শিশুরা শাসত সুন্দর। ওদের মধ্যদিয়ে যে সুন্দরর্য ফুটে ওঠে তা দেখার জন্য শুধু দৃষ্টি থাকলেই হয় না, দরদি হৃদয়ও থাকতে হয়। সমাজের সকলেই যে ওরকম হৃদয়বান তা অবস্থাদৃষ্টে ভাবাটাও অবান্তর বটে। অথচ সভ্য সমাজে এরকম হওয়া একেবারেই অনুচিৎ। যে সমাজে শিশুরা ধর্ষণের শিকার হয়, হতে হয় হত্যার শিকার। পাশবিক নির্যাতনের পাশাপাশি তার নিজের পরিবারেও কমবেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছে অসংখ্য শিশু। এরকমই নির্যাতনের শিকার চুয়াডাঙ্গা বেলগাছি মুসলিমপাড়ার এক শিশু যার বয়স সবে পেরিয়েছে ১০। ওর দু’পায়ে লোহার বেড়ি পরিয়ে বাড়ি বন্দি করে রেখেছিলেন তারই পিতা। কেনো? ওই শিশু নাকি দুষ্টু। ওর বিরুদ্ধে দুষ্টুমির তকমা দিয়ে কিংবা আপত্তিকর অপবাদ দিয়ে এলাকার অনেকে যাচ্ছে তাইও করেছে। যা মানবতা বিবর্যিত।
শিশু যখন ভূমিষ্ঠ হয় তখন থেকেই ওর মধ্যে জানার কৌতুহল সৃষ্টি হতে থাকে। আমাদের মনে রাখা দরকার, যে ঘরে যারই সন্তান আজ যেভাবেই ভূমিষ্ঠ হোক তাকে সুন্দর মানসিকতার মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব সমাজেরই। যদিও সর্বাধিক দায়িত্ব তার পিতা মাতার ও তার পরিবারের বড় সদস্যদের। কেনো না, শিশুর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে শিশুর নিজের পরিবারের সদস্যরাই ওর মানসপটি যে ছাপ ফেলে তারই প্রতিফলন ঘটে তার মধ্যে। কিছুটা যে ব্যতিক্রম থাকে না তা নয়। তবে তা বিরল। বিজ্ঞান এই ব্যতিক্রমটুকুই মানে চায় না। কেনো না, তাতে যুক্তির ঘাটতি যথেষ্ঠ। কারণ, শিশু কেমন মনের মানুষ হবে তার সিংহভাগই নির্ভর করে তার পরিবারের অনুকরনীয় বা আদর্শের সদস্যের ওপর। কেনো না, শিশুরা ছোটবেলা থেকেই অনুকরণীয়। তবে শিশুকালে দুষ্টুমির ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্ন। শিশুর দুষ্টুমি অবশ্যই দোষনীয় নয়। কেনো না, শিশু মানসপট থাকে সফেদ পাতার তো। ওখানে যেমন ছাপ দেয়া যায় তেমনই ওয়ে ওঠে। তা হলে শিশুর ওপর নির্যাতন কেনো? চুয়াডাঙ্গা বেলগাছি মুসলিমপাড়ার ওই শিশুর ওপর নির্যাতনের প্রতিবেদন দৈনিক মাথাভাঙ্গায় প্রকাশের পর এ প্রশ্ন নিশ্চয় বোদ্ধাদের মধ্যে জেগেছে। শিশুদের চোখ রাঙিয়ে বা কড়া শাসনে মানুষের মতো মানুষ করা যায় না, ওদের সুন্দর মনের মানুষ করে গড়ে তুলতে হলে দরকার আদর সোহাগ, ভালোবাসাসহ সঠিক পথে রাখার জন্য সঠিক সময়ে সঠিক সঙ্গসহ পারিবারিক সুশিক্ষা। এটা না বুঝে সঙ্গ দিতে না পারার দায় অনেক সময়ই আমারা ওই শিশুর ওপর চাপিয়ে দায় এড়ায়। এর কুফল মূলত সমাজকেই বহন করতে হয়। হচ্ছে।
আজকের শিশুই জাতির ভবিষ্যত। চরম ওই বাস্তব ও সত্যকে যে জাতির দায়িত্বশীলরা মেনে নিয়ে জাতির ভবিষ্যত গঠনের পদক্ষেপ নিয়েছে সেই জাতিই আজ বিশ্ব দরবারে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে। কানাডা মেধাবী পিতা-মাতাকে সে দেশে অভিবাসী হওয়ার সহজ শর্ত দিয়েছে শুধুমাত্র মেধাবী প্রজন্ম পাওয়ার আশায়। নরওয়েতে কোনো শিশুকে তার পিতা-মাতার মারধর দূরের কথা একটু গরম চোখে তাকালেও দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নেয়ার বিধান রয়েছে। এ বিধানের যথাযথ প্রয়োগেও দায়িত্বশীলেরা আন্তরিক। আর আমাদের সমাজে? ১০ বছর বয়সী শিশু সন্তানের পায়ে লোহার বেড়ি বিদ্যুত শক্তি প্রয়োগে লাগাতেও কুণ্ঠাবোধ করে না। এর মধ্যদিয়েই স্পষ্ট, আমরা সভ্যতার কোথায় কোন পর্যায়ে অবস্থান করছি। বিষয়টি আমাদের সকলকেই উপলব্ধি করা দরকার।