সব অপ্রতুলতা কাটিয়ে সুচিকিৎসা পাওয়ার অধিকার বাস্তবায়ন হোক

 

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের দশা দেখে কোনটি বললে যথার্থ হবে- প্রদীপের নিচে অন্ধকার? নাকি অন্ধকারের মধ্যে নিভু নিভু প্রদীপ? যেটাই যথার্থ হোক না কেন, সরকারি স্বাস্থ্যসেবাদান প্রতিষ্ঠানগুলো যে সুস্থ স্বাভাবিকভাবে চলছে না, তা নিশ্চয় দায়িত্বশীলেরও অস্বীকার করবেন না।

একটি জেলার শীর্ষ স্থানীয় সরকারি হাসপাতাল স্বেচ্ছাসেবী ছাড়া চলে না, এটা অবশ্যই সরকারের ব্যর্থতা। নেই নেই করে কি সকলের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়? যে হাসপাতালে নিখরচায় সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার কথা, সেই হাসপাতালের বাঁকে বাঁকে যদি স্বেচ্ছাসেবীদের অর্থ হাতানোর ফাঁদ পাতা থাকে তাহলে গ্রাম্য সরলসোজা ও দরিদ্র মানুষগুলো কোথায় যাবে? সরকারি হাসপাতালেও টাকা লাগে। অধিকাংশ ওষুধ পথ্যই কিনতে হয় বাইরে থেকে। তারপর আবার ট্রলিটা টেনে দিলে সেও বকশিসের নামে কৌশলে চাঁদাবাজি করে। হাড়গোড় ভাঙা রোগী পেলে জরুরি বিভাগে তো অর্থবাণিজ্যের উৎসব চলে। অথচ কর্তব্যরত কর্তার কিছুই বলার নেই। লোকবল অপ্রতুলতায় ওরাই তো ভরসা। তারপরও দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হায়রে সরকারি হাসপাতাল বলেই কি দায় এড়ানো যায়?

হাসপাতালেই শুধু নয়, একজন রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকের সহকারী হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করলে বেশ কিছু বিষয়ে দক্ষতা অর্জন অসম্ভব নয়। ওইভাবেই তো সাধারণ ইনজেকশনপুশসহ স্যালাইন দেয়ার মতো কাজগুলো বাড়ি বাড়ি গিয়ে করতে পারেন ওরা। এতে ক্ষতি নেই। ক্ষতি তখনই যখন ক’দিনের জন্য হাসপাতালে বা কোনো চিকিৎসকের চেম্বারে ফুটফরমায়েশ খাটার পর নিজেকে ডাক্তার ভাবতে শুরু করেন। সুযোগ পেলে সেটা ভেবে চেম্বার খুলতে কতোক্ষণ! চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা দেন তখন স্বাস্থ্য সচেতনদের দীর্ঘশ্বাস ছাড়া আর কিই বা থাকে? গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে হাসপাতালে লোকবল অপ্রতুলতায় স্বেচ্ছাসেবীদের স্বেচ্ছাচারিতা ও ডিগ্রি ছাড়াই ডাক্তার হওয়ার হিড়িকের বিষয়ে যে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে তা শিউরে ওঠার মতোই।

উন্নয়নশীল থেকে আমরা নিম্ন আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছি। সগর্বে আমাদের প্রধানমন্ত্রী ঘোষণাও দিয়েছেন। দেশে প্রবৃদ্ধির হারও আশাব্যঞ্জক। তারপরও দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোর বেহালদশা কি মানায়? সকল অপ্রতুলতা কাটিয়ে সকলের সুচিকিৎসা পাওয়ার সাংবিধানিক অধিকার বাস্তবায়ন প্রত্যাশী।