চার শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনায় ক্ষোভ-বিক্ষোভে উত্তাল ঢাবি : ৪ দফা দাবি

স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ৪ শিক্ষার্থীকে রাতভর দফায় দফায় নির্যাতনের প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল ক্যাম্পাস। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাবির ১২টি ছাত্র সংগঠনের জোট ‘সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র ঐক্য’ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল শেষে সমাবেশ করে। দুপুরে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে প্রক্টরের পদত্যাগসহ ৪ দফা দাবি জানানো হয়। এছাড়া সমাবেশ থেকে ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানানো হয়েছে। বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ২০১৮ সালের ২৩ জানুয়ারি নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনা স্মরণ করে ওই ঘটনায় জড়িতদেরও শাস্তির দাবি করা হয়। সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (মার্কসবাদী) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন ডাকসু ভিপি নূরুল হক, সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি মেহেদী হাসান, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের নাসির উদ্দীন প্রিন্স প্রমুখ। সমাবেশে সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র ঐক্যের পক্ষ থেকে ৪ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এগুলো হচ্ছে ঢাবির প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রব্বানীকে ইতিহাসে ‘জঘন্যতম ও ব্যর্থতম’ হিসেবে আখ্যায়িত করে তার পদত্যাগ, প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের হলে সিট দেয়া ও অছাত্র-বহিরাগত বিতাড়ন করে হলে হলে ছাত্রলীগের সন্ত্রাস-দখলদারী বন্ধ করা, ২২ ডিসেম্বর ডাকসু ভবনে ছাত্রলীগ-মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের হামলা ও মঙ্গলবার রাতে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে চার ছাত্রকে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার এবং নিরাপদ ও গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস বিনির্মাণ। ভিপি নূরুল বলেছেন, ছাত্রলীগকে দিয়ে দুঃশাসন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে গণজাগরণ ও গণসচেতনতাকে দাবিয়ে রাখা যাবে না। ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে আপনাদের কপাল ভালো, অন্যথায় ছাত্রলীগই আপনাদের গদি ছাড়ার কারণ হবে। সময় থাকতে ছাত্রলীগের ‘বেপরোয়া ও লাগামহীন গতি’ টেনে ধরতে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ভিপি অভিযোগ করেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রলীগের অপকর্মের সহযোগীর ভূমিকা পালন করে। হলগুলো থেকে অছাত্র-বহিরাগত উচ্ছেদে দীর্ঘদিন প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছি, আলোচনা করেছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত প্রশাসন কিছুই করেনি। নূরুল বলেন, ‘ছাত্রলীগ বলেছে, ওই ৪ শিক্ষার্থী ছাত্রশিবির করে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে আমরা জানতে পেরেছি যে, ছাত্রলীগের মিছিল-মিটিং- প্রোগ্রামে নেতারা ক্যাম্পাসে র‌্যানকেট খেলেন, চা খান, সেই প্রটোকলে না আসায় শিবির অজুহাত দেখিয়ে তাদের অমানবিকভাবে মারধর করেছে। ছাত্রলীগ যে ভিন্নমতের শিক্ষার্থীদের ওপর বিভিন্ন সময়ে হামলা চালায়, নানা অপবাদ দিয়ে মারধর করে, এটি নতুন কোনো ঘটনা নয়। কিছুদিন আগে বুয়েটের ছাত্র আবরারকে তো তারা মেরেই ফেললো! ডাকসুর নির্বাচিত ভিপি হয়েও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হাতে ২২ ডিসেম্বর আমিসহ ২৪ জন শিক্ষার্থী হামলার শিকার হয়েছি। ফলে ছাত্রলীগের কর্মকা- সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। স্বৈরাচারী সরকারকে টেকানোর জন্য, শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ বন্ধ করার জন্য, ছাত্র আন্দোলন দমনের জন্য শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে ছাত্রলীগ একটি সন্ত্রাসী সংগঠন ও সরকারের একটি পেটোয়া বাহিনীতে পরিণত হয়েছে।’ ৪ শিক্ষার্থী নির্যাতনের প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে অবস্থানরত ছাত্র হাসপাতালে: এদিকে ছাত্রলীগের নির্যাতন ও মারধরের ঘটনার বিচারের দাবিতে অবস্থানকারী শিক্ষার্থী মুকিম চৌধুরীকে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন ডাকসু ভিপি নূরুল হক। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটার দিকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তির জন্য তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় তার ভাই মুহসীনও উপস্থিত ছিলেন। এর আগে বুধবার বিকাল ৫টা থেকে রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান শুরু করেন ওই শিক্ষার্থী। টানা ২২ ঘণ্টা অবস্থানের পর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এদিকে অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।
চার দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন: এদিকে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মুকিমসহ চার শিক্ষার্থীকে নির্যাতনকারী ছাত্রলীগ নেতাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মুকিমের বিভাগ ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের শিক্ষার্থীরা সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানান। কর্মসূচিতে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। এসময় তারা ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে চার দফা দাবি উপস্থাপন করেন। দাবিগুলো হল- যারা মুকিমের ওপর অন্যায়ভাবে পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া, একটা নিরাপদ ক্যাম্পাস সৃষ্টি, যেখানে স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ ও স্বাধীনভাবে চলাফেরা করা যাবে এবং রাজনৈতিক মতের প্রতিফলন ঘটানো যাবে, আবাসিক হলগুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, প্রথম বর্ষ থেকেই হলে সিট বরাদ্দ দিতে হবে এবং সিট বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত তারা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়া আগামী রোববার এ ঘটনার বিচারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি বরাবর স্মারকলিপি দেবেন বলেও জানিয়েছেন ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের শিক্ষার্থীরা।