স্টাফ রিপোর্টার: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম ৩৮ জেলায় স্থগিত করা হয়েছে। উচ্চ আদালতে মামলাজনিত কারণে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) খান মো. নুরুল আমিন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল বৃহস্পতিবার এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। এদিকে ১৯ জেলায় ৭৫ নারী প্রার্থীর জন্য সহকারী শিক্ষকের পদ সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে আদালত জানতে চেয়েছেন প্রকাশিত চূড়ান্ত ফলে ৬০ শতাংশ নারী কোটা পূরণ করে রিটকারী নারীদের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ না দেয়া কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না।
ডিপিই পরিচালকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাজস্ব খাতভুক্ত সহকারী শিক্ষক নিয়োগ ২০১৮-এর ফলাফলে (পরীক্ষা ও ফল প্রকাশ ২০১৯) ৬০ শতাংশ মহিলা কোটা সংরক্ষণ হয়নি উল্লেখ করে হাইকোর্টে ৩৮ জেলার ফলাফলের ব্যাপারে রিট পিটিশন মামলা করা হয়েছে। এর আদেশে আদালত ৬ মাসের জন্য নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত করেছেন। ফলে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ১৬ ফেব্রুয়ারি এসব জেলায় যোগদানে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, মামলাজনিত কারণে এসব জেলায় শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের যোগদান, কর্মশালা ও পদায়ন নির্দেশনা অনিবার্য কারণবশত স্থগিত করা হলো। আদালতে বিষয়টি সুরাহা হলে পরবর্তী সময়ে তাদের যোগদান-পদায়নের সময় জানিয়ে দেয়া হবে। এ নির্দেশনা মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
জেলাগুলো হচ্ছে: বগুড়া, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, নড়াইল, খুলনা, কুষ্টিয়া, বাগেরহাট, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, ঢাকা, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, নরসিংদী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, কক্সবাজার, বরিশাল, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, ঝালকাঠি, সুনামগঞ্জ, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা।
নিয়োগ পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে নির্বাচিতদের ২০ থেকে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে ডাকযোগে নিয়োগপত্র পাঠানো হয়। ১৬ ফেব্রুয়ারি যোগদান ও ১৭ থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি তাদের কর্মশালা অনুষ্ঠিত হওয়ার সূচি নির্ধারিত ছিলো।
৭৫ পদ সংরক্ষণের নির্দেশ: ১৯ জেলায় ৭৫ প্রার্থীর করা রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্টের বিচারপতি এএফএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ বুধবার আদেশ দেন। আদালত জানতে চান, নিয়োগ পরীক্ষার প্রকাশিত চূড়ান্ত ফলে ৬০ শতাংশ নারী কোটা পূরণ করে রিটকারী নারীদের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ না দেয়া কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না।
একই সঙ্গে কোটা পূরণে রিটকারী প্রার্থীদের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের নির্দেশনা কেন দেয়া হবে না। চার সপ্তাহের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আদালতে রিটকারীদের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট মো. মনিরুল ইসলাম রাহুল ও সোহরাওয়ার্দী সাদ্দাম। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া বলেন, সরকারি শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা-২০১৩-এর ৭ বিধিতে বলা হয়েছে, সরাসরি নিয়োগযোগ্য পদগুলোর ৬০ শতাংশ নারী প্রার্থীর দ্বারা পূরণ করতে হবে কিন্তু চূড়ান্ত ফলাফলে ৬১ জেলায় ১৮ হাজার ১৪৭ জন চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হন। ফলাফলে নারী প্রার্থীদের তুলনায় পুরুষ প্রার্থীদের বেশি নির্বাচিত করা হয়। যা বিধি লঙ্ঘন করে পূর্ণাঙ্গ ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। ৬০ শতাংশ নারী প্রার্থী হিসেবে লিখিত পরীক্ষায় নির্বাচিত হওয়ার হকদার। যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯ জেলার ৭৫ প্রার্থী ওই রিট করেন। এদের মধ্যে রয়েছেন কলি তালুকদার, সুজি তালুকদার, জাকিয়া আকতার, ফারজানা, শাফলা রানী ঘোষ, তুবা রান, মানসুরা, মিনাক্ষী রানী দাস, আবেদা সুলতানা, খেয়া মনি তালুকদার, শেলী সরকার ও লাকি সরকার।