আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের ক্লাসমুখী করতে প্রশংসনীয় নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ক্লাসে ফিরিয়ে আনতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজেই শিক্ষকদের সাথে নিয়ে ক্লাসবিমুখ শিক্ষার্থীদের বাড়িতে বাড়িতে যাচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের ক্লাসমুখী করার এ অভিনব আন্দোলন ইতোমধ্যে প্রশংসা কুড়াচ্ছে।
জানা গেছে, মুজিববর্ষ উপলক্ষে আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজ শিক্ষার মানোন্নয়নে বিশেষ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সিদ্ধান্ত মোতাবেক গত ১৮ জানুয়ারি কলেজে অভিভাবক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে অভিভাবকদের সম্মতি ও পরামর্শে কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। মোট কার্যদিবসের মধ্যে শতকরা ৭৫ ভাগ উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা হয়। ৩ মাস শতকরা ৭৫ ভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে হাজিরা খাতা থেকে নাম কাটা ও ৬ মাস পর্যন্ত কাক্সিক্ষত উপস্থিতি না থাকলে ভর্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে প্রমোশনের কিংবা ফরম পূরণের অযোগ্যের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সমাবেশে সন্তানদের বাল্যবিয়ে দেবেন না মর্মে অভিভাবকদের নিকট থেকে অঙ্গীকারনামা লিখে নেয়া হয়। কলেজে অ্যান্ড্রয়েড ফোন নিষিদ্ধ করা হয়।
আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিটন আলী। সভাপতির পরামর্শে শিক্ষকদের সাথে নিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কৃষিবীদ গোলাম ছরোয়ার মিঠু শিক্ষার্থীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে অভিভাবক সমাবেশের সিদ্ধান্ত সংবলিত হ্যান্ডবিল শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। গতকাল শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজে অধ্যক্ষ ও অন্যান্য শিক্ষকদের নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ক্লাস করার গুরুত্ব শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে তুলে ধরেন। গতকাল তিনি আলমডাঙ্গা শহরের বাবুপাড়া, কাছারিপাড়া, স্টেশনপাড়া, কোর্টপাড়া, মাদরাসাপাড়া ও কলেজপাড়ায় বসবাসরত শিক্ষার্থীদের বাড়ি যান। সেসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক দিলরুবা শিরিন, হাবিবুর রহমান, মাকসুদুর রহমান, মাহফুজুর রহমান, সালমা সিদ্দিকী, নুরুজ্জামান ও ফারুক হোসেন।
অধ্যক্ষ গোলাম ছরোয়ার মিঠু জানান, শিক্ষাবর্ষের প্রথমেই শিক্ষার্থীদের হাতে একাডেমিক ক্যালেন্ডার ধরিয়ে দিয়েছি। ক্যালেন্ডার অনুযায়ী তাদের ক্লাস টিউটোরিয়াল ও পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। ক্যালেন্ডারের একটি পরীক্ষাও বাদ দেয়া হচ্ছে না।
সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষক প্রভাষক তাপস রশীদ বলেন, ক্লাসমুখী করার আন্দোলন বেশ কাজে এসেছে। সচেতন হচ্ছে অভিভাবকরা। শিক্ষার্থীদের ভেতর ক্লাস ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা কমে গেছে। কোর্টপাড়ার অভিভাবক আতিক বিশ্বাস বলেন, এখন তো মনে হচ্ছে অভিভাবকদের চে’ সন্তানের যতœ শিক্ষকরা বেশি নেচ্ছেন। মাঝে মধ্যে রাতে অধ্যক্ষ মোবাইলফোনে রিং দিয়ে পড়ালেখার খোঁজ নিচ্ছেন, অনুপ্রেরণা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিটন আলী বলেন, আলমডাঙ্গা উপজেলাকে নিয়ে একাধিক বিষয়ে গর্ব করা গেলেও শিক্ষা সূচকে বেশ পিছিয়ে। বিশেষ ক্ষেত্রে উচ্চ শিক্ষায় এ চিত্র হতাশাব্যঞ্জক। উপজেলার সার্বিক শিক্ষার মানোন্নয়নে সকলকে সাথে নিয়েই কাজ করতে চায়। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত কাউন্সেলিং ও নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে ক্লাসমুখী করে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা প্রয়োজন।