রহমান রনজু/কামরুজ্জামান বেল্টু: মাঝে মাঝেই আশে ওরা। চাটুকারিতার সাথে ভিক্ষাবৃত্তি করে ৫শ টাকার কয়েকটি নোট বানিয়ে ফিরে যায়। গতরাত ১২টার দিকে সীমান্ত এক্সপ্রেস থেকে ওদেরই ৪ জন চুয়াডাঙ্গা স্টেশনে নেমেই শীতে কাপতে কাপতে আশ্রয় খুঁজতে শুরু করে। দৃশ্য দেখে নূন্যতম বিবেকবানেরও প্রশ্ন জাগবে, ওরা কোন পিতা-মাতার সন্তান? শীতের মধ্যে স্বল্প পোশাকে পাঠিয়েছে ভিক্ষা করে রোজগারের জন্য?
গতরাতে চুয়াডাঙ্গা স্টেশনে ৪ শিশুকে চুয়াডাঙ্গায় আগমণের উদ্দেশ্য জানতে চাওয়া হলে আমতা আমতা শুরু করে। আলাপচারিতার এক পর্যায়ে ওরা যশোর থেকে ট্রেনযোগে চুয়াডাঙ্গায় এসে ভিক্ষা করে দেড় দু হাজার টাকা কামিয়ে ফেরার বিষয়টি স্বীকার করে। ওদের বয়স ৮ থেকে ১১ বছরের মধ্যে। ৪ শিশুই অভিন্ন ভাষায় বলেছে, ওদের বাড়ি যশোর স্টেশন বস্তি এলাকায়। পিতা-মাতা সেখানেই থাকে। অবশ্য এক শিশু বললো, তার মা অন্যের হাত ধরে চলে গেছে। পিতা নতুন করে বিয়ে করেছে। ৪ শিশুর মধ্যে দুভাই এক বোন সহোদর বলে জানিয়ে বলেছে, গরিব। ঠিক মতো খেতে পারি না বলেই তো এসেছি। মাঝে মাঝেই আসি আমরা।
ঠিকানা দিতে গিয়ে ৪ শিশু যা বলেছে তা হলো- হৃদয়, শাকিব ও সুমির পিতার নাম আলতাব। যশোর স্টেশন বস্তিতে থাকেন। নয়নের পিতার নাম নজরুল। যশোর রায়পাড়ায় বাড়ি। ভিক্ষার কৌশল মূলত শহরের বড় বড় বিপণি বিতানের সামনে ক্রেতাদের হাত পা জড়িয়ে ধরে টাকা নেয়া। শীতে কাতর হয়ে নারী পুরুষের সামনে গিয়ে শীতবস্ত্র যেমন হাতিয়ে নেয়, তেমনই ওরা মাঝে মাঝে চোরাচালানিদের বাহকেও রূপান্তর হয়। চোরাচালানি বা মাদককারবারীরা তাদের স্বার্থে নামকাওয়াস্তে কিছু টাকা দিয়ে ব্যাগ বহন করিয়ে নেয়। বুঝে না বুঝে অবৈধ মালামালের ব্যাগ বহন করলেও অর্জিত অর্থ সংরক্ষণে পাকা। শিশু নয়ন বললো, খুচরা টাকা পাওয়ার ১শ পুজলেই নোট করি। ৫শ হলে ৫শ টাকা নোট করে নিজের কাছে লুকিয়ে রাখি। তিন বেলার খাওয়াটাও চেয়ে চিন্তে হয়ে যায়। যদি একান্তই না মেলে, তাহলে হোটেলে ডালভাত কিনে খেয়ে রাতে স্টেশনের প্লাটফর্মে ঘুমিয়ে পড়ি।
প্রসঙ্গত: দেশজুড়ে ভিক্ষুকমুক্ত করার সরকারি উদ্যোগ অব্যাহত। ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে ভিক্ষাবৃত্তি পেশা থেকে ফেরানোর যখন প্রাণান্ত প্রচেষ্টা, তখন শীতের মধ্যে শিশু সন্তানদের পাঠিয়েছেন ভিক্ষা করতে হৃদয়হীন মাতা-পিতা।