দামুড়হুদা ব্যুরো: ঢাকা নারায়ণগঞ্জ বন্দরে জাহাজ চাপা পড়ে দামুড়হুদা উপজেলার পুরাতন হাউলী গ্রামের শুকুর আলীসহ দুই ডকইয়ার্ড শ্রমিক নিহত হয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ১৫ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে গতকাল শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে নিহত ওই দুই শ্রমিকের মৃতদেহ জাহাজের তলদেশ থেকে উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদল। পরে গতকাল বিকেলে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করেন বন্দর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শুকলা সরকার। নিহত অপর শ্রমিকের নাম ইয়া রসুল (৩২)। সে মেঘনার ঝাউচর এলাকার গিয়াস উদ্দীনের ছেলে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। নিহত শুকুর আলীর লাশ নিজ গ্রামের নেয়ার জন্য বিকেলেই রওনা হয়েছে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি। আজ সকাল ৯টার দিকে পুরাতন হাউলী ঈদগা মাঠে জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন পরিবারের লোকজন।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার পুরাতন হাউলী গ্রামের মৃত আবুল হোসেন ওরফে পঙ্খিরাজের ছেলে সিএনজি চালক শুকুর আলী (৩৫) গাড়ি কেনাবেচা করতে গিয়ে ধার-দেনায় জড়িয়ে পড়েন। পাওনাদারদের চাপ সামাল দিতে না পেরে বছর দুয়েক আগে এলাকা ছেড়ে ঢাকায় পাড়ি জমায় শুকুর আলী। ঢাকা নারায়ণগঞ্জ বন্দরে স্নেহাশিপ ইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়াকর্স নামের একটি বেসরকারি জাহাজ তৈরি কোম্পানিতে শ্রমিকের কাজ শুরু করেন। মাস ছয়েক পরে স্ত্রী মমতাজ খাতুনও নারায়নগঞ্জে পাড়ি জমান। ওখানে বাসাভাড়া নিয়ে স্বামী-স্ত্রী বসবাস শুরু করেন।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে স্নেহাশিপ ইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়াকর্স নামের ওই কোম্পানির একটি নতুন জাহাজ ডক ইয়ার্ডের সিøপ ওয়ে দিয়ে পানিতে ভাসানোর সময় চ্যানেল লাইনচ্যুত হয়ে বালুতে আটকে যায় জাহাজটি। পরে শুকুর আলীসহ মোট ৬ শ্রমিক বালু অপসারণের জন্য জাহাজের নিচে যায়। বালু অপসারণের এক পর্যায়ে হুইল এয়্যারের তার চিড়ে গেলে জাহাজটি বসে যায়। এ সময় জাহাজের নিচে চাপা পড়ে শুকুর আলীসহ ছয় শ্রমিক। ডকইয়ার্ডের অন্যান্য শ্রমিকরা আহত অবস্থায় ৪ শ্রমিককে উদ্ধার করতে পারলেও শুকুর আলীসহ আরও এক শ্রমিকের হদিস মেলাতে পারেনি তারা। পরে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট এসে উদ্ধার কাজ শুরু করে। ১৫ ঘণ্টা উদ্ধার তৎপরতা চালানোর পর বালু সরিয়ে গতকাল শুক্রবার দুপুর ২ টার দিকে শুকুর আলীসহ দুই শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদল। বিকেলে নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শুকলা সরকার ঘটনাস্থলে এসে লাশ হস্তান্তর করেন। লাশ সৎকারের জন্য নিহত দু’পরিবারের স্বজনদের হাতে তাৎক্ষণিক ২০ হাজার টাকা করে অনুদান তুলে করেন তিনি।
জাহাজটির ওজন ১৪শ টনেরও বেশি বলে জানান ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আরেফিন। ছেলের মৃত্যু সংবাদে কান্নায় ভেঙে পড়েন বৃদ্ধ মা মনেহার বেগমসহ পরিবারের লোকজন। দু’সন্তানের জনক নিহত শুকুর আলী ছিলেন ৫ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে মেজ। রাত সাড়ে ১২টার দিকে লাশ নিজ গ্রামে পৌঁছুবে বলে জানান লাশবাহী গাড়িতে থাকা শুকুর আলীর ভাই শহিদুল ইসলাম। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাত সাড়ে ১১টায় লাশবাহী গাড়িটি ঝিনাইদহ পৌঁছেছে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেছেন, লাশের অবস্থা ভালো না। যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব দাফন করতে হবে। সে হিসেবে আজ শনিবার সকাল ৯টার দিকে পুরাতন হাউলী ঈদগা মাঠে নিহতের লাশের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হতে পারে বলেও জানান তিনি।