মাথাভাঙ্গা মনিটর: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫৮তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল মঙ্গলবার। এই নির্বাচনে মার্কিনীরা ভোট দেবেন তাদের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে। পাশাপাশি মার্কিন পার্লামেন্ট কংগ্রেসের সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদসহ আরো কিছু পদে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে প্রধান দুই দল ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দলের প্রার্থী যথাক্রমে হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন। নিজেদের নিরাপদ অঙ্গরাজ্যগুলো বাদ দিয়ে তারা শেষ মুহূর্তে লড়াই করছেন সুইং স্টেট বা ব্যাটেলগ্রাউন্ড রাজ্য নিয়ে। শেষ দিকের জরিপে হিলারি এখনো ট্রাম্পের চেয়ে পাঁচ পয়েন্ট এগিয়ে আছেন। মূল ব্যাটেলগ্রাউন্ট অঙ্গরাজ্য ফ্লোরিডায় ডেমোক্র্যাট দল এগিয়ে আছে। আইওয়া অঙ্গরাজ্যে এগিয়ে আছেন ট্রাম্প। নেভাদা দখলে প্রচারণা জোরদার করছেন রিপাবলিকানরা। দুই প্রার্থীর প্রচারণার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়া। মার্কিন মিডিয়ায় প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, নারী কেলেঙ্কারি এবং বিভিন্ন বিদ্রুপাত্মক মন্তব্য নিয়ে সমালোচনা সত্ত্বেও হোয়াইট হাউসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প। এদিকে শনিবার নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালে নিরাপত্তার ভয়ে মঞ্চ থেকে নামিয়ে নেওয়া হয় ট্রাম্পকে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, গতকাল রবিবার ওয়াশিংটন পোস্ট ও এবিসি নিউজ একটি যৌথ জরিপ প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, হিলারি (৬৯) এখনো ট্রাম্পের (৭০) চেয়ে পাঁচ পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে আছেন। হিলারিকে ৪৮ শতাংশ এবং ট্রাম্পকে ৪৩ শতাংশ ভোটার সমর্থন করছেন। এবিসি নিউজ নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের নির্ধারক হিসেবে ১৫টি রাজ্য এবং দুটি কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্টকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে। এগুলোর কোনটি ডেমোক্র্যাটমুখী, কোনটি রিপাবলিকানমুখী এবং কোনটিতে বা দুই দলেরই সমান সমর্থক ভোটার রয়েছে। এসব রাজ্যে যে দল জয় পাবে সেই দলের প্রার্থীই এবার হোয়াইট হাউসে যাবেন।
৩৫টি রাজ্য, ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়া এবং একটি কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট এর কোনোটি ডেমোক্র্যাটদের জন্য এবং কোনটি রিপাবলিকানদের জন্য নিরাপদ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। দুই প্রার্থীর জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে অ্যারিজোনা, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, নিউ হ্যাম্পশায়ার, নর্থ ক্যারোলিনা ও মেইন অঙ্গরাজ্যের সেকেন্ড কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট। ডেমোক্র্যাটমুখী রাজ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে কলোরাডো, মিশিগান, নেভাদা, পেনসিলভানিয়া, ভার্জিনিয়া এবং উইসকনসিন। রিপাবলিকানমুখী রাজ্যগুলো হচ্ছে, আলাস্কা, আইওয়া, ওহাইও, উটাহ ও নেব্রাস্কার সেকেন্ড কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট।
