হায় হায় কোম্পানির কথা শোনেন না, এমন মানুষ বিরল। বহু বৎসর ধরে অ্যামিবার মতো নানান সময় ভোল পাল্টা হয়ে হায় হায় কোম্পানিগুলো অর্থ লুট করে আসছে সাধারণ মানুষদের নিকট হতে। এরা কখনো ভুয়া এনজিও, কখনো মাল্টি লেভেল মার্কেটিং বা এমএলএম, কখনো ভুঁইফোঁড় কোম্পানির আদলে প্রতারণা ও জালিয়াতি করে আসছে। লুটপাট শেষ হলে এরা রাতারাতি উধাও হয়ে যায়। এ ধরনের প্রতারক চক্রের কোটি কোটি টাকা লুটপাটের কাহিনী বহু বৎসর ধরে পত্রপত্রিকায় প্রকাশ হয়ে আসছে। প্রশ্ন হলো দোষ মূলত কার? হায় হায় কোম্পানিগুলো তো মানুষের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে অর্থ আদায় বা তাদের পণ্য বিক্রয় করে না। তা হলে জন্মের পর হতে হায় হায় কোম্পানির কথা শুনে আসার পরও সাধারণ মানুষ কেন তাদের ফাঁদে পা দেন?
এক কথায় বলা যায়, এর মূলে কাজ করে অতিলোভ। হায় হায় কোম্পানিগুলো এমনভাবে অর্থ দ্বিগুণ করার কিংবা মাল্টি লেভেল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে অথবা অন্য কোনো ফরম্যাটে সাধারণ মানুষকে লোভ দেখায় যে, লোভে পড়ে সরল মানুষ ঘটি-বাটি বিক্রয় করে তাদের নিকট ‘আমানত’ জমা করেন। মাসের পর মাস কিস্তি শোধ করেন। হয়তো কথামতো সামান্য লভ্যাংশ পান, তাতে লোভের জিভ আরও চকচক করে উঠে। একজনের লোভের সামান্য অর্জন দেখে অন্যদের লোভের পাখা জন্মায়। তারপর সেই হায় হায় কোম্পানির আগুনে ঝাঁপ দেয় শত শত মানুষরূপী পিপীলিকা। তাদের লোভের পাখা জন্মায়ই মরার তরে। আর্থিকভাবে পঙ্গু হওয়ার তরে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত একটি ঘটনার বাস্তব উদাহরণ দেয়া যাক। একজন গৃহকর্মী তথা বুয়া বিভিন্ন বাসা ও মেসে কাজ করে বহু কায়ক্লেশে অর্থ সঞ্চয় করতেন। তার রিকশাচালক স্বামীরও শখ ছিলো বড় লোক হওয়ার। ঘটনাক্রমে ওই বুয়া যেই সকল মেসে কাজ করতেন তার একটিতে থাকতো বাংলাদেশের অন্যতম একটি এমএলএম কোম্পানির এক করিতকর্মা সদস্য। সে বুয়াকে অল্প পুঁজি ও স্বল্প সময়ে বিশাল বড়োলোক হওয়ার অপূর্ব স্বপ্ন দেখালো। সেই স্বপ্ন কার কার পূরণ হয়েছে, তাদের চাক্ষুষ দেখালো, সুতরাং লোভে পড়ে বুয়া নিজের ও স্বামীর সমস্ত সঞ্চয় দিয়ে ওই হায় হায় কোম্পানির সদস্য হলেন; কিন্তু বুয়া তো আর মাল্টি লেবেল মার্কেটিংয়ের ডান-বামের হিসাব বুঝেন না, আর নতুন সদস্যও সংগ্রহ করতে পারেন না। এই ফাঁকে একদিন ওই করিতকর্মা সদস্য মেস ছেড়ে পালায়। আর জীবনের সকল সঞ্চয় হারিয়ে তাকে তালাক দেন স্বামী। অর্থাৎ হায় হায় কোম্পানি পেলো ওই বুয়ার মতো হাজার হাজার মানুষের সারা জীবনের সঞ্চিত টাকা আর ওই করিতকর্মা সদস্য পেলো তার কমিশন; কিন্তু ওই বুয়া পেলেন স্বামীর তালাক এবং সকল হারানোর হাহাকার। বিভিন্ন হায় হায় কোম্পানির বেশির ভাগ সদস্যের পরিণতি হয় একইরকম। আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের সরকার-প্রশাসন সকল পর্যায়ের অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করতে পারবে না। আইন করেও তাদের পুরাপুরি বন্ধ করা যাবে না। কেবল সাধারণ মানুষের সচেতনতা এবং অতিলোভ সংবরণই হলো হায় হায় কোম্পানিগুলোর প্রলোভনের ফাঁদ হতে মুক্তির উপায়।