আইসোলেশনের জন্য ৪ হাজার ৫৩৯টি শয্যা প্রস্তুত
স্টাফ রিপোর্টার: দেশে করোনাভাইরাসে আরও ছয়জন আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে মারা গেছেন একজন। ফলে দেশে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চারজনে। আক্রান্তের সংখ্যা ৩৯। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত অনলাইন লাইভ ব্রিফিংয়ে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পক্ষ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়।
পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৯২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৭১২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। যার মধ্যে ৩৯ জনের শরীরে করোনা পজিটিভ এসেছে। অর্থাৎ গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ছয়জন আক্রান্ত হয়েছেন। এই ছয়জনের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি বেশ কিছুদিন একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সবমিলিয়ে মৃতের সংখ্যা চার। নতুন মৃত ব্যক্তির বয়স ৭০ বছরের বেশি। আক্রান্ত বাকি পাঁচজনের একজন ওমরাহ করে ফিরেছেন। বাকি চারজন আগের রোগীদের সংস্পর্শ থেকে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রসঙ্গত, মৃত্যুর পর পরীক্ষায় প্রমাণ হয়েছে মঙ্গলবার মৃত ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। কাজেই নতুন ছয়জন আক্রান্ত বলা হলেও মূলত একজন আগেই সংক্রমিত হয়েছিলেন। কিন্তু পরীক্ষা না করায় বোঝা যায়নি।
ডা. ফ্লোরা জানান, ২৪ ঘণ্টায় আইইডিসিআরের হটলাইনে ১৭০০ কল এসেছে। সবই করোনাভাইরাস সংক্রান্ত ফোন। এ পর্যন্ত আইসোলেশনে (নিশ্চিত শনাক্ত অথবা সন্দেহভাজন) আছেন এমন রোগীর সংখ্যা ৪০ জন। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন ৪৬ জন।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত ‘সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র’ থেকে জানানো হয়েছে, সারা দেশে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের জন্য ২৯৪টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ১৬ হাজার ৯৪১ জনকে সেবা প্রদান করা যাবে। সারা দেশে আইসোলেশনের জন্য ৪ হাজার ৫৩৯টি শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা শহরেই প্রস্তুত ১০৫০ শয্যা। এছাড়া রাজধানীর কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল, রিজেন্ট হাসপাতাল-উত্তরা, রিজেন্ট হাসপাতাল মিরপুর এবং যাত্রাবাড়ীর সাজেদা ফাউন্ডেশনে ২৯টি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট-আইসিইউ শয্যা প্রস্তুত আছে। পাশাপাশি আরও ১৬টি আইসিইউ শয্যা প্রস্তুতির কাজ চলছে। আশকোনা হজ ক্যাম্পে সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় ৩শ’ জনের কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, দেশের বিমান, সমুদ্র ও স্থলবন্দর এবং ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশন হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার ৩০৮ জন স্ক্রিনিংকৃত যাত্রী দেশে প্রবেশ করেছে। দেশের এসব প্রবেশপথে ২১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত মোট প্রবেশ করেছে ৬ লাখ ৬২ হাজার ২৮৯ জন।
সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরেজ ডিপার্টমেন্ট (সিএমএসডি) থেকে এ পর্যন্ত ২ লাখ ৯৭ হাজার ৮৩০ সেট হ্যান্ড গ্লাভস বিতরণ করা হয়েছে। আরও বিতরণ করা হয়েছে হেক্সিসল ২৫০ এমএল ৩২ হাজার ৭৭০ বোতল, ফেসমাস্ক ৫৬ হাজার ১০০টি, ক্যাপ ৪৮ হাজার ৩৮৫টি, সু-কভার ৪৮ হাজার ৮২০টি, সার্জিক্যাল ফেসমাস্ক ১৯ হাজারটি, কম্বো সার্জিক্যাল প্রটেকশন ড্রেস ৫০০টি, গাউন ১২ হাজার ৬৬০টি, আই প্রটেক্টর সেফটি গগলস ১৭ হাজার ৫৩৫টি। এছাড়া সাজেদা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ১০টি হাসপাতালে দুই হাজার পার্সোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট বিতরণ করা হয়েছে।
এর আগে ৩১ ডিসেম্বর শেষদিকে চীনের উহানে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাস এখন বৈশ্বিক মহামারী। ইতোমধ্যে ভাইরাসটি বিশ্বের ১৮৯টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত এ প্রাণঘাতী ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখ ৭৮ হাজার ৮৪৮ এবং মারা গেছেন ১৬ হাজার ৫১৪ জন। অপরদিকে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে এক লাখ দুই হাজার ৬৯ জন। বাংলাদেশে এ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে গত ৮ মার্চ। এরপর দিন দিন এ ভাইরাসে সংক্রমণের সংখ্যা বেড়েছে। সর্বশেষ হিসাবে দেশে এখন পর্যন্ত ৩৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন, মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের।