পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযানে আমাদের অংশগ্রহণ করতে হবে
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেছেন, যে ওয়ার্ড পরিষ্কার আগে করবে; তাদের পুরস্কৃত করা হবে। এ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযানে আমাদের অংশগ্রহণ করতে হবে। আমাদের মূল্যায়ন কমিটি থাকবে। তারা উপজেলা সমন্বয় করবে। পুরস্কার যেমন থাকছে, সেহেতু অপরিষ্কার থাকলে শাস্তিও থাকবে। এ কাজে সমর্থন না করলে মোবাইলকোর্ট করবো। গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে চুয়াডাঙ্গায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষ উপলক্ষে ‘পরিচ্ছন্ন গ্রাম পরিচ্ছন্ন শহর’ বাস্তবায়নের নিমিত্তে প্রস্তÍতিমূলক সভায় জেলা প্রশাসক এসব কথা বলেছেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রস্তÍতিমূলক সভায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) কানাইলাল সরকার ও পৌর মেয়র ওবায়দুর চৌধুরী বক্তব্য রাখেন। এ সময় দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলি মুনছুর বাবু, জীবননগর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপপরিচালক দীপক কুমার সাহা, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান, জেলা তথ্য অফিসার আমিনুল ইসলাম , জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গোলাম মোস্তফা, জেলা খাদ্য কর্মকর্তা রেজাউল ইসলাম, ইউপি চেয়ারম্যান আকতার হোসেন, শরীফুল আলম মিল্টন, জাকারিয়া আলম ও আবুল কালাম আজাদ বক্তব্য রাখেন। সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ ইয়াহ ইয়া খান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মনিরা পারভীন, আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আইয়ুব হোসেন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিকুর রহমান, আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিটন আলী, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিংকন মুনিম ও জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলামসহ সকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘বঙ্গন্ধুর জন্মদিনে চুয়াডাঙ্গা জেলাকে পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে ষোষণা করার লক্ষে ১ বছর ব্যাপী যে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে; যার যার অবস্থান থেকে সার্বিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এ কর্মসূচিতে মানুষকে সম্পৃক্ত করবেন তাহলে কর্মসূচি সফল হবে। মানুষ একদিনে সচেতন হয়নি। তাদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে পারি।’
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, রাস্তায় ১ ছটাক মাটিও পড়তে পারবে না। গণউৎপাত করতে পারবে না। নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব পালন করি। এ রকম ভয় পেয়ে থাকলে সমাজ থেকে অনিয়ম দূর হবে না। প্রাথমিক পর্যায়ে বিশাল দায়িত্ব নিতে হবে। সাংবাদিকদের দায়িত্ব নিতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব নিতে হবে। তথ্য অফিসার সমন্বয়ের ভূমিকা পালন করতে পারবেন। এ কাজে মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। শুরুটা হোক আমার থেকে। নিজের বাড়ি থেকে শুরু করেন। কোথায় থেকে প্রকল্প নেবো সেটা নয়। সচেতনতা আগে। টাইম মেইনটেন্ট করে শহর থেকে গাড়ি করে ময়লা নিয়ে যাবেন। এখানেও এ অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ইজারাদারদের দায়িত্ব নিতে হবে। তাদের বাধ্য করেন। প্রচার-প্রচারণা করেন। তাকে দিয়েই করতে হবে। ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে করতে পারবেন। চৌকিদার-দফাদারদের কাজে লাগাতে পারেন। এ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযানে আমাদের অংশগ্রহণ করতে হবে। জাপান-ইউরোপ একদিনে উন্নত হয়নি। আজ থেকে ১০ বছর আগে বাংলাদেশ এমন ছিলো না। ই-ফাইলিংয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা ফার্স্ট হয়েছে। মধ্যম আয়ের দেশ হয়েছে। জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত ও সুখী সমৃদ্ধ দেশ গড়ার যে স্বপ্ন দেখতেন আজ তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে তা এগিয়ে চলেছে। ২০৪১ সালে সেইদিনে আমরা অনেকে সামিল হতে পারবো। এই কর্মসূচির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করবো। আমরা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন গ্রাম চাই।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ‘পরিচ্ছন্ন গ্রাম পরিচ্ছন্ন শহর’ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম বাস্তবায়নের বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে (১৭ মার্চ, ২০২০) চুয়াডাঙ্গা জেলাকে পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে ঘোষণা করার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১ বছরব্যাপী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
কর্মপরিকল্পনা মধ্যে রয়েছে, আগামী ৯ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বড়বাজার ও বড় গ্রোথসেন্টারসমূহে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করা। ১৭ থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদে সচেতনাতামূলক সভা করা। ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ২ মার্চ ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে রাস্তা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা। ৩ থেকে ৯ মার্চ ছোট গ্রোথ সেন্টার, রাস্তার মোড়, অল্প লোক সমাগম হয় এমনস্থানে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করা। ৯ মার্চ থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত ওয়ার্ডের প্রতিটি গ্রাম বা মহল্লায় কমিটির ১জন করে সদস্যের নেতৃত্ব ১টি স্বেচ্ছাসেবী দল বাড়ি গিয়ে সচেতনতা তৈরি করবে। পরিষদ সদস্য প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের অগ্রগতি নির্ধারিত দিনে পর্যবেক্ষণ করবেন। ১২ থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি সকল ওয়ার্ড কমিটি এবং সুধীজনদের নিয়ে ইউনিয়নে একটি অবহিতকরণ সভার আয়োজন। ১ মার্চ উপজেলা থেকে সরবরাহকৃত ডাস্টবিন প্রতিটি গ্রোথ সেন্টারে বিতরণের ব্যবস্থাকরণ। ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৬ মার্চ পর্যন্ত ইউনিয়নে কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রতিটি এনজিও এর সাথে সমন্বয় সাধন করা। ১২ মার্চ ওয়ার্ড পর্যায়ের প্রতিটি কার্যক্রমে ইউনিয়ন কমিটির একজন সদস্য উপস্থিত থাকবেন। প্রতিটি কার্যক্রমের ছবিসহ একটি রিপোর্ট তৈরি করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে প্রেরণ করবেন। অনুলিপি জেলা প্রশাসক বরাবর প্রেরণ করবেন। নির্ধারিত দিনে চেয়ারম্যান উচ্চ বিদ্যালয়সমূহের সেন্টারসমূহ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের সাথে সক্রিয় অংশগ্রহণ করবেন। উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউনিয়নের কার্যক্রমসমূহ তদারকি করবেন। এভাবে বছরব্যাপী জেলা পর্যায়ে, পৌরসভা পর্যায়ে ও সরকারি দফতর পর্যায়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান কার্যক্রম চলমান থাকবে।