দুষ্টুমি করলে সন্তানকে বুঝিয়ে আদর সোহাগে বড় করে তুলতে হয় : নির্যাতনের এখতিয়ার নেই কারো
স্টাফ রিপোর্টার: শিশু সাগরের পায়ের বেড়ি খুলে দেয়া হয়েছে। তাকে আর ওইভাবে নির্যাতন করা হবে না। লোহার বেড়ি পরিয়ে আর ঘরে বন্দি নয়। আবারও তাকে নব উদ্যোগে বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হবে। চুয়াডাঙ্গার মুসলিমপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে ঠিকমতো লেখাপড়া করছে কিনা তা সেদিকেও নজর রাখবে পুলিশ। এছাড়াও শিশু সাগরের সাথে তার বাড়ির এবং মহল্লার সকলে সঠিক আচরণ করা হচ্ছে কিনা তাও দেখা হবে বলে জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ আবু জিহাদ ফখরুল আলম খান।
চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের বেলগাছি রেলগেটের অদূরবর্তী মুসলিমপাড়ার আলমসাধু চালক আকবর আলীর ছেলে সাগরের বয়স ১০ পেরিয়েছে সবে। অতোটুকু বয়সে কতোটাই আর দুষ্টুমি করতে পারে? এরপরও তাকে মাঝে মাঝেই মহল্লার অনেকেই অপবাদ দিয়ে মারপিট করে। বাড়িতেও পিতা-মাতার কথা শোনে না মোটে। লাগামছাড়া দুষ্টুমি যেন চোখে মুখে। গতপরশু সকাল ১১টার দিকে একই এলাকার আলামিন নামের এক কিশোর শিশু সাগরকে অপবাদ দিয়ে বেদম প্রহার করে। আলমসাধু চালক পিতা বাড়ি ফিরে বিষয়টি জানার পর ক্ষুব্ধ হয়ে সন্তানকে নিয়ে যান নিকটস্থ ওয়েল্ডিঙের দোকানে। সেখানেই তাকে পরানো হয় লোহার বেড়ি। বিদ্যুত শক্তি প্রয়োগ করে বেড়ি পরানোর সময় পায়ের কিছু অংশ ঝলসে গেলে শিশু সাগর বুকফাঁটা চিৎকার দিয়ে কান্না জুড়ে দেয়। কান্না শুনে এলাকার অনেকেই ছুটে গিয়ে দৃশ্য দেখে চমকে ওঠেন। কেউ কেউ ভিডিও করেন। খবর পেয়ে প্রতিবেদক সরেজমিন পরিদর্শন করেন। শিশু সাগরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তার চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ। শিশুর ওপর অমানবিক আচরণের সচিত্র প্রতিবেদন গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গায় তুলে ধরা হয়। সকালেই চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ ফোর্স পাঠিয়ে শিশু সাগরকে উদ্ধার করেন। উদ্ধারের আগেই সাগরের পায়ের বেড়ি তার পিতা মাতা খুলে দেন। সাগরকে সদর থানায় নেয়ার পাশাপাশি তার পিতা-মাতাকেও থানায় ডাকা হয়। বিস্তারিত জানার পর সদর থানাতেই উভয়কেই বোঝানো হয়। সাগরকে আর দুষ্টুমি করতে যেমন বারণ করা হয় তেমনই, তার পিতা-মাতাকেও বলা হয়, শিশু সন্তান যতোই দুষ্টুমি করুক তার ওপর নির্যাতন করার এখতিয়ার কোনো পিতা-মাতার নেই। বুঝিয়ে তাকে বশে নিয়ে লেখাপড়া করাতে হবে। প্রয়োজনে পুলিশ সকল প্রকার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে। এ কথা শুনে সাগর যেমন বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছে ব্যক্ত করে তেমনই তার পিতা-মাতাও বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে ওকে আদর সোহাগে বড় করে তোর প্রতিশ্রুতি দেন। এরই প্রেক্ষিতে উভয়কেই পাঠিয়ে দেয়া হয় বাড়ি।