সুখ সাগর পেঁয়াজে হাসছে মুজিবনগরের কৃষকেরা

শেখ শফি/মহাসিন আলী: এ বছর সুখ সাগর পেঁয়াজের ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায় মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার কৃষকের চোখে-মুখে হাসি ফুটেছে। বিগত ৪-৫ বছরের ক্ষতি কাটিয়ে এ বছর তারা লাভের মুখ দেখছে। তবে ভয়ে আছে কখন না সরকার এলসি’র মাধ্যমে বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে তাদের সে আশার মুখে ছাই ঢেলে দেয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বলছেন, ভরা মরসুমে যাতে দেশে পেঁয়াজের আমদানি না হয়, সে লক্ষ্যে কাজ করছেন তারা।
মুজিবনগর উপজেলার সোনাপুর কলোনিপাড়ার আলামিন হোসেন এ বছর ২ বিঘা জমিতে সুখ সাগর পেঁয়াজের চাষ করেছেন। গতকাল শনিবার বিকেলে সরেজমিনে তার বাড়ির পাশের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, তার লাগানো ওই পেঁয়াজের জমি পরিচর্যায় ব্যস্ত তিনি। তার চোখে-মুখে আনন্দের ছাপ। তিনি জানান- যেখানে দেশি জাতের পেঁয়াজের ফলন বিঘা প্রতি ৫০ থেকে ৬০ মণ, সেখানে ভারতীয় জাত সুখ সাগর পেঁয়াজের ফলন ৮০ থেকে ১০০ মণ। তিনি বলেন, এ মুহূর্তে প্রতি মণ সুখ সাগর পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৫শ’ থেকে ২৭শ’ টাকা মণ দরে। তিনি আরও বলেন, চুরি হওয়ার ভয়ে রাত জেগে মুজিবনগর উপজেলা বিভিন্ন গ্রামের মাঠে লাগানো মূল্যবান এ সুখ সাগর পেঁয়াজ পাহারা দিচ্ছেন ক্ষেত মালিক কিংবা তার ভাড়া করা লোকজন। সোনাপুর গ্রামের উত্তরপাড়ার মিনারুল ইসলাম জানান, সুখ সাগর পেঁয়াজ চাষ করতে প্রতি বিঘা জমির জন্য চাষ, সেচ, সার ও বীজ ও অন্যান্য খরচ মাত্র ৩০ হাজার টাকা। সে অনুযায়ী গেল ৪ বছর এলাকার কৃষক দাম পায়নি। এলসিতে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে তাদের লাভের পরিবর্তে ব্যাপক ক্ষতি গুনতে হয়েছে। তাই তারা রাস্তায় এ পেঁয়াজ ঢেলে প্রতিবাদও করেছিলো। এবার বাজারে এ পেঁয়াজের দাম বেশি থাকায় তারা লাভের আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছেন।
মুজিবনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামের কৃষক জাহারুল বিশ্বাস ব্যস্ত জমিতে পেঁয়াজের পরিচর্যায়। তবে চোঁখে মুখে কিছুটা হতাশার ছাপ। কেননা গেল বছরে চার বিঘা জমিতে ভারতীয় সুখসাগর জাতের পেঁয়াজ চাষ করে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়েছিলেন তিনি। এবারও তিন বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছেন। লাভ নিশ্চিত জেনেও তাকে শঙ্কা ভর করেছে এ ভেবে যে, মুজিবনগর এলাকায় সংরক্ষণাগার না থাকা এবং যদি ভরা মরসুমে দেশের বাইরে থেকে পেঁয়াজের আমদানি হয়, তবে?। তার মতে একই অবস্থা মুজিবনগর উপজেলার শ শ কৃষকের।
সোনাপুর গ্রামের পেঁয়াজ চাষি ফিরোজ আহমেদ মাস্টার মনে করেন, এভাবে দাম পেলে মুজিবনগরের চাষিরা আবারও আগের মতো এ পেঁয়াজ চাষ শুরু করবে। তিনি মনে করেন সুখ সাগর পেঁয়াজ চাষ সারাদেশে ছড়িয়ে দিলে দেশে পেঁয়াজের আমদানি নির্ভরতা অনেকখানী কমে আসবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, মেহেরপুরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মোশারফ হোসেন বলেন, এ বছর মুজিবনগর উপজেলায় ১ হাজার একরেরও বেশি সিসিজমিতে সুখ সাগর জাতের পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। এ জাতের পেঁয়াজে পানির পরিমাণ বেশি থাকায় লম্বা সময় ধরে সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে গবেষণা চলছে। আর ভরা মরসুমে যাতে দেশের বাইরে থেকে পেঁয়াজ আমদানি না করা হয় সেই লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে কাজ করছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, খামারবাড়ির মহাপরিচালক, ড. মো. আব্দুল মুঈদ জানান, এ মুহূর্তে সারাদেশে ছড়ানো যাচ্ছে না এ জাতের পেঁয়াজের চাষ। তিনি আরও বলেন, দেশে এ জাতের পেঁয়াজের চাষ ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা।