স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর অভিযান চালিয়েছে। অভিযানে বিভিন্ন স্থানে ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হয়।
চুয়াডাঙ্গায় গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ ভ্রাম্যমাণ অভিযান চালিয়ে তিনটি প্রতিষ্ঠান মালিককে ৬৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশন সংলগ্ন গমপট্টিতে অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। সেখানে মেসার্স চুয়াডাঙ্গা ট্রেডার্সে সরকারি চাল নিলামে ক্রয় করে তা খুলে অন্যান্য কোম্পানির বস্তায় প্যাকেটজাত করে উচ্চ মূল্যে বিক্রির প্রমাণ পাওয়া যায়। এ অপরাধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ এর ৪০ এবং ৫০ ধারায় ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় চুয়াডাঙ্গা ট্রেডার্সের মালিককে। এসময় একটি দোকানের বেশকিছু মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য জব্দ করে নষ্ট করা হয়।
পরবর্তীতে অভিযান চালনো হয় আলমডাঙ্গা উপজেলার হাটবোয়ালিয়া বাজারে। সেখানে চালের মূল্য তালিকার সঠিক প্রদর্শন না করা, ক্রয়কৃত চালের রশিদ সংরক্ষণ না করা ও পণ্যের মোড়কীকরণ বিধি লংঘন করার অপরাধে মেসার্স অপর্ণা খাদ্য ভান্ডারের মালিককে ২০ হাজার টাকা এবং মেসার্স ইকলাস ট্রেডার্সের মালিককে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের চুয়াডাঙ্গা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সজল আহম্মেদ। এসময় তিনি বলেন, বর্তমানে করোনা মোকাবেলায় আমরা সবাই সরকারি সমস্ত বিধিনিষেধ মেনে চলবো যাতে সবাই মিলে আমরা এ সংকটকালীন মুহূর্ত কাটিয়ে উঠতে পারি। ব্যবসায়ীদের প্রতি আহবান আপনারা দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে মানবিক হোন। চিন্তা করুন দেশের দিনমজুর বা খেটে খাওয়া মানুষের কথা, যারা দিন আনে দিন খায়। ১০-১৫ দিন তারা তেমন কাজও করতে পারবে না। তাদেরকে ন্যায্যমূল্যে খাওয়ানো আপনাদের ঈমানী দায়িত্ব। সবাই সচেতন হোন অথবা সাবধান হয়ে যান। অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। অভিযানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), চুয়াডাঙ্গার সহকারী পরিচালক লুতফুল কবির কনক ও জেলা পুলিশের একটি দল। এসময় উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের টিম এবং করোনা ভাইরাস সম্পর্কে অনেক কথা বলেন। গণজামায়েত করা যাবে না, একজন থেকে আরেকজনের দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
দর্শনা অফিস জানিয়েছে, দর্শনায় গত মঙ্গলবার দিনভর দর্শনা রেলবাজার, পুরাতন বাজার ও বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করেছেন দামুড়হুদা উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত। পুরাতন বাজারের আব্দুল হাকিম ও স্বপনের মুদি দোকানে মূল্য তালিকা না টাঙানোর অপরাধে জরিমানা আদায় করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক মহিউদ্দিন। এছাড়া বেশ কয়েকটি ওষুধের দোকানে অভিযান চালিয়ে অতিরিক্ত মূল্যে মাস্ক বিক্রি না করার জন্য সতর্ক করেছেন। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান নির্বাহী ম্যাজিস্টেড মহিউদ্দিন।
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কুষ্টিয়ায় প্রায় দুই হাজার একশো মণ মসুরের ডাল মজুত করার দায়ে দুই সহোদয় ব্যবসায়ীকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় কুষ্টিয়া শহরের বড় বাজার এলাকায় এ অভিযান পরিচালনা করেন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সবুজ হাসান।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের নেতৃত্বদানকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সবুজ হাসান জানান, শহরের মধ্যে সবচেয়ে বড় ডাল ব্যবসায়ী হলেন বৈদ্যনাথ সাহা ও তার ভাই স্বপন সাহা। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির সময়ে তারা মসুর ডাল মজুদ করছিলেন। খুরচা বাজারে কৃত্তিম সংকট সৃষ্টি করার লক্ষ্যে তারা এ মজুদ করছিলেন।
বুধবার তাদের গুদামে গিয়ে দেখা যায়, বৈদ্যনাথ সাহার গুদামে ৬০০ মণ ও স্বপন সাহার গুদামে ১ হাজার ৫০০ মণ মসুর ডাল মজুত। অথচ এ ডাল বিভিন্ন মিলে ভাঙিয়ে দোকানে সরবরাহ করার কথা ছিলো। বাজারে ডালের সংকট সৃষ্টি করার দায়ে বৈদ্যনাথ সাহাকে ৫০ হাজার টাকা ও স্বপন সাহাকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।