ভোট উৎসব থেকে ফিরলাম মাত্র। উৎসব পুরো মাত্রা পায়নি এখনো। সবে জমে উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু নগর জুড়ে এখন ভোট উৎসবের দখিনা হাওয়া। এই উৎসবের আমেজ রাজধানীতে এসে লেগেছে তো বটেই, ছড়িয়ে গেছে দেশব্যাপী। ভোটের ভেন্যু যখন নারায়ণগঞ্জ তখন চোখ-কান খোলা সকল নগর এমনকি গ্রামবাসীদেরও। কারণটাও অজ্ঞাত নয়।
নারায়ণগঞ্জ তার নিজ গুণে সব সময়ই আলোচনায় থাকে। তার শিল্পগুণ ছিলো, আছে। সেই গুণর জৌলুসেই অন্যান্য অপগুণ গুলো এসে নারায়ণগঞ্জে ভনভন করতে থাকে। সেই অপগুণ উড়ছে তো উড়ছেই। কখনো কখনো তা জেঁকে বসছে নগরের সুন্দরের ওপরেও। সেই অপগুণগুলোকে কোনোভাবেই তাড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। ফলে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য বা জনপদ বলে তার পরিচিতি পাল্টানো যায়নি। পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশনে উত্তোরণের পরেও ‘অপ’ যুক্ত রয়ে গেছে নারায়ণগঞ্জে।
ফলে আমরা দেখতে পেয়েছি এই সময়কালে অপহরণ, হত্যা, শিক্ষক নিপীড়নের মতো ঘটনা নারায়ণগঞ্জকে আলোচনায় রেখেছে। সাত খুনের ঘটনা এখনো শিহরিত করে নগরবাসীকে। তবে একথা বলতেই হয় এই আতঙ্কের দায়ভার সিটি করপোরেশনে এতোদিন নির্বাচিত যে মেয়র এবং কাউন্সিলররা ছিলেন তাদের নয়। এই সংকট সামগ্রিকভাবে নারায়ণগঞ্জ জনপদের।
তফসিল ঘোষণার পর থেকে প্রায় নিয়মিত নারায়ণগঞ্জে গেছি। কথা বলেছি সকল দল-মত এবং সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে। সিটি করপোরেশন হিসেবে নারায়ণগঞ্জ মাত্র একটি মেয়াদ শেষ করলো। শহরকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলার যে নকশা, সেটি এই এক মেয়াদে তৈরি করা সম্ভব হয়নি। তবে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এবং মাস্টারপ্ল্যান পরিকল্পনাধীন।
তবে এখানে সমস্যার জায়গাটি হচ্ছে সিটি করপোরেশন তাদের মতো করে নগরের পূর্ণ উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করতে পারছে না। কারণ এখানে ইমারতের নকশা অনুমোদনের দায়িত্ব রাজউকের। রাজউক তার মতো করে আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক ভবনের অনুমোদন দিয়ে দিচ্ছে। পার্ক-খেলার মাঠের বেলাতেও তাই হচ্ছে। আবার নদী কেন্দ্রিক শহর সাজাতে গেলে সিটি করপোরেশনকে বিআইডব্লিউটিএ’র ওপর নির্ভর করতে হয়।
নগরবাসীরা বলছেন- নগরীটি অতি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। মূলত চাষাড়া থেকে নিতাইগঞ্জ পর্যন্ত এক সড়কের ওপর ভর করে চলছে এই শিল্প শহরটি। নদীর পূর্বপাড়ের সাতটি ওয়ার্ডের সাথে মূল শহরের সরাসরি যোগাযোগ নেই। এক প্রকার বিচ্ছিন্নতা আছে। শহরে সড়কের চেয়ে যানবাহন বেশি, ফলে নগরবাসীকে যানজটের কবলে থাকতে হয় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। সাধারণের চলাচলের জন্য নেই ফুটপাথ। রাস্তাঘাট, রেললাইনের দুইপাশ হকারদের দখলে। নদীর পাড়ও নগরবাসীর নিঃশ্বাস নেয়ার উপযুক্ত নয়।
নগরের সাধারণ মানুষদের পাশাপাশি বিভিন্ন পেশাজীবীরা বলছেন- নগরের উন্নয়ন কেবল মেয়রের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে না। এখানে জেলা পরিষদ, পুলিশ প্রশাসন, বিআইডব্লিউটিএ, সংসদ সদস্যসহ আরও নানা সংস্থার ওপর নির্ভর করে। মেয়র কোনো উদ্যোগ নিলে অন্য সংস্থার বিধি-নিষেধের কারণে সেই উন্নয়ন কাজগুলো এগিয়ে নেয়া সম্ভব হয় না।
তবে নগরবাসীদের কাছ থেকে এই অভিযোগও এসেছে যে-নগরীর সকল উন্নয়ন কাজ, পরিকল্পনা, সেবা মেয়র কেন্দ্রিক। গত মেয়াদে কারা কোনো ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন, তা নগরবাসীর অধিকাংশই জানেন না। তাদের মতে নগর উন্নয়নের পরিকল্পনা তৃণমূল অর্থাৎ ওয়ার্ড থেকেই আসা প্রয়োজন।
এবার যারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন মেয়র বা কাউন্সিলর হিসেবে, তারা সবে প্রচারণা শুরু করেছে। তাদের ইশতেহার এখনো নগরবাসী বা ভোটারদের কাছে পৌঁছেনি। তবে প্রার্থীদের বিবেচনায় রাখতে হবে-নগরবাসী বিপন্ন শীতলক্ষ্যাকে যেকোনো মূল্যে রক্ষার দাবি তুলেছে।
শীতলক্ষ্যাকে বাঁচিয়ে নগরকে সুন্দর করে গড়ে তোলার দাবি সকল পক্ষের নগরবাসীর। বিশেষ করে নত্নু যে ৭০ হাজার ভোটার এবার ভোট দেবেন তারা পরিবেশবান্ধব নগর চাইছেন। একই সাথে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নগরবাসী এমনকি প্রার্থীরাও বলছেন-নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের এখন প্রধান ইশতেহার হতে হবে নিরাপদ শহরের।
অর্থাৎ ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সকল পেশার, শ্রেণির মানুষ যেন নারায়ণগঞ্জ শহরকে নিরাপদ ভাবতে পারেন। আতঙ্ক নয় স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয়ার দাবি এবার শীতলক্ষ্যার পাড়ের মানুষগুলোর। নদীর কালো পানি ফিরে পাক আপন রঙ। আর শহর থেকে দূর হোক সন্ত্রাসের আঁধার।
তুষার আবদুল্লাহ : বার্তা প্রধান, সময় টিভি।