ঢাবির ছাত্রী ধর্ষণ : বিচার দাবিতে উত্তাল ক্যাম্পাস

বাবার মামলা দায়ের : চিকিৎসায় ৭ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন
স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। গতকাল সোমবার ধর্ষককে গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে উত্তাল ছিলো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ডাকসু, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো ছিলো প্রতিবাদমুখর। ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে দুপুরে অবরোধ করা হয়েছে শাহবাগ মোড়।
বিকেলে ঘটনাস্থল কুর্মিটোলায়ও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ হয়েছে। ধর্ষকদের গ্রেফতারে দেয়া হয়েছে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম। অবরোধের কারণে শহরে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
এ অবস্থায় ঢাবির ভিসি ঘোষণা দিয়েছেন, পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ওই ছাত্রীর পাশে আছে। রাতে ক্যাম্পাসে এ ঘটনার প্রতিবাদে প্রগতিশীল ছাত্রজোট মর্শাল মিছিল করেছে। ডাকসুর নেতৃত্বে মোমবাতি জ্বালিয়ে মিছিল হয়।
এ ঘটনায় ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে সোমবার ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেছেন। কুর্মিটোলায় ঘটনাস্থল চিহ্নিত করার পর সেখান থেকে ঘড়ি, নোটবুক, লেকচার শিট, একটি প্যান্ট, স্যান্ডেলসহ ১৫ ধরনের আলামতও জব্দ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ওই ছাত্রীর ফরেনসিক পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে ঢামেক হাসপাতালে। এতে চিকিৎসকরা ধর্ষণের আলামত পেয়েছেন। এ ছাড়া ভিকটিমের গলাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
আগে থেকে তার শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা ছিলো। ধর্ষণের সময় মারধর করা হয়েছে। সব মিলিয়ে তার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। ছাত্রীর চিকিৎসার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাত সদস্যের ওই কমিটির নেতৃত্বে আছেন গাইনি বিভাগের অধ্যাপক সালমা রউফ। এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ঢাবি ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনার তদন্ত চলছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব কটি সংস্থা ঘটনা তদন্ত করছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই দোষীকে আইনের আওতায় আনা হবে।
রোববার ক্যাম্পাস থেকে রাজধানীর শেওড়ায় বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার পথে ধর্ষণের শিকার হন ওই ছাত্রী। ভুলক্রমে শেওড়ার আগে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের কাছে বাস থেকে নেমে পড়েন। এ সময় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজন পেছন থেকে তার মুখ চেপে অজ্ঞান করে পার্শ্ববর্তী একটি নির্জন স্থানে নিয়ে অচেতন অবস্থায় ধর্ষণ করে। রাত ১০টার দিকে চেতনা ফিরলে তিনি সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে বান্ধবীর বাসায় যান। বান্ধবীকে ঘটনা জানান।
এরপর সহপাঠীরা তাকে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসেন। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। রাতেই সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে ধর্ষণের খবর। হাসপাতালে ছুটে যান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। রাতেই ক্যাম্পাসে কয়েক দফা বিক্ষোভ হয়। ভোর ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনশনে বসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ছাত্র মো. সিফাতুল ইসলাম। এভাবেই ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলন।
সোমবার সকাল থেকে ফের শুরু হয় বিক্ষোভ। সোমবার সরেজমিন ঘটনাস্থলে দেখা যায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাওয়ার সময় বাম পাশে কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় ৩০০ গজ সামনে ফুটপাতের পাশের ঝোপের মধ্যে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেখান থেকে আলামত সংগ্রহ করেছে। জায়গাটি গলফ ক্লাবের সীমানার শেষ প্রান্তে যাত্রী ছাউনি ছাড়িয়ে।
