অজ্ঞান করে নগদ টাকা ও মূল্যবান মালামাল নিয়ে সটকে পড়া প্রতারকচক্রের উৎপাত একদিনে ব্যপকতা পায়নি। এক সময় এ ধরনের প্রতারকচক্রের অপতৎপরতা স্টিমার, ফেরি ও রাজধানীর কিছু এলাকার বাস-ট্রেনেই সীমিত ছিলো। কালক্রমে মানুষ বেড়েছে, বেড়েছে অজ্ঞানপার্টির সদস্য সংখ্যা। ওদের অপতৎপরতার পরিধি বেড়ে ছড়িয়েছে গ্রাম পর্যায়ের পশুহাট থেকে শুরু করে আন্তঃজেলা লোকালবাসে। কিছুক্ষেত্রে বাড়িতেও অজ্ঞান করে সর্বস্ব হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটছে। প্রতিকার? ওদের টিকি ছোঁয়াও যেনো দুসাধ্য হয়ে উঠেছে।
সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের জাফরপুরের গরু ব্যবসায়ীদের মধ্যে একজন ও আলমডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়ায় বসবাসকারী একজন অবসরপ্রাপ্ত …. পৃথক বাসে অজ্ঞানপার্টির খপ্পরে পড়েন। গরু ব্যবসায়ীকে কুষ্টিয়া থেকে ও অবসরপ্রাপ্ত … কে চুয়াডাঙ্গার একটি বাসস্ট্যান্ড থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা নিয়ে দুজনই বাড়ি ফিরেছেন। ওদের হারানো অর্থ উদ্ধার তো দূরের কথা, প্রতারকদের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপের খবর মেলেনি। কেন? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রতারিত বা তার পক্ষে তেমন কেউই পুলিশে নালিশ করেন না। করতে গেলেও কিছু ক্ষেত্রে ঘটনাস্থল নিয়ে প্রশ্ন তোলায় অভিযোগ উত্থাপন কারীকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। ক্ষেত্রবিশেষ অভিযোগ পুলিশের খাতায় লিপিবদ্ধ হলেও প্রকৃত প্রতারকদের খুব কমই ধরাপড়ে। এই যখন অবস্থা তখন অজ্ঞান করে অর্থ হাতিয়ে নেয়া প্রতারকচক্রের অপতৎপরতা বা তাদের অপরাধপ্রবণতা হ্রাস পাবে কিভাবে?
এটা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না যে, বাসে, ট্রেনে হাট বাজারে অজ্ঞান করে অর্থ হাতিয়ে নেয়া প্রতারকরা সঙ্গবদ্ধ। ওরা এক সময় খাতির জমিয়ে মুখরোচক কিছু খাবারের সাথে অজ্ঞান করা ওষুধ সেবন করাতো। সম্প্রতিকালে বেশ কিছু ঘটনা পর্যালোচনা করে যে চিত্র উঠে এসেছে তা হলো, খাতির জমানো নয়, সামনে মুখরোচক খাবার কিনে খাওয়ার ভিড় জমিয়ে অন্যকেও তা খেতে উদ্বুদ্ধ করা। মুখরোচক খাবার বিক্রেতাদের কেউ কেউ ওই প্রতারকচক্রেরই সদস্য। অন্য সদস্যের দেখিয়ে দেয়া ব্যক্তি খাবার কিনে খেলেই ওদের কেল্লাফতে। প্রশ্ন উঠতেই পারে, এই যদি অবস্থা হয় তা হলে রাস্তায় বের হয়ে ঝালমুড়ি, ডাব, আচার বা অন্য কিছু খাওয়ার অতো দরকার কি? অবশ্যই সচেতনতায় ঘাটতি রয়েছে। তাই বলে অসচেতনতার দোহাই দিয়ে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারীদের দায়িত্বশীলেরা নিশ্চয় দায় এড়াতে পারেন না। অপরাধী যতোই ধুরন্ধর হোক পুলিশ তৎপর হলে ওদের ধরে আইনে সোপর্দ করা নিশ্চয় অসম্ভব নয়।
পথে ঘাটে, বাসে ট্রেনে হাট বাজারে বাসস্ট্যান্ডে যাত্রা-পথচারীদের অজ্ঞান করে অর্থ নিয়ে চম্পট দেয়া প্রতারকেরা চিকিৎসক নন। ওরা ওদের ওস্তাদ বা গুরু ধরেই অজ্ঞান করা ওষুধ চিনেছে, শিখেছে কৌশল। প্রথমেই ওদের গুরু ধরে উচিত শিক্ষা দিতে পারলে প্রতারকের সংখ্যা এতোটা বাড়তো না যেমন, তেমনই সচেতনতা বৃদ্ধিতে সমাজের সচেতনমহল দায়িত্বশীল হলে প্রতারণার এতো সহজ সুযোগও পেতো না ওরা। তাছাড়া প্রতারিতরা কেন আইনের আশ্রয় নিচ্ছে না তাও খতিয়ে দেখে বাস্তবমুখি পদক্ষেপ দরকার। প্রয়োজন আইন প্রয়োগে আন্তরিক প্রচেষ্টা।