স্টাফ রিপোর্টার: মাঘের শীতে একে তো বাঘের তেজ, তার ওপর আকাশের মুখভার। কোথাও কোথাও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। আকাশের এই গোমড়ামুখো ভাব কেবল গতকাল বুধবারই ছিলো না, আজ বৃহস্পতিবারও থাকবে। থাকবে বৃষ্টি বাতাসও। এমন আভাসই দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। আকাশের মেঘাচ্ছন্ন থাকার কারণে এই দুই দিন তাপমাত্রা কিছুটা বাড়বে। বৃষ্টি ভাবটা কেটে গেলে আবার বাড়বে শীত। এদিকে, মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় বৃষ্টি ঝরেছে।
আবহাওয়া দফতরের পরিচালক শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, পশ্চিমা বাতাসের সঙ্গে পূর্বালী বাতাস মিশেছে। এ কারণেই আকাশে মেঘ। এই মেঘের জন্য তাপমাত্রা কিছুটা বাড়বে। তবে বৃষ্টি হয়ে গেলে দুদিন পর দেখা যাবে ঝকঝকে রোদ। তখন কিন্তু তাপমাত্রা আবার কমবে। এই শীত শীত ভাবটা ৩১ জানুয়ারির পর আরও পাঁচ থেকে ছয় দিন থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতর সূত্র জানাচ্ছে, ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ভোট। সেদিন রোদ থাকবে, থাকবে ঠান্ডাও।
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাসে বলা হয়, ঢাকা-খুলনা বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, সিলেট, ময়মনসিংহ বিভাগের দু এক জায়গায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। রাত ও দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকবে। বুধবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া ৯ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিলো ১৩ দশমিক ২ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানী ঢাকায় এর মাত্রা ছিলো ১৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় মঙ্গলবার রাত থেকে চুয়াডাঙ্গায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃষ্টির কারণে মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। সাধারণ মানুষ ছাতা মাথায় দিয়ে বাইরে বের হতে দেখা গেছে।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানায়, জেলায় ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আরও দুই দিন বৃষ্টি হতে পারে বলে তারা ধারণা করছেন। সকাল ৬টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছামাদুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার থেকে আকাশ মেঘলা শুরু হয়। রাত থেকে শুরু হয় বৃষ্টি। এই বৃষ্টি থাকতে পারে ২-৩ দিন। বৃষ্টি ছেড়ে গেলে তাপমাত্রা খানিকটা হ্রাস পাবে। বৃষ্টির পর শীতের তীব্রতা বাড়তে পারে।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মেহেরপুরে মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। গতকাল বুধবার সকাল থেকে মেঘ আর কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশে জনজীবনে অস্বস্তি নেমে এসেছে। এতে রবি ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। অবশ্য দুপুরের আগে বৃষ্টি থেমে গেলেও সূর্যের দেখা মেলেনি। সন্ধ্যার পর থেকে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস এ অঞ্চলে গতকাল সকাল ৯টায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ১৩.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাত থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১ মিলিমিটার। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি রবি মরসুমে দুই দফা বৃষ্টি আর দেরিতে শীত আসায় গম, ভুট্টা, মসুরসহ শীতকালীন সবজিতে রোগ বালাই বেশি দেখা দিয়েছে।
গতকাল বুধবার সকাল থেকে কখনো গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি আবার কখনো উত্তরের হিমেল হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। এতে খুব বেশি শীত অনুভূত না হলেও স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যহত হচ্ছে মানুষের। সকালে স্কুল কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রী ও কর্মজীবী মানুষ ছাতা মাথায় দিয়ে বের হয়েছেন। দিনের কাজে চরম বাধা পড়ছে বলে জানান কয়েকজন কর্মজীবী খেটে খাওয়া মানুষ।
চেংগাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন, এসময় গমের শীষ বের হচ্ছে। বৃষ্টিতে এখন নানা রোগের আক্রমণ দেখা দেবে। নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ফলন বিপর্যয় হতে পারে।
সবজি চাষখ্যাত সাহারবাটি গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, শীতকালের বৃষ্টি ফসলের জন্য খুবই বিপদজনক। রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন হয়ে পড়বে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, বৃষ্টি কী পরিমাণ হয় তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এসময় চাষিদেরকে ফসলের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। বৃষ্টি ও মেঘাচ্ছন্ন পরিবেশ কেটে গেলে ক্ষেতে প্রয়োজনীয় ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে তাগাদা দেয়া হচ্ছে চাষিদের।