করোনাভাইরাসে দেশে আরেকজনের মৃত্যু

সীমিত পরিসরে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু
স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাসের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন সীমিত আকারে শুরু হয়েছে। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আর কেউ আক্রান্ত হননি। দেশে আক্রান্তের সংখ্যা এ পর্যন্ত ৩৯ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন সাতজন। এখন পর্যন্ত দেশে ভাইরাসটিতে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এ তথ্য জানিয়েছে। বুধবার এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে ইনস্টিটিউটের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, দুটি জায়গায় আক্রান্ত ব্যক্তির সংক্রমণের উৎস এখন পর্যন্ত চিহ্নিত করা যায়নি। আমরা দুটি ক্ষেত্রেই তদন্ত করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সোর্স অব ইনফেকশন জানা সম্ভব হয়নি। সেদিক থেকে সীমিত আকারে (লিমিটেড স্কেল) কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়েছে- এমনটি বলা যায়। যে এলাকার কথা আমরা বলছি সেখানে ট্রান্সমিশন হয়ে থাকতে পারে। তাই এলাকাটি সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বলার আগে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানতে হবে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে পেশ করতে হবে।
ব্র্রিফিংয়ে জানানো হয়, দেশে বর্তমানে করোনা নিশ্চিত বা সন্দেহভাজন এমন ৪৭ জনকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন আরও ৪৭ জন। এছাড়া সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন আরও দুজন। সব মিলিয়ে করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হয়েছেন সাতজন। বুধবার পর্যন্ত বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এ মৃতের সংখ্যা বেড়ে পাঁচজনে দাঁড়িয়েছে। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আর কেউ আক্রান্ত হননি। আক্রান্তের সংখ্যা এ পর্যন্ত ৩৯ জন। সব মিলিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন সাতজন। এ পর্যন্ত দেশে ৭৯৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৮২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে নতুন করে কারও সংক্রমণের তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে আগে থেকে আক্রান্তদের একজনের বুধবার সকালে মৃত্যু হয়েছে। তার বয়স ৬৪ বছর। তিনি উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন। বিদেশ ফেরত একজনের সংস্পর্শে তিনি ১৮ মার্চ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। এরপর স্থানীয় হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। অবস্থার অবনতি হলে ২১ মার্চ তাকে রাজধানীর কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, আরেকটি ল্যাবরেটরিতে করোনাভাইরাস পরীক্ষা সম্প্রসারিত করা হচ্ছে। আইইডিসিআরের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা শিশু হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরবর্তীতে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ পরীক্ষা সুবিধা সম্প্রসারিত করা হবে। এছাড়া ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট এবং কক্সবাজারে আইইডিসিআরের দুই ল্যাবে এ পরীক্ষা হবে। বিভিন্ন মেডিকেল কলেজেও এ পরীক্ষা সম্প্রসারিত করা হচ্ছে। এরমধ্যে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী ও বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরীক্ষা করা হবে। আইইডিসিআরের হটলাইনের সঙ্গে নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) পাবলিক হেলথ ডিপার্টমেন্টও সাহায্য করবে। আগের নম্বরগুলোর সঙ্গে নতুন দুটি হান্টিং নম্ব^রে ফোন করে তথ্য ও পরামর্শ জানতে পারবেন রোগীরা। নতুন নম্বর দুটি হল- ০১৯৪৪-৩৩৩২২২, ১০৬৫৫।
এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদফতরে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত ‘সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র’ থেকে জানানো হয়েছে, সারা দেশে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের জন্য ২৯৪টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ১৬ হাজার ৯৪১ জনকে সেবা দেয়া যাবে। সারা দেশে আইসোলেশনের জন্য ৪ হাজার ৫৩৯টি শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে। এরমধ্যে ঢাকা শহরে প্রস্তুত ১০৫০ শয্যা। এছাড়া রাজধানীর কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল, রিজেন্ট হাসপাতাল (উত্তরা ও মিরপুর) এবং যাত্রাবাড়ীর সাজেদা ফাউন্ডেশনে ২৯টি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) শয্যা প্রস্তুত আছে। পাশাপাশি আরও ১৬টি আইসিইউ শয্যা প্রস্তুতির কাজ চলছে। আশকোনা হজক্যাম্পে সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় ৩০০ জনের কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টিনে আছে ৪৩ হাজার ১০৬ জন। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছে ১৫৬ জন। এ পর্যন্ত আইসোলেশনে ছিলো ৩১৪ জন, এরমধ্যে ছাড়পত্র পেয়েছে ২৬৭ জন। করোনাভাইরাস সংক্রান্ত সেবা পেতে এ পর্যন্ত কল এসেছে ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৬৮৩টি। এরমধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় এসেছে ৪৯ হাজার ৩৬৩টি। এ পর্যন্ত ২ লাখ ৯১ হাজার পিপিই বিতরণ করা হয়েছে। বর্তমানে মজুদ আছে ৬৬ হাজারটি। রোগটির চিকিৎসাসংক্রান্ত অনলাইন কোর্স সম্পন্ন করেছেন ৩ হাজার ৪৬১ জন।
৩১ ডিসেম্বর চীনের উহানে প্রথম নবেল করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। বর্তমানে বিশ্বের ১৯৫টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে ভাইরাসটি। এখন পর্যন্ত এ প্রাণঘাতী ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় সোয়া চার লাখ এবং প্রায় ১৯ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অপরদিকে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এক লাখ নয় হাজার ১৪৩ জন। বাংলাদেশে ৮ মার্চ প্রথম ভাইরাসটিতে আক্রান্ত রোগী চিহ্নিত হয়।