মা যাদের রান্না করে খাওয়াতেন তারাও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী: প্রধানমন্ত্রী

 

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পাকিস্তানিরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে না পারলেও এদেশীয় দালালরা তাকে হত্যা করে হারের প্রতিশোধ নিয়েছে। আমাদের বাড়িতে যারা নিয়মিত আসা-যাওয়া করতো, আমার মা যাদের রান্না করে খাওয়াতেন-তারাও বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ে জড়িত। গতকাল শনিবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানের শাসকরা বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসিতে হত্যার চেষ্টা করেছিলো, কিন্তু পারেনি। কিন্তু স্বাধীনতার পর পরাজিত শত্রুরা এদেশীয় দালালদের নিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যা করে একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়েছিলো। খুনিদের মধ্যে অনেকেই ছিলো যারা আমাদের বাড়িতে নিয়মিত আসা-যাওয়া করতো, আমার মা যাদের রান্না করে খাওয়াতেন-তারাও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত। খুনি মুশতাক-জিয়ারা মদদ না দিলে এ ধরণের ঘটনা ঘটতো না। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তার নাম পর্যন্ত মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু সত্য ইতিহাস কখনো মুছে ফেলা যায় না, মিথ্যা দিয়ে কখনো সত্যকে ঢেকে রাখা যায় না- এটাও আজ প্রমাণিত হয়েছে।

তিনি বলেন, ১১ মার্চ ১৯৪৮ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সংগ্রাম পরিষদ ধর্মঘট ডাকে। এদিন সচিবালয়ের সামনে থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অনেক ছাত্রনেতা গ্রেফতার হন। ১৫ মার্চ তারা মুক্তি পান। ১৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় অনুষ্ঠিত জনসভায় সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু। মাতৃভাষার দাবিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। বঙ্গবন্ধুকে ১৯৪৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ফরিদপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৪৯ সালের ২১ জানুয়ারি তিনি মুক্তি পান। ১৯ এপ্রিল আবার তাকে গ্রেফতার করা হয়। জুলাই মাসের শেষে তিনি মুক্তি পান। ১৪ অক্টোবর ঢাকায় বঙ্গবন্ধুকে আবারও গ্রেফতার করা হয়। কারাগার থেকেই তার দিকনির্দেশনায় আন্দোলন বেগবান হয়। সেই দুর্বার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি শাসকগোষ্ঠীর জারি করা ১৪৪ ধারা ভাঙতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছিলেন ভাষা শহীদরা।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে অতীতে অনেকে অনেক কথা বলেছেন। এখন আর কোনো কথা বলার সুযোগ নেই। কারণ, আমরা খাদ্য উৎপাদনে উদ্ধৃত্ত, ঘূর্ণিঝড়, বন্যাসহ সব দুর্যোগ আমরা মোকাবেলা করতে শিখেছি। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে মর্যাদাশীল দেশ। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।

দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের ওপর একটা দায়িত্ব সেটা হলো-কোন লোকটা গৃহহারা আছে তা খুঁজে বের করা। একটি লোকও এ দেশে গৃহহীন থাকবে না। গৃহহীনদের তালিকা তৈরি করেন। প্রত্যেককে ঘর করে দেয়া হবে।

সভায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ডেনভারের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও লেখক-গবেষক হায়দার আলী খান, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি প্রমুখ।

আলোচনাসভা যৌথভাবে পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ ও উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।