইনচার্জ ইন্সপেক্টর তোজাম্মেল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, জিডি বলে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।
মুক্তা খাতুনের রয়েছে আড়াই বছর বয়সী শিশুকন্যা রুহি। সে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকেই মূলত চুয়াডাঙ্গা ইসলামপড়াস্থ নানাবাড়িতেই থাকতো। গতকাল সে তার মাকে হারিয়েছে। অতোটুকু বয়সে সে কি বুঝেছে? জগতে কাকে হারিয়েছে। মাকে তো হারালোই, আবার পিতাও লাপাত্তা। গতকাল মুক্তা খাতুনকে যারই শেষবারের মতো দেখতে ছুটে গেছেন তার পিতার বাড়ি, তাদের অনেকেই শিশু রুহির দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। তবে রুহির পিতা ছো বেলা থেকেই রুহিকে দেখতে পারতো না বলে মন্তব্য করেছেন রুহির মামা নাজমুলসহ পরিবারের সদস্যরা। তারা বলেছেন, রুবেল হোসনে টুটুল তার নিজ গ্রামেই প্রথম বিয়ে করে। সে ঘরেও রয়েছে এক সন্তান।
চুয়াডাঙ্গা ইসলামপাড়ার আজিজুল হকের মেয়ে মুক্তা খাতুন এসএসসি পাস করার পর মামাবাড়ি কুষ্টিয়া পিয়ারাতলায় থাকতো। সেখানেই এক ছাত্রাবাসে থাকতো কুষ্টিয়া দৌলতপুর উপজেলার মাথুরাপুরের সিদ্দিক ম-লের ছেলে রুবেল হোসেন টুটুল। মুুক্তা খাতুনের সাথে প্রেমসম্পর্ক গড়ে তোলে। প্রথম স্ত্রীর বিষয়টি গোপন রেখে মুক্তার সাথে প্রেমসম্পর্ক গড়ে তুলে রুবেল হোসেন টুটুল। প্রথম স্ত্রীকে বাদ দিয়ে মুক্তার সাথে বিয়ে করে। এরপর মুক্তাকে তার পিতা আজিজুল হক চুয়াডাঙ্গা তালতলা পশুহাটপাড়ায় বাড়ি তৈরি করে দেন। সেখানেই গত ৪ বছর ধরে বসবাস করে আসাছিলেন মুক্তা-টুটুল। এদের সংসারে এক কন্যাসন্তান এলেও টুটুলের উগ্র আচরণ বন্ধ হয়নি। বরঞ্চ নানাভাবে মুক্তাকে নির্যাতন করতে থাকে। নানা অজুহাতে টাকা আদায় করতো টুটুল। শ্বশুরের নিকট থেকে নেয়া মোটরসাইকেল বিক্রি করেও খেয়েছে। সূত্র বলেছে, মোটরসাইকেল বিক্রি করে টুটুল পূর্বের স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে। বিষয়টি জানার পরই মুক্তা আপত্তি করে। গতপরশু সকাল থেকেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে মুক্তাকে হত্যা করে ঠা-া মাথায় লাশ ঘরের আড়ার সাথে ঝুলিয়ে রেখে টুটুল তার শ্বশুরবাড়িতে পাতপেড়ে খায়। এরপর নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে মোবাইলফোনে মুক্তার খোঁজ নিতে বলে মুক্তার ভাই নাজমুলকে। নাজমুল শনিবার বিকেলে ছুটে গিয়ে ঘরের মেজেতে হাঁটুগেড়ে থাকা ঝুলন্ত লাশ দেখে চমকে ওঠেন। উদ্ধার করেন। গতকাল ময়নাতদন্ত করা হয়। হত্যা মামলা রুজু করার কথা বলা হলেও গতকাল শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মামলা হয়নি। পুরাতন কবরস্থানে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এলাকাবাসী ধুরন্ধর ঘাতক রুবেল হোসেন টুটুলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পুলিশি তৎপরতা প্রত্যাশা করেছে।