বেড়েই চলেছে নারী নির্যাতনের ঘটনা। ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনাও থেমে নেই। ২০১৭ সালের আগস্টে টাঙ্গাইলের মধুপুরে এক তরুণীকে চলন্ত বাসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যা করে রাস্তায় ফেলে দেয়া হয়েছিলো। এ ঘটনায় দেশে তোলপাড় হয়। কয়েক দিন আগে কুর্মিটোলায় রাস্তার পাশে ধর্ষণের শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে এক কিশোরীকে একটি নির্মাণাধীন ভবনে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়। গত শুক্রবার ঢাকার ধামরাই উপজেলায় বাসে এক শ্রমিককে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় বাসটির চালক ফিরোজ ওরফে সোহেলকে গ্রেফতার ও বাসটি জব্দ করেছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, গত শনিবার মমতাকে ধর্ষণ ও হত্যার কথা আদালতে স্বীকার করেছেন আসামি সোহেল।
একের পর এক ঘটে যাওয়া নারী নির্যাতনের ঘটনায় আমাদের সমাজের পরিচয় যেন পাল্টে যাচ্ছে। পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে উঠা সহনশীল সমাজে যে বন্ধন ছিলো, তা ঢিলে হয়ে গেছে অনেক আগেই। এখন যেন নৈতিকতা নির্বাসিতপ্রায়। মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় চরমে পৌঁছেছে। যার ফল আমরা দেখতে পাচ্ছি। প্রায় প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর বীভৎস কায়দায় খুনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। কিছু প্রতিবাদ হলেও ব্যাপক অর্থে গণপ্রতিরোধ গড়ে উঠছে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও এসব ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারছে না। প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে, দেশজুড়ে নারী-শিশুর ওপর নির্যাতন ও যৌন সহিংসতার ৫১ দশমিক ৬২ ভাগই ধর্ষণ। আরেক খবরে বলা হচ্ছে, নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্তদের সাজার হার মাত্র ১১ দশমিক ২৬ শতাংশ। আর ধর্ষণ মামলার তদন্তে ১৩টি জায়গায় অনেক সময় ভুল করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আবার ফাইনাল রিপোর্টেই হারিয়ে গেছে অনেক ধর্ষণের অভিযোগ। কয়েকটি ঘটনায় পুলিশ কিছুদিন অনুসন্ধান চালানোর পর থেমে গেছে। কখনো অনৈতিক সুবিধা নিয়ে, কখনো মামলার চাপে এই মামলাগুলোর দিকে নজর দেয়ার সময়ই পায়নি।
শহর থেকে গ্রাম, সর্বত্রই অবক্ষয় যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা হতাশাজনক। অন্যদিকে তদন্ত ও বিচারের এমন ধীরগতিও লক্ষণীয়। দ্রুত বিচার আইন অনুযায়ী ১৮০ দিনে কেন বিচার সম্পন্ন করা যায় না? নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণ ও ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যা মামলা নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে শেষ করা, শুনানি শুরু হলে প্রতি কার্যদিবসে টানা মামলা পরিচালনা করা, মামলায় সাক্ষীর উপস্থিতি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বিষয়ে ছয় দফা নির্দেশনাসহ অভিমত দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই নির্দেশনা কি মেনে চলা হচ্ছে? সব ধর্ষণের ঘটনার দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিতে প্রয়োজনে আইন সংস্কার করতে হবে।