মাথাভাঙ্গা মনিটর: নভেল করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না প্রাণঘাতী এই ভাইরাসটি। এটির উৎপত্তিস্থল চীনে এক দিনেই কেড়ে নিয়েছে শত মানুষের প্রাণ; সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেছে। দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন জানিয়েছে, সোমবার একদিনেই এ ভাইরাসে মারা গেছে ১০৮ জন; তাদের মধ্যে ১০৩ জনের মৃত্যু হয়েছে হুবেই প্রদেশে। সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১৮ জনে। প্রতিনিয়ত মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় বিশ্বজুড়ে বাড়ছে উদ্বেগ।
তবে এ ভাইরাসে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কমে এসেছে। সোমবার নতুন দুই হাজার ৪৭৮ জনের মধ্যে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় চীনে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ৬৩৮ জনে। চীনের বাইরে অন্তত ২৫টি দেশে আড়াই শতাধিক মানুষের দেহে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। সব মিলিয়ে আক্রান্ত ৪৩ হাজার ৯০ জন। আক্রান্তের সংখ্যার দিক দিয়ে এবারের করোনাভাইরাস ফেব্রুয়ারির শুরুতেই ছাড়িয়ে যায় ২০০২-০৩ সালের সার্স প্রাদুর্ভাবকে। গত শনিবার ছাড়িয়ে গেছে মৃত্যুর সংখ্যার দিক দিয়েও।
বিভিন্ন দেশে মানুষ থেকে মানুষে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার খবর আসতে থাকায় গত ৩০ জানুয়ারি এ ভাইরাস নিয়ে বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা জারি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে প্রাথমিক উপসর্গ হয় ফ্লু বা নিউমোনিয়ার মতো। কিন্তু বয়স্ক এবং অন্য অসুস্থতা থাকা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এ সংক্রামক রোগ হয়ে উঠতে পারে প্রাণঘাতী। এর কোনো প্রতিষেধকও জানা নেই।
আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে যেসব উপসর্গ দেখা দেয়, সাধারণভাবে সেগুলো সারানোর জন্যই চিকিৎসা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। অবস্থা গুরুতর হলে নেয়া হচ্ছে বিশেষ ব্যবস্থা। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত তিন হাজার ৯৯৬ জন ভালো হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। আক্রান্তদের দেখতে হাসপাতালে চীনা প্রেসিডেন্ট জিনপিং
এদিকে, এই প্রথম দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং মঙ্গলবার নিজে মাস্ক পরে, হাত গ্লাভস মুড়ে হুবেই প্রদেশের হাসপাতালগুলো পরিদর্শন করেছেন। দেখা করেছেন করোনা আক্রান্তদের সঙ্গে, কথা বলেছেন স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে। চেষ্টা করেছেন সামগ্রিক পরিস্থিতি বুঝে নেয়ার। সেইসঙ্গে তাদের বুঝিয়ে দিলেন, আরও সচেতন হয়ে, আরও নিশ্চিত হয়ে তবেই পদক্ষেপ নিতে হবে।
পরে এক ভিডিও কনফারেন্সে তিনি বলেন, চীন করোনা ভাইরাসের মতো ‘দৈত্য’র বিরুদ্ধে কঠিন লড়াই করছে। শুধুমাত্র সংস্পর্শেই এই রোগের সংক্রমণ এতটাই ছড়িয়ে পড়ছে, যা সার্সের চেয়েও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে।
হুবেইয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অপসারণ: করোনাভাইরাসে মৃত্যু হাজার ছাড়ানোর পর প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায়ে বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে তাদের পদ থেকে সরিয়েছে চীন। যারা চাকরি হারিয়েছেন, তাদের মধ্যে প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্র বলে বিবেচিত হুবেই প্রদেশের স্বাস্থ্য কমিশনের প্রধান ও এই কমিশনে নিয়োজিত কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদকও রয়েছেন। এ পর্যন্ত পদচ্যুতদের মধ্যে এরাই সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।
অনুদান পরিচালনায় অবহেলার দায়ে হুবেই রেডক্রসের উপ-পরিচালককেও অপসারণ করা হয়েছে। প্রাদুর্ভাব চলাকালীন হুবেই ও অন্যান্য প্রদেশের কয়েকশ ব্যক্তিকে দায়িত্ব থেকে সরানো হয়েছে, অনেককে সতর্ক করা হয়েছে এবং কারও কারও বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।
তবে নির্দিষ্ট দায়িত্ব থেকে সরানো হলেও সেই ব্যক্তিকে পুরোপুরি ছাঁটাই করা হয়েছে, এমন নাও হতে পারে, তাদের পদাবনতিও হতে পারে। এসব পদক্ষেপকে তিরস্কার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে পদ হারানোর পাশাপাশি কর্মকর্তারা ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির শাস্তির মুখেও পড়তে পারেন। সম্প্রতি করোনাভাইরাস সংকট সামাল দেয়া নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে চীনের কর্তৃপক্ষগুলো। যে চিকিৎসক শুরুর দিকে এই প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন, কর্তৃপক্ষ সেটি আমলে না নিয়ে তাকে দমন করায় চীনজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
চীনের তিন শহরে জ্বর-কাশির ওষুধ বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা: অন্যদিকে চীনের অন্তত তিনটি শহরে জ্বর ও কাশির ওষুধ বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে যেসব ওষুধে কোডিন, আইবুপ্রোফেন এবং অ্যাসপিরিনের উপাদান রয়েছে, তাতে কড়াকড়ি আরও বেশি। অসুস্থরা যাতে বাড়িতে ওষুধ না সেবন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়, তাই এমন পদক্ষেপ। কেননা হাসপাতালে ভর্তি হলে তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কিনা, তা পরীক্ষা করা যাবে। প্রাণঘাতী এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রধান দুই উপসর্গ জ্বর ও কাশি। আক্রান্ত হওয়ার আরও দুটি লক্ষণ হলো- নিউমোনিয়া হওয়া কিংবা শ্বাসকষ্টে ভোগা।