মাজেদুল হক মানিক :
মেহেরপুর জেলায় এবারো গম ক্ষেতে ব্লাস্ট আক্রমণ দেখা দিয়েছে। মাঠের পর মাঠ ব্লাস্ট আক্রান্ত হয়ে গম ক্ষেতে বিনষ্ট হচ্ছে। তবে এর মাঝে আশার আলো নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বারি গম ৩৩। ব্লাস্ট প্রতিরোধী এ জাতে নেই কোন ব্লাস্ট কিংবা অন্য কোন রোগ বালাই। ফলে চাষীদের মাঝে গম চাষ নিয়ে এক নতুন আশার আলো সৃষ্টি হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসূমে মেহেরপর জেলার তিনটি উপজেলায় ১১ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে গম আবাদ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ হাজার ৬০০ হেক্টর বেশি। আর গেল বছরের চেয়ে এবার আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৪৩০ হেক্টর বেশি। এর মধ্যে বারি গম ৩৩ ক্ষেতগুলো ব্লাস্ট মুক্ত থাকলেও অন্যান্য জাতের বেশিরভাগ ক্ষেতে ব্লাস্ট আক্রান্ত হয়েছে। বারি গম ৩৩ এর পাশাপাশি বারি গম ৩০ ক্ষেতেও ব্লাস্ট অনেকটাই কম আক্রান্ত বলে জানায় কৃষি বিভাগ।
২০১৭ সালে মেহেরপুর জেলাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৮টি জেলায় বাংলাদেশে প্রথম হুইট ব্লাস্ট আক্রমণ দেখা যায়। এতে মাঠের পর মাঠের গমের শীষ নষ্ট হয়ে যায। পরের বছর থেকে গম আবাদে ভাটা পড়ে। তবে গেল বছর থেকে ব্লাস্ট প্রতিরোধী ও রোগ বালাই সহিষ্ণু গমের জাত আবাদের মধ্য দিয়ে চাষীরা আবারো গম আবাদে আগ্রহী হয়েছেন। চলতি মৌসূমে মেহেরপুরসহ আশেপাশের জেলাগুলোতে ব্যাপকভাবে গম আবাদ করেন চাষীরা। তবে ব্লাস্ট আক্রমণের ফলে গমের শীষ শুকিয়ে চিটা ধরেছে। এতে মারাত্মক ফলন বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মেহেরপুর অঞ্চলে স্বদেশ সীড নামের একটি প্রতিষ্ঠান ব্লাস্ট প্রতিরোধী জাত বারি গম ৩৩ বীজ সরবরাহ করে চাষীদের মাঝে। এ জাতের গম ব্লাস্ট আক্রান্ত না হওয়ায় চাষীরা স্বস্তিতে রয়েছেন।
স্বদেশ সীড পরিচালক (উৎপাদন) জিনারুল ইসলাম দিপু বলেন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) ২০১৭ সালে দেশের একমাত্র ব্লাস্ট প্রতিরোধী জাত হিসেবে বারি গম ৩৩ জাতটি অবমুক্ত করে। ২০১৮ সালে দিনাজপুর গম গবেষণা কেন্দ্র থেকে আমরা বারি গম ৩৩ এর ব্রিডার বীজ সংগ্রহ করে চাষের মাধ্যমে বীজ উৎপাদন করি। ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে ওই বীজ বিভিন্ন কৃষি অফিস ও চাষীদের কাছে বিক্রি করেছি। ব্লাস্ট মুক্ত থাকায় আগামি বছর বীজ সরবরহের জন্য আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছি।
সদর উপজেলা আলমপুর গ্রামের আমজাদ হোসেন বলেন, এবার আমি চার বিঘা জমিতে বারি গম ৩৩ বীজ উৎপাদন করছি। আমার পাশের ক্ষেত ব্লাস্ট আক্রান্ত হলেও আমার ক্ষেতে কোন ব্লাস্ট নেই।
মেহেরপুর জেলা বীজ প্রত্যয়ন অফিসার মামুনুর রশিদ জেলার বিভিন্ন মাঠে বীজ উৎপাদন প্লট ও চাষীদের ক্ষেত পরিদর্শন করেছেন।
গমের রোগ প্রসঙ্গে মামুনুর রশিদ বলেন, প্রতিকুল আবহাওয়ার কারণে এবার গমে ব্যাপকভাবে রোগাক্রান্ত হয়েছে। হেড ব্লাইড, ব্লাস্ট ও রাস্ট লেগে গমের ক্ষেত বিনষ্ট হচ্ছে। শুধুমাত্রা বারি গম ৩৩ এর কোন রোগ বালাই নেই। আর বারি গম ৩০ এর সামান্য রোগ আছে। এ দু’টি জাত আগামি বছরগুলোতে চাষ বৃদ্ধি করা গেলে ব্লাস্ট প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন এলাকার গম ক্ষেত পরিদর্শন করে বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. রেজাউল কবির বলেন, মরিচা ও হেড ব্লাইড রোগ চিহ্নিত করা হয়েছে। কয়েকটি ক্ষেতে হুইট ব্লাস্টও পাওয়া গেছে। তবে বারি গম ৩৩ ব্লাস্ট প্রতিরোধী ও বারি গম ৩০ রোগ বালাই সহনশীল হিসেবে পরিলক্ষিত হয়েছে।