মাজেদুল হক মানিক: আধুনিক পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে বোরো ধানের বীজতলা রক্ষা করেছেন মেহেরপুরের সচেতন কৃষকরা। তারা এখন স্বস্তিতে রয়েছেন। অপরদিকে সাধারণ পদ্ধতিতে চারা তৈরি করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অনেক কৃষক। ধান আবাদে চারা সংকটের আশঙ্কায় রয়েছেন এ সকল কৃষকরা। কোল্ড ইনজুরি থেকে ধানের চারা রক্ষায় আধুনিক পদ্ধতি প্রয়োগে জোর দিয়েছে তাই কৃষি বিভাগ।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ডিসেম্বর মাসের প্রথম থেকেই মেহেরপুর অঞ্চলে প্রচ- শীত পড়তে থাকে। এর মধ্যে শুরু হয় বোরো ধানের বীজতলা তৈরির কাজ। অব্যাহত কুয়াশা আর শীতে বোরো বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। বীজতলা আক্রান্ত হয় কোল্ড ইনজুরিতে। ধানের চারা লালচে রঙ ধারণ এবং চারা মারা যেতে থাকে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চারা রক্ষায় বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হয়। এতে অনেক চাষি উপকৃত হয়েছেন। বিশেষ করে কুয়াশার মধ্যে পলিথিন দিয়ে ঢেকে বীজতলা রক্ষা করেছেন অনেকে। আর যারা আধুনিক পদ্ধতি গ্রহণ করেননি তাদের বীজতলা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত বীজতলার প্রায় ৬৫ ভাগ চারা ধান ক্ষেতে রোপণ করা যাবে না বলে মন্তব্য ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের। ফলে এ অঞ্চলে বোরো ধানে চারা সংকটের আশঙ্কা করছেন অনেক চাষি।
গাংনী থানাপাড়ার চাষি রবিউল ইসলাম বলেন, চারা এক ইঞ্চি মতো লম্বা হওয়ার পর শীতে লালচে হয়ে আসতে থাকে। তখন পলিথিন দিয়ে পুরো বীজতলা ঢেকে দেয়া শুরু করি। এভাবে কয়েকদিন ঢেকে দেয়ার পর চারাগুলো সবুজ ও সতেজ হতে থাকে। গেল সপ্তাহে সার প্রয়োগ করেছি। এখন চারা লাগানোর উপযুক্ত হয়েছে। তবে এ প্রক্রিয়া ব্যবহারের আগে যেটুকু ক্ষতি হয়েছে তারপর আর কোনো চারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। আমার মতো যারা আধুনিক এই পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন তাদের চারা ভালো আছে। পক্ষান্তরে যারা সাধারণ নিয়মে চারা তৈরি করেছেন তাদের চারা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
একই পাড়ার কয়েকজন চাষি আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করেননি। ফলে তাদের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমনই একজন ক্ষতিগ্রস্ত চাষি ফজলুল হক বলেন, গেল কয়েক বছরের মধ্যে এ বছরই সবচেয়ে বেশি শীত পড়েছে। কুয়াশাও ছিলো বেশি। ফলে আমার মতো অনেক চাষির বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন কাক্সিক্ষত পরিমাণ জমিতে ধান আবাদ করতে হলে চারা কেনা ছাড়া কোনো উপায় নেই। আধুনিক পদ্ধতি গ্রহণ না করে এখন আফসোস ছাড়া তো আর কিছুই করার নেই।
এ প্রসঙ্গে মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, নির্দিষ্ট সময়ে বীজতলা তৈরি ও ধানের বীজ বোপণ করতে সবসময় চাষিদের পরামর্শ দেয়া হয়। অন্যদিকে বীজতলা রক্ষার জন্য পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেয়া এবং নির্দিষ্ট সময়ে পানি দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা ছাড়া চারা তৈরির কোনো উপায় নেই। এ বিষয়ে চাষিদের সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সব চাষি যদি আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করেন তাহলে চারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
ছবি ক্যাপশন: আধুনিক পদ্ধতি প্রয়োগে সবল চারা আর সাধারণ পদ্ধতিতে তৈরি বীজতলার কোল্ড ইনজুরি আক্রান্ত চারা।