ঘটনাস্থল থেকে অন্তত ৫ গজ দূরে একটি বিজ্ঞাপনী বিলবোর্ড রয়েছে। ঘটনাস্থলের পাশেই আছে ফুটপাত। কয়েকটি ল্যাম্পপোস্টও আছে। জায়গাটিতে একাধিক মেহগনি গাছ আছে। ছোট বরই গাছ আছে অনেকগুলো। ঝোপঝাড় ও লতাগুল্ম আছে। সেখানেরই একটি ঝোপে ঘটনাটি ঘটে।
পুলিশ যা বললো : গুলশান বিভাগের উপকমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, রাতে এ ধর্ষণের ঘটনার পর স্পট নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিলো না। পরে পুলিশ, র‌্যাব ও অন্যান্য সংস্থা টানা অভিযান চালিয়ে সোমবার সকালে ঘটনাস্থলটি শনাক্ত করে। এরপর সেখান থেকে আলামত সংগ্রহ করা হয়। ডিসি বলেন, যেখানে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়েছে, সে জায়গাটি কিছুটা বিচ্ছিন্ন। এখানে ফুটপাত আছে, লোকজন চলাচল করে। পাশেই ঝোপে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে।
ঘটনাস্থল থেকে ছাত্রীর চাবির রিং, দুটি ইনহেলার, ঘড়ি, নোটবুক, লেকচার শিটসহ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। পুরুষের ব্যবহৃত জিনসের প্যান্ট এবং স্যান্ডেল উদ্ধার করা হয়। ক্রাইম সিনও বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে। তিনি বলেন, ঘটনাটি তদন্তে তথ্যপ্রযুক্তিরও সহায়তা নেয়া হচ্ছে। আশা করছি, ধর্ষণের সঙ্গে জড়িতরা ধরা পড়বে।
এদিকে গুলশান বিভাগের এডিসি মো. কামরুজ্জামান বলেন, আমি ওই ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, ধর্ষক একজনই ছিলো। ক্যান্টনমেন্ট থানার ওসি কাজী সাহান হক বলেন, ওই ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে ক্যান্টনমেন্ট থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন। মামলায় আসামি অজ্ঞাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি বলেন, আসামি শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
ঢাবির ওই ছাত্রী ভুল করে কুর্মিটোলায় নেমেছিলেন: শেওড়ায় বান্ধবীর বাসায় যাচ্ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী। তিনি ভুলক্রমে রাজধানীর শেওড়ার পরিবর্তে কুর্মিটোলায় নেমে পড়েছিলেন বলে জানান তার মামা। আর সেখানেরই কোনো একটি স্থানে ধর্ষণের শিকার হন। ওই ছাত্রীর মামা জানান, তার ভাগনি মা-বাবা ও তার (মামা) সঙ্গে হাসপাতালে কথা বলেছেন। তখন ভাগনিই এ কথা তাদের বলেছেন।
ছাত্রীর এক সহপাঠী জানান, ওই ছাত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের আবাসিক শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে যুক্ত। বিভাগেও ভালো ফল রয়েছে তার। শেওড়ায় বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার জন্য বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে ওঠেন।
বাস থেকে কুর্মিটোলা এলাকায় নামার পর অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজন তার মুখ চেপে ধরে। এতে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। এরপর তাকে ধর্ষণ করা হয়। রাত ১০টার দিকে চেতনা ফেরার পর বান্ধবীর বাসায় যান। বান্ধবীকে ঘটনা জানান। এরপর সহপাঠীরা তাকে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসেন। পরে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়।
আলামত মিলেছে: ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ জানিয়েছেন, সোমবার দুপুরের পর ওই ছাত্রীর মেডিকেল পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, ভিকটিমের শরীরে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। তার গলা চেপে ধরা হয়েছিলো, গলায় ক্ষত আছে। মেয়েটির গলা, হাত, গালসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন আছে। কিছু আঘাত হয়েছে ধর্ষণকারীর দ্বারা, আর কিছু হয়েছে ঘটনাস্থলের কারণে। জঙ্গলের কারণে তার পায়ে কিছু আঘাতের চিহ্ন আছে।
তার গলায় আমরা ধর্ষণকারীর হাতের চিহ্ন পেয়েছি। বোঝা গেছে যে, ধর্ষক তার গলাটিপে ধরেছিলো। হাতেও একই ধরনের চিহ্ন আছে যেটা থেকে অনুমিত হচ্ছে তাকে জোর করে আঘাত করা হয়েছে। লাথি মারা হয়েছে, এরকম আঘাতের চিহ্নও পেয়েছি শরীরে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একাধিক ব্যক্তি ধর্ষণ করেছে কি না, তা নিশ্চিতের জন্য নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে।
চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড গঠন: ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক একেএম নাছির উদ্দিন বলেছেন, মেয়েটির মেন্টালি ট্রমা ছাড়াও শারীরিক কিছু আঘাত রয়েছে। পাশাপাশি সে কিছু সমস্যার কথা উল্লেখ করেছে এবং আমরাও কিছু সমস্যা চিহ্নিত করেছি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তাকে চিকিৎসা দিচ্ছেন। তাকে ঢামেকের নাক-কান-গলা বিভাগ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
তার যেহেতু শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, সে জন্য রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগসহ আরও কিছু বিভাগের চিকিৎসককে নিয়ে একটি বোর্ড গঠন করে তার চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ঢামেক হাসপাতালের গাইনি বিভাগের অধ্যাপক সালমা রউফকে প্রধান করে ৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান পরিচালক।
ওসিসিতে ভর্তি : সোমবার দুপুরে ঢামেক হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার-ওসিসির তালাবদ্ধ কলাপসিবল গেটের ওপারে কাচের দরজা একটু ফাঁক করা। সেখানে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন একজন মধ্যবয়স্ক নারী।
গেটের এ পাশে আইনজীবী পরিচয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একজনের সঙ্গে দেখা করলেন। দু’জনের কথা হল ৪০ সেকেন্ডের মতো। এরপর এক নিরাপত্তাকর্মী এসে দরজা বন্ধ করে দিলেন।
পরে ওই ব্যক্তির পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেয়েটি আমার ভাগনি। আর যার সঙ্গে কথা বললাম তিনি আমার বোন (ছাত্রীর মা)। আমার বোন ও দুলাভাই ঢাকার বাইরে থাকেন। রোববার রাতে মেয়ের খবর শুনে ঢাকায় এসেছেন। দু’জনই ওসিসির ভেতরে মেয়ের পাশে আছেন।
ভাগনি কেমন আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ও তো ভেতরে, আমাদের যাওয়া নিষেধ। একটু আগে শুনলাম ঘুমাচ্ছে। তবে লাইফথ্রেট নেই। কিন্তু সে ট্রমাটাইজড। তিনি বলেন, জানি না আমার বোন ও দুলাভাই কীভাবে এখনও শক্ত আছেন। আমরা সবাই শক্ত থাকার চেষ্টা করছি।
পুরো বিশ্ববিদ্যালয় তার পাশে আছে-ভিসি : এদিকে ভুক্তভোগী ছাত্রীকে দেখতে গিয়ে ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, পুরো বিশ্ববিদ্যালয় তার পাশে আছে। ধর্ষণের শিকার ছাত্রীকে ন্যায়বিচার দিতে অভিভাবক হিসেবে যাবতীয় পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
ভিসি বলেন, আমরা মর্মাহত। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার ছাত্রীটির পাশে আছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছে। তাকে মানসিকভাবে শক্ত ও সমর্থ করে তোলাই আমাদের প্রধান কাজ। ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যা প্রয়োজন তাই করবে।
এ ঘটনায় ঢাবি কর্তৃপক্ষ কোনো আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ক্যান্টনমেন্ট থানায় ছাত্রীটির বাবা বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। তার অভিভাবকত্ব আমাদের, তাই তার সর্বোত্তম দায়িত্ব আমাদের। আমাদের সবটুকু তার জন্য নিবেদিত। পুলিশ এ ঘটনায় তৎপর আছে। দ্রুততম সময়ে দোষীদের আটক করে আইনের আওতায় আনার জন্য তাদের অনুরোধ করেছি।
শাহবাগ থানায় ঢাবি প্রশাসনের অভিযোগ: এ ঘটনায় সোমবার শাহবাগ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সোমবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গোলাম রাব্বানী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
পরে যোগাযোগ করা হলে শাহবাগ থানার ওসি মো. আবুল হাসান জানান, এটি মামলা নয়, অভিযোগ। ক্যান্টনমেন্ট থানায় ওই ছাত্রীর বাবার করা মামলার সঙ্গে এ অভিযোগপত্র সংযুক্তির জন্য পাঠানো হবে।
প্রতিবাদমুখর ক্যাম্পাস: এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব ছাত্র সংগঠন রোববার রাতের বিভিন্ন সময়ে পর্যায়ক্রমে কর্মসূচি পালন করে। ধর্ষণের ঘটনায় প্রতিবাদ এবং ধর্ষকের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে নানা স্লোগান দেন তারা। বহন করেন বিভিন্ন প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড।
