৫০ বেডের জনবল দিয়ে ১৭ বছর ধরে চলছে ১০০ শয্যার হাসপাতাল
স্টাফ রিপোর্টার: ৫০ শয্যার জনবলে জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে ১০০ শয্যা বিশিষ্ট চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল। চিকিৎসকের অভাবে রোগীরা পাচ্ছেন না তাদের কাক্সিক্ষত সেবা। দীর্ঘ ১৭ বছর আগে হাসপাতালটি ৫০ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত হলেও মেলেনি ১০০ শয্যার জনবল। ফলে লোকবল সংকটের কারণে কর্তব্যরত ডাক্তাররা-নার্সরা চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। এখানে প্রথম শ্রেণির ২১টির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি পদ দীর্ঘদিন শূন্য রয়েছে। কবে নাগাদ পরিপূর্ণ জনবল মিলবে তাও সঠিকভাবে বলতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, স্বাধীনতার আগে ১৯৭০ সালে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালটি ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল হিসেবে তার কার্যক্রম শুরু করে। ২০০৩ সালে হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। সেই থেকে দীর্ঘ ১৭ বছর আগের জনবল দিয়েই চলছে হাসপাতালটি। ৫০ শয্যার জনবলেও রয়েছে ঘাটতি। হাসপাতালের ২১টি অনুমোদিত ডাক্তারের পদে আছেন ১৬জন। এরমধ্যে সিনিয়র কনসালটেন্ট (অ্যানেসথেসিয়া), সিনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি), সিনিয়র কনসালটেন্ট (পেড), সিনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থো সার্জারি) ও জুনিয়র কনসালটেন্টের (অর্থো ও ট্রমাটিক) পদ দীর্ঘদিন শূন্য রয়েছে। এখানে ৬৭ নার্সের পদ থাকলেও রয়েছেন ৬০ জন। শূন্য আছে ৬টি। ফার্মাসিস্টের ৩টি পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র একজন। সহকারী নার্সের ৫টি পদ আছে কিন্তু কর্মরত আছেন মাত্র একজন। সুইপারের ৭টি পদ থাকলেও পাঁচটি পদই রয়েছে শূন্য। বিশেষ করে চিকিৎসক সংকটের কারণে সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগী সাধারণ। আলমডাঙ্গা উপজেলার দক্ষিণ গোবিন্দপুর গ্রামের বুলবুলি খাতুন বলেন, ‘আউট ডোরে টিকিট কেটে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হয় ডাক্তার দেখানোর জন্য। কোনো কোনোদিন হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যাই।’ হাসপাতালের অফিস সহকারী সবুর হোসেন জানান, ‘১০০ শয্যায় উন্নীত হাসপাতালটি ৫০ শয্যার জনবল দিয়ে চালানো হলেও নতুন করে আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের জন্য ভবন নির্মিত হয়েছে। নতুন ভবনে কার্যক্রম শুরু না হলেও জেলার মানুষের চাহিদা রয়েছে আড়াইশ’ বেড হাসপাতালের। আমরা প্রতি মাসেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় লোকবলের চাহিদা দিচ্ছি কিন্তু পূরণ হচ্ছে না। আর কবে নাগাদ ১০০ বেডের জনবল মিলবে তাও বলা যাচ্ছে না।’ ১০০ বেডের লোকবলের জন্য দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে প্রতীক্ষায় আছে চুয়াডাঙ্গার মানুষ। এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামীম কবির জানান, ‘৫০ শয্যার লোকবল দিয়ে ১০০ শয্যার হাসপাতাল চালানো খুবই কঠিন। এর মধ্যেও জনবলের ঘাটতি রয়েছে। ডাক্তারসহ প্রয়োজনীয় নার্স-কর্মচারীর চাহিদা প্রতিমাসেই আমরা দিয়ে থাকি কিন্তু পাচ্ছি না। তবু আমরা রোগী সাধারণের চাহিদা মাথায় রেখে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছি। সামান্য একটু ত্রুটি বিচ্যুতি থাকতেই পারে।’ চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা এএসএম মারুফ হাসান যুগান্তরকে বলেন ‘জনবল সংকটের কারণে আমরা কাক্সিক্ষত সেবা দিতে পারছি না; কিন্তু চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আর সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রয়োজনীয় জনবলের চাহিদা দেয়া আছে। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি হয়তো শিগগিরই একটা সুব্যবস্থা হবে।’