সিলেটে খুন হওয়া আলমডাঙ্গা বগাদীতে দুইবন্ধুকে বেদনাবিধূর পরিবেশে দাফন

শাহাদত হোসেন লাভলু: সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের হুমায়ুন বাজারে আলমডাঙ্গার ভোগাইল-বগাদীর দুই বন্ধুর লাশ বেদনাবিধূর পরিদেশে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। গতকাল রোববার বাদ জোহর গ্রাম্যকবরস্থানে পাশাপাশি দাফন করা হয় তাদের। এর আগে সকাল ১০টার দিকে সিলেট থেকে তাদের লাশ ভোগাইল-বগাদীতে এসে পৌঁছায়। লাশ দেখতে আশপাশের গ্রামসহ এলাকার সাধারণ মানুষ ভিড় জমায় ভোগাইল-বগাদীতে। এর আগে শুক্রবার সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কে সিটি কর্পোরেশনের ময়লার ভাগাড় লালমাটিয়া এলাকায় একটি ট্রাকের (ঢাকা মেট্রো-ট-১৮-৪০৩০) চালক ও হেলপারের আসনে রাখা অবস্থায় জাহাঙ্গীর ও রাজুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, ট্রাকের মালিক চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার আইন্দীপুরের আতাউর রহমান। ইব্রাহিম ট্রাকচালক ও ফজর হেলপার ছিলেন। গত ২১ জানুয়ারি ট্রাকটি ঢাকায় নিয়ে গেলে ইব্রাহিমকে বাদ দিয়ে নতুন চালক হিসেবে জাহাঙ্গীরকে নিযুক্ত করেন গাড়ির মালিক। জাহাঙ্গীরের বন্ধু ছিলেন রাজু। তিনি পেশায় কম্পিউটার অপারেটর ছিলেন। পরদিন ২৩ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭টায় গাজীপুর থেকে ট্রাকে রিকশার যন্ত্রাংশ নিয়ে সিলেটে আসার সময় সাবেক চালক ও রাজুও নতুন চালকের সঙ্গী হন। পথে হবিগঞ্জের মাধবপুর আসার পর জাহাঙ্গীর ও রাজুকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়।
ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে শনিবার ভোরে সিলেট সদর উপজেলার ধোপাগুল থেকে ইব্রাহীমকে আটক করে মোগলাবাজার থানা পুলিশ। তার দেয়া তথ্যমতে আম্বরখানা থেকে আটক করা হয় তার সহযোগী ফজর আলীকে। আটক মো. ইব্রাহীম তালুকদার সিলেট সদর উপজেলার ধোপাগুল এলাকার ফউজদার তালুকদারের ছেলে এবং ফজর মিয়া বিশ্বনাথের শ্বাসরাম এলাকার রুস্তম আলীর ছেলে।
তাদের দেয়া বর্ণনা মতে, পুলিশ ফজরের শ্বশুরবাড়ি থেকে নিহতদের লুন্ঠিত মোবাইল সেট ও ট্রাকের টায়ার বিক্রির ৫ হাজার টাকা জব্দ করে এবং গাড়ির টায়ার হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার জগদীশ পুরের জয়নাল মিয়ার দোকান থেকে জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় টায়ার ক্রেতা ওই উপজেলার বেড়জুড়া গ্রামের আব্দুল কাদিরের ছেলে জয়নাল মিয়াকেও (২৩) আটক করা হয়।
আটকদের বরাত দিয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. জেদান আল মুসা বলেন, হত্যার আগে তারা চাকু দিয়ে ভয় দেখিয়ে নিহতদের কাবু করে ফেলে। আর নিহত চালক জাহাঙ্গীরের বন্ধু রাজুও কিছুটা প্রতিবন্ধী টাইপের ছিলেন। জাহাঙ্গীর গাড়ি নিয়ে সিলেটের উদ্দেশে আসায় বেড়ানোর জন্য বন্ধুর সঙ্গী হয়ে প্রাণ হারায় রাজুও। এরপর গাড়ি চালায় ইব্রাহীম। গাড়িটি মাধরপুরের জগদীশপুর ও আউশকান্দি, সর্বশেষ সিলেটের দক্ষিণ সুরমার চ-িপুলে এনে থামায় তারা। এরপর পরিকল্পনা করে মরদেহ দুটি চালক ও হেলপারের সিটে বসিয়ে সিলেট ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের পারাইরচকে রেখে যায়। সিলেট মগবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে এবং ময়নাতদন্ত শেষ আমার ট্রাকের নতুন ড্রাইভার জাহাঙ্গীর আলম ও তার বন্ধু রাজু আহমেদ মরদেহ নিয়ে গতকাল রোববার বেলা ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার ভাংবাড়িয়া ইউনিয়নের বগাদী গ্রামের নিজবাড়িতে পৌঁছায়। এ সময় এলাকার শত শত নারী-পুরুষ লাশ দেখতে ভিড় জমায়।