শিশুর ওপর নির্যাতন কখনই সুফল বয়ে আনে না

কিশোর কারো কথা শোনে না। বড্ড বেয়াড়া। ইচ্ছে হলো তো গাছের মগডালে উঠে বসে থাকলো। মনে হলো কিছু করতে হবে, হুট করে বাড়ির বাইরে গিয়ে অন্যের ক্ষতি করে বসলো। এসব কেনো? কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজে অনেকেরই ধারণা-দৃষ্টির ভাব আছে। আদৌও কি তাই? অবশ্যই না। মনবিজ্ঞান প্রমাণ করেছে- শিশুর মানসপট থাকে সফেদ। পরিবার এবং পরিবেশগত কারণেই শিশুর মধ্যে উড়নচন্ডিতা পেয়ে বসে। চুয়াডাঙ্গা বেলগাছি মুসলিমপাড়ার এক কিশোরের আচরণ তারই আলামত নয়কি?
যে শিশুকে কিছুতেই বসে রাখা যাচ্ছিলো না বলে পায়ে পরানো হয়েছিলো লোহার বেড়ি, সেই শিশুই পরবর্তিতে বিদ্যালয়ে এখন সহপাঠীদের নিয়ে হেসে খেলে বড় হওয়ার কথা ভাবতে শুরু করেছে। অবশ্যই ওঝা কবিরাজের ঝাড়ফুক আর পড়া কলা খাওয়ানোর কারণে নয়, ওই শিশু কিছুটা হলেও অনুকূল পরিবেশ পেয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বাড়তি নজর, বাড়িতে মা-বাবার একটু হলেও বাড়তি আদর-সোহাগ। প্রতিবেশীদের মধ্যেও নিশ্চয় জেগেছে দায়িত্ববোধ। কারণে অকারণে মারপিট, দুষ্টু বলে উঠতে বসতে কটাক্ষ কোনো শিশুকেই সুপথে রাখে না। উল্টোটাই ঘটে। গাছের উঁচুডালে উঠে বসে থাকাটাও খানেকটা নিরাপত্তাহীনতারই কুফল।
ভূমিষ্ঠ হওয়া প্রায় সকল শিশুই কৌতুহলি হয়। যার জানা-বোঝার পরিধি যতোটা, সে অতোটুকই জানে ও বোঝে। বেড়ে ওঠার সাথে সাথে পরিবারে অশান্তির মাত্রা তাকেও প্রভাবিত করে। বুঝে না বুঝে অনেক পিতা-মাতাই সন্তানের সামনে বেমালুম খুনসুটিতে মত্ত হলে শিশুর মনে তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া তাকেও অশান্ত করে তোলে। কেন না, একজন শিশুর সবচেয়ে বড় শিক্ষালয় তার পরিবার। ফলে শিশুর প্রতি পরিবারের প্রত্যেকেরই আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন। কোনো শিশু বিগড়ে গেলে তার ওপর নির্যাতন কখনই সুফল বয়ে আনে না। ওদের মনবুঝে প্রয়োজনীয় সময় দিয়ে বড় হওয়ার পরিবেশ সামনে মেলে ধরতে পারাটাই অভিভাবকের কর্তব্য।
অমক পারে তুই কেন পারিস না, ওর মতো সুবধ নয় কেন? এরকম প্রশ্ন তুলে কোনো শিশু-কিশোরকে কটাক্ষ মানেই ওর পারাটাকে থামিয়ে দেয়া। কেন পারছে না, কেন অনুগত নয় তা পিতা-মাতাকেই বুঝতে হয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরও দায়িত্ব অনেক। উৎসাহ যুগিয়ে সামনে সুন্দর পরিবেশ মেলে ধরতে পারলে অবশ্যই শিশু-কিশোর অনেক বড় হওয়ার কল্পনা করতে পারে। যে কল্পনা শিশুকে সুনাগরিক হওয়ার সহায়ক, হৃদয়ে সেই ছবি আঁকা শিক্ষকসহ পরিবার ও প্রতিবেশীদের দায়িত্বেরই অংশ।