দুষ্টুমি ছাড়াতে শিশু সাগরের দু’পায়ে লোহার বেড়ি

চুয়াডাঙ্গা বেলগাছি রেলগেটের নিকট ওয়েল্ডিং দোকানে বুকফাটা কান্না

শামসুজ্জোহা রানা: ১১ বছর বয়সী শিশু সাগরের দু’পায়ে বিদ্যুত শক্তি প্রয়োগে ঝালাইকরা বেড়ি পরিয়ে ঘরে বন্দি করে রাখা হয়েছে। ওয়েরিংয়ের দোকানে নিয়ে পায়ে যখন বেড়ি পরানো হয় তখন আগুনে পায়ের অংশ ঝলসে যায়। এসময় বুকফাটা আর্তনাদে চমকে ওঠে আশপাশের মানুষ। ঘটনাটি ঘটে গতকাল রোববার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের বেলগাছি রেলগেটের অদূরে।
শিশু সাগরের দু’পায়ে ওয়েল্ডিংয়ের দোকানে বিদ্যুত শক্তি কাজে লাগিয়ে বেড়ি পরানোর সময় ঝলসে যাওয়া হৃদয়বিদারক দৃশ্য একজন ভিডিও করেন। ভিডিওটি গড়ানোর সাথে সাথে অনেকের ফোনেই ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে প্রতিবেদক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করতে এলাকায় সরেজমিনে গেলে এলাকাবাসী বলেছেন, শিশু সাগর বেলগাছি মুসলিমপাড়ার আলমসাধু চালক আকবর আলীর ছেলে। মায়ের নাম শিউলী ওরফে পাখি। এদের সন্তান সাগর দুর্দান্ত দুষ্টু। কারো কোনো কথাই শোনে না। মা-বাবার একেবারেই বেয়াড়া। অতোটুকু বয়সে ওর দুষ্টুমি থামাতে না পেরে এর আগেও ওর পিতা একবার পায়ে বেড়ি দিয়ে ঘরে বন্দি করে রেখেছিলেন। কিছুদিন পর বেড়ি খুলে দেয়া হলে সাগর আবারও অসহনীয় দুষ্টুমি শুরু করে। শুধু কি নিকটজনদের সাথে দুষ্টুমি? যেখানে যায় সেখানেই উৎপাত করতে থাকে। ফলে যে সেই ওকে মারপিট করে। অন্যের হাতে ঘুরে ফিরে মারপিট খাচ্ছে দেখে অগত্যা ওর পিতা আকবর ছেলে সাগরের পায়ে আবারও বেড়ি পরিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেন। গতকাল রোববার দুপুরে যখন বেলগাছি রেলগেটের জাহিদুল ইসলামের ওয়েল্ডিং দোকানে নিয়ে বেড়ি পরানো হয় তখনই ঘটে বিপত্তি। পায়ের অংশ ঝলসে গেলে এলাকায় বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ঝড় ওঠে।
সন্ধ্যায় আকবর আলীর বাড়ি গিয়ে দেখা গেছে শিশু সাগরের দু’পায়ে বেড়ি। বেড়ির পাশেই লাগানো হয়েছে সিলক্রিম। চোখে মুখে অতঙ্কের ছাপ। তোমাকে কেনো বেড়ি পরিয়েছে? এ প্রশ্ন করতেই শিশু সাগর ভয়ে জড়সড়ো হয়ে দরজার দিকে তাকায়। পরে ওর মা জানান, ছেলে এতোটাই বদ যে কিছুতেই বসে রাখা যায় না। সকালে আলামিন নামের একজন ওকে খুব মেরেছে। অপবাদও দিয়েছে। সব কিছু শুনে ওর আব্বা ওর পায়ে বেড়ি পরিয়ে দিয়েছে।
মা হয়ে সন্তানের এ দশা মেনে নিতে আপনার কষ্ট হচ্ছে না? এ প্রশ্নের জবাব না দিয়ে মা শিউলী ওরফে পাখি যেন তার অসহায়ত্বটাই মেলে ধরেন। প্রতিবেশীদের একজন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, ছেলে যে অতো বদ হবে তা কে জানতো!