স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল রোববার সকালে জেলা প্রশাসেন সম্মেলন কক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। চুয়াডাঙ্গায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ড. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। এ সময় তিনি বলেন, ‘মাদকাসক্তরা মা-বাবাকে আগুনে পুড়িয়ে মারে। সমাজে মাদক ও বাল্যবিয়ে ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আপনি যদি কমিউনিটিকে কাজে লাগাতে পারেন। দফাদার সঠিকভাবে ইনফরমেশন দিচ্ছে না। এ জায়গাগুলো যদি নিয়ন্ত্রণ করা যায়; তাহলে কোর কমিটির মাধ্যমে সহজে খুঁেজ পাওয়া যাবে। তারা যদি ইনফরমেশন দেয় মাদকসেবীদের ডাটাবেজ করতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধি, হেলথ সেন্টার ও কমিউনিটি ক্লিনিকের জনবল কাজে লাগাতে পারেন।’ গতকাল রোববার বেলা ১০টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় প্রধান অতিথি খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ড. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার এসব কথা বলেছেন।
জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ড. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। এ সময় পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম, ৬-বিজিবির অতিরিক্ত পরিচালক মেজর নিস্তার আহমেদ, সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. শামীম কবির, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মনিরা পারভীন, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুল হক বিশ্বাস, জীবননগর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান, জেলা জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাড. বেলাল হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সী আলমগীর হান্নান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক শরিয়তউল্লাহ, কাজী সমিতির সভাপতি কাজী শামসুল হক, এনএসআই উপপরিচালক জামিল সিদ্দিক, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদেকুর রহমান, আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিটন আলী, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিম লিংকন, জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার হাবিবুর রহমান, শিবানী সরকার ও মেহেদী হাসান, মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের উপপরিচালক (চ.দা.) আব্দুল আওয়াল, বাস-মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক একেএম মইনুদ্দিন মুক্তা ও বিআিরটিএর সহকারী পরিচালক আতিযার রহমানসহ অন্যন্য সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথি খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ড. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার আরও বলেন, ২০৪১ সালে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হবে বাংলাদেশ। যুবসমাজ মাদক ও ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসে আসক্ত হয়ে পড়েছে। সামনের দিকে যেতে হলে তাদেরকে সতর্ক হতে হবে। মাদক ও ধর্ষণ বেড়ে গেছে। চুয়াডাঙ্গা বর্ডারবেল্ট এলাকা। এখান থেকে মাদক নিয়ে যাচ্ছে কিনা, অন্য এলাকা এফেক্টেড হচ্ছে। এসব নজরদারী বাড়াতে হবে। এক সময় গাঁজা ছিলো মাদক। এখন হেরোইন, মরফিন ও ইয়াবার পর ইনজেকশন আসছে। মাদকের ফলে মেমোরি চেঞ্জ হয়ে যায়। এডিকটেড লোক মরার জন্য ভয় পায় না। এখানেই সমস্যা। সিগারেট খাচ্ছে। নতুন যেন কেউ এটিকটেড না হয়। স্কুল-কলেজের বন্ধু-বান্ধবের কারণে এসব হচ্ছে। যুবকরা সাংস্কৃতিক কর্মকা-, খেলাধুলা ও ডিবেটিং করো। তার সেসব জায়গায় যায় না। মোবাইলফোনে যখন খারাপ ছবি দেখে, ধর্ষণ কি। ছেলে-মেয়ে জানতো না। অভিভাবকরা সচেতন হলে সমাজে খুঁজে খুঁজে বের করবো। মাদকাসক্তরা এসব করে। স্কুল-কলেজের কর্মসূচি পালনে ভাগ করে আনতে হবে। জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব বেশি। সব প্রবলেম নিয়ে ডাটাবেজ করেন। বাল্যবিয়ে দিলে শরীরের ওপর প্রভাব পরে। পরে দাম্পত্য সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। মৃত্যুঝুঁকি আছে। আমাদের দেশে অনেক বেশি। এসডিজির সবচেয়ে বেশি চ্যলেঞ্জ মৃত্যুঝুঁকি। বর্তমানে প্রতি লাখে মৃত্যুর হার ১৬৯ জন। তা নামিয়ে প্রতিলাখে ৭০ জনে আনতে হবে। রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও এ কমিটি কাজ করতে হবে। ডাটাবেজ চাই মাদক ও মাতৃমৃত্যুর। মায়েদের হাসপাতালে পাঠান। সুন্দর ও সৎ প্রশাসন উপহার দিতে পারি। যে ভিশন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী সে দেশ তৈরি করতে পারি।
জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, মাদক ও বাল্যবিয়ে নিয়ে ছুটির দিনেও ব্যস্ত থাকতে হয়। প্রতিনিয়ত ব্যস্ত থাকতে হয়। ৮০ কিলেমিটার সীমান্ত এলাকায় মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়। বালি তোলা ও মাটি কাটা নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। কিছু অনুমতি নিয়ে করে। ইটভাটায় মাটি কাটা নিয়ে এলাকায় মানুষের মধ্যে অসন্তোষ দেখা যায়। ৬বিজিবির অতিরিক্ত পরিচালক মেজর নিস্তার আহমেদ বলেন, গত ১ মাসে সীমান্ত থেকে ১ কোটি ৪৬ লাখ ৪২ হাজার ৪৪৬ টাকার ফেনসিডিল, শাড়ি, চকলেট ও রুপো জব্দ করা হয়েছে। ইয়াবা চালান আসছে। ৭০৬ পিস ইয়াবকা পাওয়া গেছে। অবৈধ অনুপ্রবেশ হয়নি।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক শরিয়তউল্লাহ বলেন, মাদকদ্রব্য আইনে ৪২টি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে ১৫টি মামলা ও ১০টি মোবাইল কোর্ট হয়েছে। ৫টি নিয়মিত মামলা হয়েছে। ইনজেকশন ব্যবহার বেড়েছে। ২৭৪টি ইনজেকশন জব্দ করা হয়েছে। ১৯৯টি স্কুলে কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্কুলে ৬/৭টি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মেহেরপুর জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল রোববার সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক আতাউল গনি। আলোচনাসভায় বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলী, বিজিবি চুয়াডাঙ্গা ৬ ব্যাটালিয়নের কমান্ডার লেফটেনেন্ট কর্নেল খালেকুজ্জামান, সিভিল সার্জন ডা. শামীম আরা নাজনীন, উপজেলা চেয়ারম্যান এমএ খালেক, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদুল আলম, মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওসমান গনি, জেলা সমাজসেবা অধিদফতরের উপপরিচালক কাজী কাদের মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী, জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের উপ-পরিচালক এসএম শফিউল আজম, জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক বিকাশ কুমার দাস, জেল সুপার কেএম কামরুল হুদা, সদর উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির প্রমুখ। এ সময় সরকারি কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।