পুলিশের দাবি জয়রামপুরে মাদকের আখড়া থেকে ফেনসিডিলসহ আটক করা হয় জাহিদুলকে
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম পুলিশ হেফাজতে মারা গেছেন। আটকের দেড় ঘণ্টার মাথায় তার মৃত্যু হয়। তবে পরিবারের দাবি জাহিদুল ইসলামকে পিটিয়ে হত্যা করেছে পুলিশ। জাহিদুল ইসলাম দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুর গ্রামের কলোনিপাড়ার মৃত লাল মোহাম্মদের ছেলে এবং চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি। পুলিশ গতকাল শনিবার বিকেলে তাকে জোরপূর্বক জয়রামপুর বাজার এলাকা থেকে পিকআপ ভ্যানে তুলে নিয়ে যায়। পরে সন্ধ্যায় হাসপাতালে নিলে ডাক্তার মৃত বলে ঘোষণা করেন জাহিদুল ইসলামকে।
জাহিদুল ইসলামের মেজ চাচা জিয়ার মোহাম্মদ ও ছোট ভাই জাহাঙ্গীর আলম অভিন্ন ভাষায় অভিযোগ করে বলেন, ‘জাহিদুল ইসলাম আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এছাড়া তিনি স্থানীয় সীমান্ত যুব উন্নয়ন সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও জয়রামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি। শনিবার বেলা ৫টার দিকে জয়রামপুরে সমিতির ঘর নির্মাণের কাজ দেখাশোনা করছিলেন জাহিদুল ইসলাম। এসময় দামুড়হুদা থানার তিনজন পুলিশ সেখানে গিয়ে জাহিদুল ইসলামকে তুলে নেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু জাহিদুল ইসলাম জানতে চান কেন তাকে নিয়ে যাওয়া হবে, অপরাধ কী? এ নিয়ে পুলিশের সাথে উচ্চ বাক্য বিনিময় হয়। এক পর্যায়ে দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি ফোর্সসহ নিজে পিকআপ নিয়ে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যান।’ এসময় ধস্তাধস্তি করে জাহিদুল ইসলামকে পিকআপে তোলা হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। পুলিশই জাহিদুল ইসলামকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে বলে অভিযোগ করে জাহিদুল ইসলামের পরিবার। একই রকম অভিযোগ করেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম। তিনি বলেন, জাহিদুল ইসলামকে পুলিশ পিটিয়ে হত্যা করেছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই। জয়রামপুর সীমান্ত যুব উন্নয়ন সমবায় সমিতির সভাপতি বাবলু জানান, ‘জাহিদুল মাদকাসক্ত বা মাদকব্যবসায়ী নন। তিনি একজন ভালো মানুষ। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দারের স্নেহভাজন ছিলেন জাহিদুল। দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে আসছেন। কিন্তু কী উদ্দেশে আকস্মিক জাহিদুলের ওপর পুলিশ এমন আচরণ করলো তা বুঝতে পারছি না।’ জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী লিপি খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামী কোনো খারাপ মানুষের সঙ্গে মিশতো না। মাদকের কোল ঘেঁষেও যায়নি কোনোদিন। আমি আমার স্বামীর মৃত্যুর ব্যাপারে তদন্ত দাবি করছি এবং বিচার চাচ্ছি।
দামুড়হুদা থানার ওসি আবদুল খালেক অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, জয়রামপুর মাদকের আখড়া থেকে জাহিদুলকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি চিহ্নিত মাদকব্যবসায়ী। এর আগেও একাধিকবার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। শনিবার বিকেলে গ্রেফতারের পর তাকে পিকআপে নেয়ার পর তিনি বুকে ব্যথা অনুভব করেন। দ্রুত সদর হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ডা. সোহরাব হোসেন বলেন, ‘জাহিদুল ইসলাম স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।’ চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু তারেক জানান, জাহিদুল ইসলামকে দুই বোতল ফেনসিডিলসহ গ্রেফতার করা হয়েছিলো। পরে তিনি স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।’
এদিকে গতরাতে জাহিদুল ইসলামের লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রণয়ন করেন জেলা প্রশাসনের দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। রাত সাড়ে ১০টার দিকে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট করেন নেজারত ডেপুটি কালেক্টরেট (এনডিসি) সিব্বির আহমেদ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সিবানী সরকার। আজ রোববার লাশের ময়নাতদন্ত হবে।