জঙ্গি আস্তানায় অভিযান : চট্টগ্রামে অস্ত্র-গ্রেনেডসহ ৫ হুজি সদস্য আটক

 

স্টাফ রিপোর্টার: জঙ্গি আস্তানাসহ নগরীর দুটি স্থানে অভিযান চালিয়ে হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের (হুজি) পাঁচ সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাব। তাদের কাছ থেকে পিস্তল, হ্যান্ড গ্রেনেড, ম্যাগজিন, বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জাম, সাংগঠনিক পুস্তক ও ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর ছয়টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত টানা পাঁচ ঘণ্টা এ অভিযান চলে। র‌্যাবের দাবি, আটক ব্যক্তিদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হুজি নেতা মুফতি হান্নানের দুজন ঘনিষ্ঠ সহযোগীও রয়েছেন; যারা এই সংগঠনের ঢাকা ও কুষ্টিয়ার সমন্বয়ক। ৱ্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের জানান, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কার‌্যালয়ে হামলা চালিয়ে অস্ত্র লুট এবং প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে নিজেদের নেতাদের উদ্ধারের পরিকল্পনা ছিলো হুজি সদস্যদের।

জানা গেছে, হুজি সদস্যরা নাশকতার জন্য চট্টগ্রামে সংগঠিত হচ্ছে, এমন গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার পর অভিযানে নামে র‌্যাব। গতকাল ভোরে নগরীর একে খান মোড় থেকে অস্ত্রসহ তাজুল ইসলাম ও নাজিমুদ্দীন নামে দুই হুজি সদস্যকে দু’টি পিস্তলসহ আটক করেন র‌্যাব সদস্যরা। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী কর্নেল হাট এলাকায় মুকিত তালুকদার পাড়ার একটি দোতলা বাড়ি ঘেরাও করে হাফেজ আবুজর গিফারি, নূরে আলম ও ইফতেশাম আহমেদ নামে তাদের আরো তিন সহযোগীকে আটক করা হয়। এ সময় ওই বাড়ি থেকে ১২টি হ্যান্ড গ্রেনেড, সাতটি ম্যাগজিন, বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জাম, সাংগঠনিক বই ও ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়। র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে জঙ্গিরা নিজেদের বেশ কিছু ডকুমেন্টস ও সরঞ্জাম পুড়িয়ে ফেলে। এ সময় বাসাটি থেকে আগুনের ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। আটক আবুজর গিফারি হুজির কুষ্টিয়া অঞ্চলের সমন্বয়ক এবং অপর দুজন সক্রিয় সদস্য বলে র‌্যাব জানিয়েছে।

অভিযান শেষে র‌্যাব পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান সাংবাদিকদের বলেন, দুই দফায় আটক ওই পাঁচজনই হুজির সদস্য। দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকলেও তারা নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে কর্নেল হাটের নির্মাণাধীন ওই তিনতলা ভবনের দোতলার বাসা ভাড়া নেয় কয়েকজন। তারা বলেছিলো, ডিসেম্বরের শুরুতেই তারা পরিবার নিয়ে আসবে। মুফতি মাহমুদ খান জানান, কিছুদিন আগে হুজি নেতা মুফতি মাঈনুল ইসলামকে যখন আটক করা হয়, তখন ঢাকায় তাদের প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে তাজুল ইসলামের নাম আসে। সে-ই চট্টগ্রামে হুজিকে সংগঠিত করার চেষ্টায় ছিল। কারাগারে থাকা হুজি নেতা মুফতি হান্নান ও রউফের সাথে নাজিমুদ্দিনের ঘনিষ্ঠতা ছিলো। তিনি আরো জানান, আটক আবুজর গিফারি কুষ্টিয়ায় হুজি সংগঠক। এছাড়া নূরে আলম ও ইফতেশামও দীর্ঘদিন ধরে হুজির সঙ্গে যুক্ত। তাদের কয়েকজনের বিষয়ে র‌্যাবের কাছে তথ্য ছিলো।

ব্রিফিংয়ে আরো জানানো হয়, কর্নেল হাটের ওই বাড়ির মালিক মনসুর আহমেদ র‌্যাবের অভিযানের পর থেকে পলাতক রয়েছেন। আটক যুবকেরা কিছুদিন আগে তার বাসা ভাড়া নেয়। তাদের গভীর রাতে বাসায় ঢুকতে দেখা যেতো। গতকাল সকাল ৬টার দিকে র‌্যাব এসে স্থানীয়দের জঙ্গি আস্তানার কথা জানায়। পরে বাড়ির দরজায় গিয়ে নারীদের বেরিয়ে আসতে এবং পুরুষদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে দরজায় আঘাত করার পরও সাড়া না পেয়ে র‌্যাব দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। মুফতি মাহমুদ বলেন, তারা যখন বেরিয়ে আসতে বলছিলেন, তখনই বাড়ির ভেতরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। পরে ভেতরে ঢুকে দেখা গেছে, বেশ কিছু গেজেটস তারা পুড়িয়ে ফেলেছে।

ব্রিফিংয়ে র‌্যাব পরিচালক আরো বলেন, আমরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে যা পেয়েছি তা হচ্ছে হুজি একটা সুযোগ নিতে চেয়েছিলো। হুজির যে সব জঙ্গি কারাগারে আছে তাদের কিন্তু আদালতে নিতে হয়। সংগঠনটির নেতাদের উদ্দেশ্য ছিলো কখনও যদি সুযোগ পায়, তাহলে প্রিজন ভ্যানে আক্রমণ করে শীর্ষ নেতাদের মুক্ত করবে। ব্রিফিংয়ে দাবি করা হয়েছে, হুজির পরিকল্পনা আছে নাশকতা করার। তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো একটি স্থাপনায় হামলা করবে এবং সেখান থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট করে পরবর্তীতে জঙ্গি কার্যক্রমে ব্যবহার করবে। এর মাধ্যমে তাদের নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়া নেতাকর্মীদের মনোবল উজ্জ্বীবিত করে আবারও আলোচনায় আসবে।