কয়েক হাজার শিক্ষার্থী যোগ দেন প্রতিবাদে। ১২ ছাত্র সংগঠনের জোট সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র ঐক্যের ব্যানারে কয়েকশ’ শিক্ষার্থী দুপুর ১২টার পর ক্যাম্পাস থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সাধারণ শিক্ষার্থীরাও। জাতীয় পতাকা, ব্যানার আর প্ল্যাকার্ড হাতে তারা ধর্ষণের প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করেন। তাদের এই অবস্থানের কারণে শাহবাগ মোড় হয়ে কাঁটাবন, মৎস্য ভবন, বাংলামোটর ও টিএসসির দিকে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বেলা দেড়টার দিকে শিক্ষার্থীরা অবস্থান ছেড়ে ক্যাম্পাসে ফিরে গেলে আবার যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
শাহবাগের অবস্থান কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে ডাকসু ভিপি নূরুল হক নূর এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন। তিনি বলেন, আমাদের বোন ধর্ষণের ঘটনায় ইতিমধ্যে ছাত্র প্রতিনিধিরা আন্দোলনে নেমেছেন, সোচ্চার হয়েছেন। ধর্ষকদের অবশ্যই চিহ্নিত করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় যে আন্দোলন শুরু হয়েছে সেই আন্দোলন সব বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়বে।
তিনি বলেন, ঢাবির ছাত্রী ধর্ষণের ওই এলাকায় পুলিশের বক্স থাকার কথা। ওই এলাকায় যতদূর জানি অহরহ ছিনতাই, ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। তার মধ্যে এমন ঘটনা ঘটলো। এতে বোঝা যাচ্ছে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বিকার।
মানুষ রাস্তায় নামলে উত্তপ্ত হয় রাজপথ, তখন সবার মধ্যে একটা তৎপরতা লক্ষ করা যায়। পরে যা তাই। আমরা আর বিচারহীনতা চাই না। এই ঘটনায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন থেকে সরে না যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সোমবার বেলা ১০টার দিকে শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্য এলাকায় জড়ো হতে শুরু করলে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস। সাড়ে ১০টায় সেখানে ছাত্রলীগের প্রতিবাদ সমাবেশ শুরু হয়। বিভিন্ন হলের ছাত্রলীগ কর্মী ছাড়াও ডাকসু ও হল সংসদের নেতা এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাতে যোগ দেন।
সমাবেশে ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য, ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক বক্তব্য দেন। আল নাহিয়ান জয় বলেন, মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেলা ১১টায় মানববন্ধন হবে। এর আগে রোববার দিবাগত রাতে ক্যাম্পাসে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ ও সমাবেশ করে ছাত্রলীগ। হাসপাতালে ভুক্তভোগী ছাত্রীকে দেখতে যান তারা।
এদিকে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতার্মীরা। সমাবেশের আগে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন ছাত্রদলের নেতকর্মীরা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে শেষ হয়। সেখানে ধর্ষণের প্রতিবাদ করতে গিয়ে নেতাকর্মীরা সরকারেরও সমালোচনা করেন।
কুর্মিটোলায় সড়ক আটকে ঢাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় অপরাধীদের বিচার ও শাস্তির দাবিতে রাজধানীর কুর্মিটোলায় ঘটনাস্থলের সামনে মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
রোববার বেলা ৩টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বাসে করে শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে আসেন। তারা ব্যানার নিয়ে মানববন্ধন করেন। পরে তারা সড়ক অবরোধ করে অবস্থান নেন। এ সময় তাদের অনেকে রাস্তায় শুয়ে পড়েন। দিতে থাকেন বিভিন্ন প্রতিবাদী স্লোগান। এভাবে প্রায় এক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন তারা। এখান থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ধর্ষককে গ্রেফতারের জন্য আলটিমেটাম দেয়া হয়।