নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম উল্লম্ফন

কমতে থাকা পেঁয়াজের দামের উল্লম্ফন ঘটেছে আবারও। একদিনের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে অন্তত ৪০ টাকা। পেঁয়াজের দামবৃদ্ধির অজুহাত হিসেবে এবার সামনে আনা হয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে। নির্বাচনের একদিন আগে থেকে ঢাকামুখী পরিবহন বন্ধ রাখার ঘোষণা রয়েছে; আর এটাকেই সুযোগ হিসেবে নিয়ে সরবরাহ কমে যাওয়ার অজুহাত তৈরি করে এ নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা। গত বৃহস্পতিবার ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৩০-১৪০ টাকা। ঠুনকো একটি অজুহাত দাঁড় করিয়ে পেঁয়াজ নিয়ে আরও এক দফা মুনাফা লুটার এ তৎপরতা কেবল অযৌক্তিক নয়, ন্যক্কারজনকও।
উল্লেখ্য, গত বছর সেপ্টেম্বরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ৩০০ টাকায় উঠেছিলো। পরে আমদানি বৃদ্ধি এবং দেশি পেঁয়াজ বাজারে ওঠায় দাম কমে আসছিলো। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীরা ঢাকা সিটি নির্বাচনকে পুঁজি করে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন, যা অগ্রহণযোগ্য। অতীতেও দেখা গেছে, রমজানে চাহিদা বৃদ্ধি অথবা অন্য কোনো অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এবার পেঁয়াজের পাশাপাশি ভোজ্যতেল, ডাল, আদা, শুকনা মরিচ, এলাচ, দারুচিনি ইত্যাদির দামও বাড়ানো হয়েছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। ব্যবসায় মুনাফা অর্জন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে মুনাফা অর্জনের নামে নীতিজ্ঞানহীন কর্মকা- মোটেই সমর্থনযোগ্য নয়। পেঁয়াজসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির ঘটনায় সাধারণ মানুষের উদ্বিগ্ন হওয়াটাই স্বাভাবিক। বাজারে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ক্রয়ক্ষমতা না বাড়ায় সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে, নি¤œআয়ের শ্রমজীবীরা অসহায়বোধ করেন। অথচ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন উচ্চবাচ্য হয় না বললেই চলে। বাজার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সরকারের শক্ত কোনো ভূমিকা নেই- এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সাধারণত দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে কথাবার্তা উঠলে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা পরস্পরকে দোষারোপ করে থাকেন। এভাবে একপক্ষ অপর পক্ষকে দোষারোপ করলেও এটি মূলত ব্যবসায়ীদের একচেটিয়া ভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা, এতে কোনো সন্দেহ নেই। নানা অপকৌশলে ভোক্তাদের ঠকানো ছাড়াও কারসাজি ও যোগসাজশের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়া অনৈতিক তো বটেই; একই সঙ্গে অপরাধও। নিত্যপণ্যের অযৌক্তিক দামবৃদ্ধি রোধে সরকারের কঠোর অবস্থান কাম্য। একই সঙ্গে অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রতারণা ও লোক ঠকানোর মানসিকতা পরিহার করে পেঁয়াজসহ সব ধরনের নিত্যপণ্য ও সেবার দাম স্থিতিশীল রাখতে আন্তরিকতার পরিচয় দেবেন।