ট্রাকের ভেতরে পড়েছিলো দুই চালকের লাশ : ট্রাকের ৬টি চাকা গায়েব
স্টাফ রিপোর্টার: সড়কের পাশে পড়েছিলো চাকাছাড়া ট্রাক। ট্রাকের আসনে দুজনের নিথর দেহ। একজন চালকের আসনে অন্যজন পাশের আসনে। পেশায় দুজনই ট্রাকচালক। ট্রাকের ছয়টি চাকার কোনোটিই নেই। গতকাল শুক্রবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে সিলেট সিটি করপোরেশনের ময়লার ভাগাড় লালমাটিয়া এলাকায় সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কে ছিলো ট্রাকটি। নিহত দুজন হলেন জাহাঙ্গীর মিয়া (২৫) ও রাজু আহমদ (৩০)। তারা চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার ভোগাইলবগদী গ্রামের বাসিন্দা।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বেলা পৌনে ১১টার দিকে স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে সড়ক দুর্ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এ সময় ট্রাকের ভেতর থেকে দুটি লাশ উদ্ধার করে। প্রথম দিকে ঘটনাটি সড়ক দুর্ঘটনা বলে ধারণা করা হলেও পরে ট্রাকের চাকা খোলা অবস্থায় দেখে ধারণা পরিবর্তন করা হয়।
পুলিশ বলছে, ময়লার ভাগাড়–সংলগ্ন হওয়ায় সড়কে যাতায়াত করা যানবাহনগুলো দ্রুত এ স্থান ত্যাগ করে। এ সুযোগে পূর্বপরিকল্পনা করে দুর্বৃত্তরা এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে। লাশ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ওই দুই যুবকের স্বজনদের কাছে খবর পাঠানো হয়েছে।
সিলেট নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মো. জেদান আল মুসা বলেন, ধারণা করা হচ্ছে এটি পরিকল্পিত হত্যাকা-। একজনের মরদেহ ট্রাকের চালকের আসনে অন্যজন পাশের আসনে ছিলো। শরীরের বিভিন্ন জায়গায়ও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। দুর্ঘটনা হলে ট্রাকের চাকা খুলে যাওয়ার কথা নয়। দুর্ঘটনার আলামতও পাওয়া যায়নি। আমরা ট্রকের নম্বর সংগ্রহ করে মালিকের সাথে যোগাযোগ করেছি। মালিকের মাধ্যমে চালকদের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। আমাদের ধারণা, অন্য কোথাও এদেরকে হত্যা করে এখানে এনে ফেলে গেছে ঘাতকরা। লাশের গায়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ঘাতকরা হয়তো এটিকে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিলো। পুলিশ এ ঘটনার রহস্য উদঘাটনে জোরেশোরে কাজ শুরু করেছে।’
এদিকে, ঢাকা মেট্রো-ট-১৮-৪০৩০ নাম্বারের ট্রাকটি ঢাকার গাজীপুরের জয়দেবপুরস্থ ধান গবেষণা কেন্দ্র থেকে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিলো বলে জানিয়েছে পুলিশ। ট্রাকটির মালিক চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা থানার আইন্দীপুরের আতাউর রহমানের। ট্রাকে কোনো মালামাল ছিলো না।
এদিকে আমাদের আসমানখালী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আলমডাঙ্গা উপজেলার ভাংবাড়িয়া ইউনিয়নের ভোগাইল বগাদী বাজারপাড়ার কাবের আলীর ছেলে ট্রাক ড্রাইভার জাহাঙ্গীর আলম (২৬) ও একই পাড়ার মৃত দিন ম-লের ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী রাজু আহমেদ (৩০) গত বুধবার সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে ট্রাকযোগে সিলেটের উদ্দেশে রওনা দেন।
গতকাল শুক্রবার বেলা তিনটার দিকে ট্রাক ড্রাইভার জাহাঙ্গীর আলমের পিতা কাবের আলী বলেন, আমরা শুনছি এবং মোবাইল ফোনে ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমার ছেলে জাহাঙ্গীর আলম ও রাজু আহমেদ মরদেহ দেখতে পেয়েছি। তাদের মরদেহ পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। কে বা কারা তাদেরকে মেরে ফেলেছে আমাদের জানা নেই। আমি এখন আমার ছেলেদের মরদেহ নিজ গ্রামে নিয়ে আসতে চাই। তিনি বলেন, আমার ছেলে জাহাঙ্গীর ট্রাক চালানো বন্ধ করে দিয়েছিলো দেড় বছর যাবত। পার্শ্ববর্তী আইনপুর গ্রামের এক ট্রাক মালিকের ট্রাক নিয়ে গত বুধবারই তারা নিজ এলাকা থেকে রওনা দিয়েছিলো সিলেটের উদ্দেশ্যে। এ বিষয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী রাজু আহমেদের মা ডালিম বেগম বলেন, কাবের আলীর ছেলে ট্রাকচালক জাহাঙ্গীর আলম আমার ছেলেকে নিয়ে গত বুধবার সকালে সিলেট শহর দেখানোর জন্য নিয়ে গিয়েছিলো। মাঝেমধ্যে আমার ছেলে কম্পিউটার ও ফ্লেক্সির দোকানে বসতো। গতকাল শুক্রবার বিকেলে মোবাইলের মাধ্যমে আমার ছেলে ও জাহাঙ্গীরের মরদেহ আমরা দেখেছি।