মেহেরপুর অফিস: কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনার কারণে মেহেরপুরের রিদনি কোল্ড ষ্টোরে আলু রেখে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন চাষিরা। আলুর সংরক্ষনের জন্য কোল্ড ষ্টোরে আলু রাখেন তারা। ইতোমধ্যেই কতৃপক্ষের অব্যবস্থপনার কারণে আলুতে বীজ অঙ্কুরিত হয়েছে। যা রোপন করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন চাষিরা। আবার বাজারে বিক্রি করতে গেলেও লোকসানের মুখে পড়বেন তারা। তবে কতৃপক্ষের দাবি আলুতে বীজ অঙ্কুরিত হলেও তা রোপনে কোন সমস্যা হবে না।
মার্চ-এপ্রিল মাস থেকে কোল্ড ষ্টোরে সংরক্ষনের জন্য আলু রাখেন চাষিরা। বীজ ও খাবারের আলু সংরক্ষণের জন্য আলু রাখেন তারা। ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত আলু রাখতে পারবেন। এতে বস্তা প্রতি ৩৩০ টাকা করে গুনতে হবে মালিকদের কাছে। মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের গোপালপুর গ্রামে রিদনি কোল্ড ষ্টোরে এখনও ৫৬ হাজার বস্তা আলু রয়েছে। যার মধ্যে বীজের জন্য রাখা আছে ২০ হাজার ও খাবার আলু ৩৬ হাজার বস্তা। যার বর্তমান মূল্য কোটি টাকার ওপরে। আর ২৫ থেকে ২০ দিন পর থেকে বীজের জন্য ষ্টোর থেকে আলু বের করবেন চাষিরা। কিন্তু ইতোমধ্যে বীজ আলু অঙ্কুরিত হয়েছে। আবার অনেক আলু পচন ধরেছে। বীজ আলুগুলো আরো ১৫ দিন থাকলে সেগুলো আর রোপন করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন তারা। রোপন করলে কাঙ্খিত ফলন থেকে বঞ্চিত হবেন। আবার বাজারে বিক্রি করতে গেলেও ভাল দাম পাওয়া যাবে না। আর খাবার আলু অঙ্কুরিত হবার কারণে ওজন কম যাবে। ফলে মোটা অংকের লেকাসান গুনতে হবে চাষিদের। জেনারেটর ছড়া কোল্ড ষ্টোর চালু করা যায় না। অথচ মেহেরপুরের রিদনি কোল্ড ষ্টোরটি ১০ বছর ধরে চলছে জেনারেটর বিহীন।
মেহেরপুর শহরের ফৌজদারি পাড়ার আলু চাষি ডাবলু জানান, তিনি এবার রিদনি কোল্ড ষ্টোরে বীজের জন্য ৪ হাজার বস্তা অলু রেখেছেন। শুরু থেকেই মালিককে চাপ দিয়ে আসছেন জেনারেটর জন্য। অথচ মালিক পক্ষ তাতে কর্ণপাত করেননি। গেল কয়েক মাস ধরে পল্লী বিদ্যুতে লোড শেডিংয়ের পরিমান বেশি ছিলো। ২৪ ঘন্টার মধ্যে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা বিদ্যুৎ পাওয়া যেত। এখন তিনি দেখছেন তারা অধিকাংশ আলুতে বীজ অঙ্কুরিত হয়েছে। তাপমাত্রার তারতম্য ও বস্তা উল্টে না দেবার কারণে এমনটি ঘটেছে বলে অভিযোগ তার। কারণ প্রতি দুই মাস পর পর আলুর বস্তা উল্টে দিতে হয়। আরো ১৫ থেকে ২০ দিন থাকলে আরোও বেশি অঙ্কুরিত হবে। এ আলু রোপন করলে কাঙ্খিত ফলন থেকে বঞ্চিত হতে হবে। ফলে জমিতে আলু রোপন করতে পারবেন না তিনি। আবার বাজারে বিক্রি করতে গেল বস্তা প্রতি ৩০০ টাকা করে লোকসান গুনতে হবে। এতে তার প্রায় ১২ লক্ষ টাকা লোকসান গুনতে হবে তাকে।
চক্রপাড়ার আলু চাষি ডাবলু জানান, রিদনি কোল্ড ষ্টোরে তার এক হাজার বস্তা আলু রাখা আছে। কিন্তু তার আলুতেও বীজ অঙ্কুরিত হয়েছে। এ আলু বাইরে বিক্রি করতে গেলেও ক্ষতির মুখে পড়বেন তিনি। রিদনি কোল্ড ষ্টোরের মালিক তপন জানান, পল্লী বিদুৎ থেকে ভি.আই.পি লাইন নেয়া আছে। ফলে জেনারেটর থাকার প্রয়োজন নেয়। একাধারে ৭ দিন বিদ্যুত না থাকলে সমস্যা হতে পারে। তবে আলুতে বীজ অঙ্কুরিত হলেও সমস্যা হবে না বলে দাবি তার।
জেনারেটর ছাড়া একটি কোল্ড ষ্টোর কিভাবে চলছে? এতে বিষ্ময় প্রকাশ করেছন জেলা বীজ প্রত্যয়ন অফিসার ডঃ আক্তারুজ্জামান। কারণ আলী বীজ সংরক্ষণ করতে হলে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রার মধ্যে রাখতে হবে। এতে আলু নষ্ট হবার সম্ভাবনা রয়েছে। আর যে সমস্ত বীজ আলু অঙ্কুরিত হয়েছে সেগুলো অল্প তামমাত্রায় রাখতে হবে। তাপমাত্রা বেশি হলে আলুর ভিতরের খাবার শেষ হয়ে যাবে। এতে বীজ দুর্বল হবে। রোপন করলে কাঙ্খিত ফলন থেকে বঞ্চিত হবে চাষিরা।