প্রসঙ্গ: লেবেলক্রসিঙে সময় অপচয় এবং গেটম্যানের গালে থাপ্পড়

সম্পাদকীয়

লেবেলক্রসিঙে গেট দীর্ঘ সময় ধরে নামিয়ে রাখার জন্য তো আর গেটম্যানের দোষ নয়। দোষ বা দায় যেটাই হোক, সেটা বাংলাদেশ রেলওয়ের। লেবেলক্রসিঙের একজন দারোয়ান কখন গেট নামাবেন, কখন তুলবেন তা তার ইচ্ছে বা মেজাজ মর্জিও ওপর নির্ভর করে না। বিধি মোতাবেক কর্তাদের নির্দেশনা মেনে চলেন মাত্র। তা হলে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের প্রধান সড়কের লেবেলক্রসিঙে কর্তব্যরত দারোয়ানকে থাপ্পড় খেতে হলো কেনো? দীর্ঘ সময় ধরে গেট নামিয়ে রাখার কারণে সেখানে থামতে বাধ্য হওয়া সারিবদ্ধ যানবহনের  আরোহী ও চালকদের কয়েকজন ক্ষোভ প্রকাশ করেন। প্রত্যক্ষদশীর অভিমত, ক্ষোভ প্রকাশের কটুক্তি গেটম্যানের কানে গেলে তিনিও ক্ষুব্ধ হন। এরপরই শাদা পোশাকের এক ব্যক্তি এগিয়ে গিয়ে গেটম্যানের গালে থাপ্পড় মারেন। গেটম্যান ট্রেন গেলেও গেট না তুলে তিনি ছুটে যান স্টেশনে নালিশ জানাতে। ততোক্ষণে লেবেলক্রসিঙে উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে। ভাগ্যিস তার আঁচ শহরে ছড়ানোর আগেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়া সম্ভব হয়। যা স্টেশন মাস্টারের প্রতিনিধিসহ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছুনো পুলিশ অফিসারের দক্ষতারই প্রকাশ।

গেটম্যানের গালে থাপ্পড় মারার মধ্যে কোনো বাহাদুরি নেই। বরঞ্চ, পেশি শক্তি প্রয়োগের মধ্যদিয়ে আইনের প্রতি দায়িত্বজ্ঞানহীনতারই প্রকাশ পেয়েছে। অবাক হলেও সত্য যে, থাপ্পড় মারা ব্যক্তি আইন  প্রয়োগে নিয়োজিত সংস্থাসমূহের একটির সদস্য। তারপরও তিনি কেন অন্যায়টা করলেন? অধর্য্য? নাকি গেটম্যানের অসৌজন্যমূলক আচরণ সুধরোনর প্রয়াশ? না, সকল ক্ষেত্রে বাহাদুরি মানায় না। উচিৎও নয়। বিষয়টি তাকে যেমন বোঝানো দরকার, তেমনই দরকার চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের প্রধান সড়কের টি-১৩ নম্বর লেবেলক্রসিঙে প্রতিদিনের অসহনীয় বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি। প্রতিদিন একাধীকবার ২০ থেকে ৩০ মিনিট করে গেট ফেলে রাখতে হয়। এতে অসহনীয় যানজটই শুধু সৃষ্টি হয় না, বাড়ে ক্ষোভ। সেই পুঞ্জিভূত ক্ষোভেরই যে অপ্রত্যাশিত বহির্প্রকাশ ঘটে পরশু শনিবার দুপুরে তা দায়িত্বশীলেরাও নিশ্চয় অস্বীকার করবেন না। পাশের দেশ যখন যোগাযোগের ক্ষেত্রে রেলওয়ের বৈপ্লবিক উন্নয়ন ঘটিয়েছে তখন আমাদের দেশে একের পর এক স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। লোকসানের অজুহাতে লোকবল নিয়োগ এড়িয়ে স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ মানে সেই মাথাব্যাথা হলে মাথা কেটে ফেলার মতো নয়কি?

অত্যাধুনিক বিজ্ঞানযুগেও ব্যাস্ত একটি লেবেলক্রসিঙে দীর্ঘ সময় ধরে গেট নামিয়ে রাখা মানে প্রযুক্তিতে পিছিয়ে থাকা। যদিও আমরা ঘুরে ফিরেই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে ফেলেছি বলে ভাবছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ মানে শুধু তথ্য প্রযুক্তিতে অগ্রগতি নয়, সর্বক্ষেত্রেই প্রযুক্তির সুব্যবহার। বর্তমান সরকার তথ্য প্রযুক্তিতে যতোটা এগিয়েছে অতোটা না হলেও কিছুটা রেলওয়ের ক্ষেত্রে এগুতো হবে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের সাথে আমাদের ট্রেনযোগাযোগ দিন দিন সম্প্রসারিত হচ্ছে, অথচ লেবেলক্রসিং থেকে শুরু করে অনেক ক্ষেত্রেই প্রযুক্তির নূন্যতম প্রয়োগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। প্রযুক্তির মাধ্যমে লেবেলক্রসিঙে যেমন গেট নামা ওঠার বিষয়টি সয়ংক্রীয় করতে হবে, তেমনই সড়কে সময়ের অপচয় রোধে আন্তরিক হতে হবে। প্রতিটি স্টেশনের কার্যক্রম পুন চালু করার পাশাপাশি রেলযোগাযোগ সম্প্রসারণে সরকারকে আন্তরিক হতে হবে। বাংলাদেশ রেলওয়ের দৈন্যতা দূর করতে দুুর্নীতি রোধের পাশাপাশি প্রয়োজন নব উদ্যমে ঢেলে সাজানো। লোকসানের ভয়ে বাণিজ্য গোটানো মানে লাভ করতে না পারার অক্ষমতা।

Leave a comment