অনিয়ম দুর্নীতির ঘুর্ণাবর্তে যা অনিবার্য তাই হচ্ছে?
হত্যার শিকার হলেও অনেক ক্ষেত্রে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করা হয় না, আবার সত্যি সত্যি আত্মহত্যা করলেও আপনজনদের হয়রানির শেষ থাকে না। বৈধ যানবাহনের স্বীকৃত চালকের হাতে দুর্ঘটনা ঘটলে অনেক সময় আইন প্রয়োগের তাগিদ দেখে চমকে উঠতে হয়। আবার অবৈধ যানের অবৈধচালকের হাতে একাধিক প্রাণ ঝরলেও আইন প্রয়োগের নজির মেলে না। ন্যূন্যতম অভিযোগ থানার দস্তাবেজে ঠাঁই পায় না। এসব অনিয়মের আড়ালে শুধুই কি উদাসীনতা? নাকি অনিয়ম দুর্নীতির ঘুর্ণাবর্তে যা অনিবার্য তাই হচ্ছে? যাই হোক, চলমান অবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন।
আত্মহত্যা করার আইনগত অধিকার কারো নেই। আত্মহত্যার অপচেষ্টা চালালে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিধিবিধান রয়েছে। যে কোনো অপমৃত্যুর কারণ জানতে ময়নাতদন্ত প্রয়োজন। অবশ্য বিশেষ আবেদনে কিছুটা ছাড় আছে। সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে অনেকেই যে হত্যাকাণ্ডও বেমালুম ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টায় মাতে তা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। কেউ কেউ সেই অপচেষ্টায় যে সফল হয় না, হচ্ছে না তাও নয়। যে কারণেই আত্মহত্যা করুক না কেনো, আইনি জটিলতা এড়াতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বলা হয়, রোগাক্রান্ত বা মস্তিষ্কবিকৃত ছিলো, পেটের জটিলরোগে ভুগছিলো। যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথে পা বাড়িয়েছে। এ যুক্তি পুলিশ অকপটে মেনে নেয়। যে কারণে পারিবারিক সামাজিক নির্যাতনসহ আত্মহত্যায় প্ররোচণার বিষয়টি বেমালুম আড়াল হয়ে যায়। আত্মহত্যা প্রবণতা সমাজে এতোটাই ভয়াবহ রূপ পেয়েছে যে, প্রতিদিনিই হাসপাতালগুলোতে আত্মহত্যার অপচেষ্টা চালানো নারীপুরুষ রোগী ভর্তি করানো হচ্ছে। শিশু কিশোরদের মধ্যেও যে ক্ষতিকর এ প্রবণতা পেয়ে বসেছে তাও অস্বীকার করার জো নেই। আত্মহত্যা প্রবণতা রোধে অবশ্যই আত্মহত্যাকে খাটো করে দেখা উচিত নয়। অনেক সময়ই দেখা যায়, গ্রামের দরিদ্র সরলসোজা একটি পরিবারের একজন সদস্য আত্মহত্যা করেছে। লাশ ময়নাতদন্ত হবে, থানা পুলিশ করতে হবে ভেবে অনেকেই লাশ আড়াল করার চেষ্টা করেন। লাশ লুকিয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে উল্টো বিপাকে পড়তে হয় তাদের। আত্মহত্যার অপচেষ্টা চালানোদের কেউ কেউ আইনের জালে জড়ান, অধিকাংশের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হয় না। ক’জনের বিরুদ্ধেই আর নেয়া যায়? সে হিসেবে আইনটির আধুনিকায়ন করার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বটে।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগ নয়, আইন সবার জন্যই সমানভাবে প্রয়োগ হলে অবশ্যই আইনের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বৃদ্ধি পাবে। এজন্য যেমন দরকার রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পুলিশ এবং পুলিশের পেশাদারিত্ব মনোভাব, তেমনই দরকার সুষ্ঠু জবাবদিহিতা। আর তা যদি নিশ্চিত করা যায় তা হলে অবশ্যই কোনো কোনো দুর্ঘটনা বিশেষ গুরুত্ব পাবে না। সকল দুর্ঘটনা সমান গুরুত্ব পেলে অবৈধ যানের অবৈধ চালকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলায় হবে। আর তা হলে সড়কের নিরাপত্তা বহুলাংশেই বেড়ে যাবে। হ্রাস পাবে দুর্ঘটনা। মূল কথা, আইন আইনের গতিতে চললে সমাজ হবে সুন্দর।