স্টাফ রিপোর্টার: চাকরি হারানোর প্রতিশোধ নিতেই সিলেটে খুন করা হয় ট্রাকচালক জাহাঙ্গীর মিয়া (২৫) ও তার বন্ধু রাজু আহমদকে (৩০)। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা এ কথা জানিয়েছে। তারা হত্যার পর দুর্ঘটনার নাটক সাজাতেও চেয়েছিলো। এ কারণে ট্রাকের ছয়টি চাকাও খুলে নিয়েছিলেন হত্যাকারীরা। এ ঘটনায় তিন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন ট্রাকটির সাবেক চালক মো. ইব্রাহিম মিয়া তালুকদার (২৪), সহকারী ফজর মিয়া (২২) ও তাদের সহযোগী জয়নাল মিয়া (২৩)। গত শুক্রবার রাতে ও গতকাল শনিবার ভোরে সিলেট শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। পরে হত্যা মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, ট্রাকটির মালিক চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার উপজেলা আইন্দী গ্রামের আতাউর রহমান। ট্রাকটি আগে চালাতেন ইব্রাহিম মিয়া, আর তার সহযোগী ছিলেন ফজর মিয়া। গত মঙ্গলবার ট্রাকের মালিক ইব্রাহিম ও ফজরের বদলে জাহাঙ্গীরকে ট্রাক চালানোর দায়িত্ব দেন। চাকরি হারানোয় ক্ষুব্ধ হন ইব্রাহিম ও ফজর। গত বৃহস্পতিবার মালামাল পরিবহনের জন্য ট্রাকটি গাজীপুর থেকে সিলেটে নিয়ে আসার চুক্তি পান নতুন চালক জাহাঙ্গীর। সিলেটে যাওয়ার কথা শুনে আগের চালক ইব্রাহিম ও সহকারী ফজর মিয়াও তার সঙ্গী হন। এদিকে সিলেট থেকে ঘুরে আসার জন্য বন্ধু রাজুকেও সঙ্গে নেন জাহাঙ্গীর। প্রথমে রাজুকেও ট্রাকচালক ভেবেছিলো পুলিশ। কিন্তু পরে জানা যায় তিনি চালক জাহাঙ্গীরের বন্ধু। পুলিশ আরও জানায়, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী জাহাঙ্গীর ও রাজুকে দড়ি দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। পরে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় সিটি করপোরেশনের ময়লার ভাগাড় লালমাটিয়া এলাকায় নিয়ে ট্রাকটি রাখা হয়। হত্যাকা-ের পর দুর্ঘটনার নাটক সাজাতে ট্রাকের ছয়টি চাকাও খুলে নেন তারা। ট্রাকের চাকাগুলো খুলে বিক্রি করা হয়েছিলো। সেগুলোও উদ্ধার করা হয়েছে। পুরো ঘটনায় দুজনকে সহযোগিতা করেছেন জয়নাল মিয়া।
সিলেট মোগলাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতার হোসেন বলেন, হত্যাকা-ের ঘটনায় নিহত রাজু আহমদের ভাই সুজন আহমদ থানায় মামলা করেছেন। মামলায় আটক তিনজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
সিলেট নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) মো. জেদান আল বলেন, গ্রেফতার আসামিদের আজ বিকেলে সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়েছে। চাকরি হারানোর ক্ষোভ থেকেই দুজনকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশের কাছে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন তারা।
গত শুক্রবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে সিলেট সিটি করপোরেশনের ময়লার ভাগাড় লালমাটিয়া এলাকায় সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কে ট্রাক থেকে জাহাঙ্গীর ও রাজুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তারা আলমডাঙ্গা উপজেলার ভাংবাড়িয়া ইউনিয়নের ভোগাইলবগাদি বাজারপাড়া কাবের আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (২৫) সাথে একই পাড়ার মৃত দিনু ম-লের ছেলে রাজু আহমেদ (৩০)।
এদিকে, আমাদের আসমানখালী প্রতিনিধি পরিবারের বরাত দিয়ে জানিয়েছেন, সিলেট থেকে জাহাঙ্গীর আলম ও রাজু আহম্মেদের লাশ আজ রোববার ভোগাইল বগাদি গ্রামে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। তবে কখন পৌঁছুবে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে রাজু আহমেদের মা ডালিম বেগম বলেন, গত বুধবার আমার ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী রাজু আহমেদ, ট্রাকচালক জাহাঙ্গীর আলম সিলেট শহর ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য নিয়ে গিয়েছিলো। শনিবার বাড়িতে ফিরে আসার কথা ছিলো। তিনি আরও বলেন ১ বছর আগে তার স্বামী মারা গেছে। পরিবারে আমার ৩ ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। আমার দুই ছেলে ও মেয়ে প্রতিবন্ধী আর বড় ছেলে স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন করতে পারে। সেও বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেছে। আমি ধার দেনা করে মেজো ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী রাজু আহমেদকে একটি কম্পিউটারে ডাউনলোড, ফ্লাক্সিলোডের দোকান করে দিয়েছিলাম। সেখান থেকে রাজু যে আয় করে আমার সংসার কোনোরকমে চলে যায়। সেই ছেলে খুন হলো। এখন আমার সংসার চলবে কি করে। কে দেখবে প্রতিবন্ধি ভাইবোনকে।
এদিকে ট্রাকচালক জাহাঙ্গীর আলমের পিতা কাবের আলী বলেন, আমার ছেলে আগে ট্রাক চালাতো। মাঝে বেশ কিছুদিন ট্রাক চালানো বন্ধ করে দিয়েছিলো। গত সোমবার আইন্দীপুর গ্রামের ট্রাক মালিক আতাউর রহমান এসে আমার ছেলেকে তার ট্রাক চালানোর কথা বলে গিয়েছিলো। বুধবার ট্রাক নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয় জাহাঙ্গীর।