সিএনএন জানিয়েছে, দুই প্রার্থী চারটি রাজ্যকে শেষ মুহূর্তে গুরুত্ব দিচ্ছেন। এসব ভোটারদের কাছে টানতে ঘাম ঝরাচ্ছেন তারা। ট্রাম্প নর্থ ক্যারোলিনা, নেভাদা এবং কলোরাডোতে জোরেশোরে প্রচারণা চালাচ্ছেন। নর্থ ক্যারোলিনার নারী ভোটারদের পক্ষে আনতে ট্রাম্পের সঙ্গে স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্পও অংশ নিচ্ছেন। হিলারি গুরুত্ব দিচ্ছেন ফ্লোরিডাকে। শুক্রবার রাতে একটি প্রচারণায় হিলারিকে নিয়ে খারাপ মন্তব্য করেন ট্রাম্প। এ বিষয়ে হিলারি বলেন, আমি ট্রাম্পের কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য পছন্দ করি না। তিনি আমার জীবন সম্পর্কে কি বললেন তা নিয়ে কিছু বলতে চাই না। ফ্লোরিডায় হিলারি ও ট্রাম্পের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে জানা গেছে। তিনি আকস্মিকভাবে ওয়েস্ট মিয়ামিতে থামেন যেখানে কিউবান আমেরিকানরা বাস করেন। শুক্রবার হিলারির সমর্থনে প্রচারণা চালান সংগীত শিল্পী বিয়ন্সে। তিনি বলেন, আপনি কৃষ্ণাঙ্গ, শ্বেতাঙ্গ, মেক্সিকান, এশিয়ান, মুসলিম, শিক্ষিত, গরীব, ধনী কিংবা একজন নারী হোন সেটা কোনো বিষয় না। চিন্তা করে দেখুন, ১০০ বছর আগে এই দেশে নারীদের ভোটাধিকার ছিল না। অথচ আজ একজন নারী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। আমাদের উচিত তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করা। হিলারির প্রচারণা শিবির জানিয়েছে, তিনি সোমবার মিশিগানের গ্রান্ড র্যাপিডস, ফিলাডেলফিয়া, নর্থ ক্যারোলিনার রালেইগে প্রচারণা চালাবেন। এছাড়া আরো কিছু ব্যাটেলগ্রাউন্ট রাজ্যও তিনি সফর করবেন। তবে হিলারির মুখপাত্র জেনিফার পালমিয়েরি বলেছেন, এখনও পরিকল্পনার মধ্যে সীমাবদ্ধ। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আজ সোমবার মিশিগানের অ্যান আরবরে হিলারির সমর্থনে প্রচারণা চালাবেন।
কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার পল রায়ান উইসকনসিনে প্রচারণা চালিয়েছেন এবং রিপাবলিকানদের ভোট দেওয়ার আহবান জানান। রয়টার্স জানিয়েছে, সব সমালোচনাকে পেছনে ফেলে হোয়াইট হাউসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প। তিনি প্রেসিডেন্ট হলে ১৯৫০ সালে প্রেসিডেন্ট আইজেন আওয়ারের পর প্রথমবারের মতো কোনো প্রার্থীর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ছাড়াই হোয়াইট হাউসে পদার্পণের ঘটনা ঘটবে। গত বছরের ১৬ জুন যখন তিনি দল থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা তখনকার অবস্থান এবং বর্তমান অবস্থানের মধ্যে অনেক পার্থক্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ট্রাম্প ১৬ জন প্রার্থীকে পেছনে ফেলে দলীয় প্রার্থী মনোনীত হন।
সর্বশেষ জরিপে আইওয়াতে ট্রাম্প হিলারির চেয়ে ৭ পয়েন্টে এগিয়ে। তিন সপ্তাহ আগের পরিচালিত জরিপে ট্রাম্প তিন পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন। শনিবার প্রকাশিত জরিপে দেখা গেছে, ট্রাম্পকে সমর্থণ করছেন ৪৬ শতাংশ ভোটার। হিলারির প্রতি সমর্থন ৩৯ শতাংশ ভোটারের। লিবারটেরিয়ান গ্যারি জনসনের প্রতি ৬ শতাংশ এবং গ্রিন পার্টির প্রার্থী জিল স্টেইনের প্রতি সমর্থন রয়েছে ১ শতাংশ ভোটারের। বিবিসি জানিয়েছে, শনিবার নেভাদার রেনোতে প্রচারণা সমাবেশের মঞ্চ থেকে তাকে টেনে নামিয়ে আনেন মার্কিন সিক্রেট সার্ভিসের কর্মকর্তারা। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সমাবেশ চলাকালে হঠাত্ করে কেউ একজন ‘বন্দুক, বন্দুক’ বলে চিত্কার করে ওঠেন। সঙ্গে সঙ্গেই ট্রাম্পকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে আনা হয়। পরে অবশ্য অনুসন্ধান চালিয়ে বন্দুক পাওয়া যায়নি। তবে সমাবেশস্থলে থাকা এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। এরপর আবার মঞ্চে উঠে তিনি বক্তব্য রাখেন।