সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক দোষী পুলিশদের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ
দামুড়হুদা ব্যুরো: চুয়াডাঙ্গায় পুলিশ হেফাজতে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকে মৃত্যুতে বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী। সকালে তারা জেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে এবং পুলিশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেয়। পরে জাহিদুল ইসলাম হত্যার বিচার দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। দুপুরে জাহিদুলের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। জাহিদুলের মৃত্যু রহস্য উন্মোচন ও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তুলেছে পরিবার। এদিকে, দামুড়হুদা মডেল থানার এসআই রামপ্রসাদ বাদী হয়ে গতকাল হাবিবুর রহমান ও জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা দায়ের করেছেন।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুর গ্রামের মৃত লাল মোহাম্মদের ছেলে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি জাহিদুল ইসলামকে (৪৫) শনিবার বেলা ৫টার দিকে আটক করে থানা পুলিশ। এর ঘণ্টা দুয়েকের মাথায় পুলিশ হেফাজতে মারা যান তিনি। পরিবার অভিযোগ করে পুলিশ তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয় স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে জাহিদুল ইসলাম মারা গেছেন। এ নিয়ে রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে বিক্ষোভ করে জাহিদুল ইসলামের এলাকার লোকজন। তারা সকাল ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল এলাকায় বিক্ষোভ করে এবং পুলিশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সেøাগান দেয়। অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে হাসপাতাল এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন ও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাইমেন হাসান জোয়ার্দ্দার অনিকের নেতৃত্বে আ.লীগ-ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ সদর হাসপাতাল এলাকায় যায় এবং জাহিদুল ইসলামের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে।
ময়নাতদন্ত শেষে দুপুর দেড়টার দিকে জাহিদুলের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নিজ গ্রাম জয়রামপুরে মরহুমের লাশের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। দামুড়হুদা উপজেলা চেয়ারম্যান দর্শনা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলি মুনছুর বাবু, দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল আলম ঝন্টু, সাধারণ সম্পাদক চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক মাহফুজুর রহমান মনজু, জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক হাজি সহিদুল ইসলাম, দামুড়হুদা সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদ সদস্য শফিউল কবির ইউসুফ, হাউলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ খোকন, যুবলীগ নেতা অ্যাড. আবু তালেব, দামুড়হুদা সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হযরত আলী, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাইমেন হাসান জোয়ার্দ্দার অনিক, দামুড়হুদা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আরিফুল ইসলাম মল্লিকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার হাজারো মানুষ জানাজার নামাজে অংশ নেয়। জানাজার নামাজের আগে লাশ সামনে রেখে বক্তব্য রাখা হয়। এ সময় কয়েকজন বক্তা পুলিশে প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন। তারা বলেন, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা জাহিদুল ইসলামকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক দোষী পুলিশদের বিচার দাবী করা হয়। পরে নিজ গ্রামের কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়।
এ দিকে যেকোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে উপজেলার বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামীম কবির জানান, ‘চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মশিউর রহমানকে প্রধান করে চার সদস্য বিশিষ্ট মেডিকেল বোর্ড লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেছেন। ভিসেরা রিপোর্টের জন্য প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হবে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলেই বোঝা যাবে মৃত্যুরহস্য।
এ বিষয়ে কোনো মামলা হয়েছে কি-না জানতে চাইলে দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আবদুল খালেক বলেন, ‘ময়নাতদন্ত শেষে বেলা ১টার দিকে জাহিদুল ইসলামের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মামলার বিষয়ে পরে জানানো হবে।