প্রবাসী আয়ে নতুন রেকর্ড বাংলাদেশের

প্রবাসী আয়ে নতুন রেকর্ড গড়লো বাংলাদেশ। সদ্য বিদায়ী ২০১৯ সালে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ ১৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে এ নতুন রেকর্ড গড়েছে। এর অর্থ দাঁড়ায় গত বছর প্রবাসীরা যে পরিমাণ অর্থ পাঠিয়েছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বছরে এতো পরিমাণ প্রবাসী আয় আগে কখনো আসেনি। রফতানি কমে যাওয়ার মধ্যে এ তেজি রেমিট্যান্সপ্রবাহ অর্থনীতিতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি ডলারের বিপরীতে টাকার দর স্থিতিশীল রাখতেও সহায়তা করেছে বলে বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন। প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থ বিদেশ থেকে বৈধ উপায়ে পাঠানো গেলে, তাতে দেশের উন্নয়নের প্রবাসীদের ভূমিকা যে বাড়ে- তা বলার অপেক্ষা রাখে না। নতুন বছরে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য রেমিট্যান্স রেকর্ডের এ খবরটি নিঃসন্দেহে স্বস্তিকর।
তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে বিভিন্ন দেশ থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা এক হাজার ৮৩৩ কোটি ডলার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়েছেন। ২০১৮ সালের তুলনায় এর পরিমাণ ২৭৮ কোটি ডলার বা ১৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ বেশি। এর আগে এতো বড় অংকের রেমিট্যান্স কোনো বছরে আসেনি। প্রণোদনা কার্যকরের পর শেষ ৬ মাসে রেমিট্যান্স বেশি বেড়েছে। শেষ ৬ মাসে এসেছে ৪৮ কোটি ডলার। জানা যায়, গত বছরের জুলাই থেকে ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা, ডলারের দর বৃদ্ধি, খোলাবাজারের সঙ্গে ব্যাংকিং চ্যানেলের দরের পার্থক্য কম থাকাসহ নানা কারণে প্রবাসী আয়ের এ উন্নয়ন। অন্যদিকে এজেন্ট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিংসহ বিভিন্ন উপায়ে টাকা নেয়ার সুযোগও রেমিট্যান্স বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। কোনো ঝামেলা ছাড়াই সুবিধাভোগীকে প্রণোদনার অর্থ দেয়ার ব্যবস্থা করতে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সুবিধাভোগী যাতে সহজে যেন বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিট্যান্সের অর্থ নিতে পারেন এ লক্ষ্যে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে সরাসরি বিতরণের সীমা ৩০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। একবারে ১৫০০ ডলার পর্যন্ত অর্থ পাঠালে কোনো প্রশ্ন ছাড়াই প্রণোদনার অর্থ সুবিধাভোগীকে দিতে বলা হয়েছে। এতে স্পষ্ট হয়েছে, সরকারের সঠিক পরিকল্পনা ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন ঘটানো গেলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ত্বরান্বিত হওয়াটাও সহজ।
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য মতে, রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে প্রণোদনা। সরকারের দূরদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে অনেকে এখন ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন। ফলে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ইতিবাচক এ ধারা অব্যাহত রাখতে এ ধরনের প্রণোদনাও চালু রাখা উচিত বলেই তারা মনে করেন। সাধারণভাবে প্রতিবছরই রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কের ওপরে থাকে। তবে ২০১৫ সাল থেকে টানা তিন বছর কমে যায় রেমিট্যান্সপ্রবাহ। বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তি তৈরি হয় সরকারে। পরে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যালোচনায় উঠে আসে, মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে সহজে হুন্ডি, দীর্ঘদিন ধরে টাকার দর এক জায়গায় স্থিতিশীল থাকাসহ বিভিন্ন কারণে রেমিট্যান্স কমে আসার বিষয়টি। তবে অবৈধ হুন্ডি ঠেকাতে নানা উদ্যোগসহ বিভিন্ন কারণেই পর্যায়ক্রমে রেমিট্যান্স বেড়েছে। যে কারণে রফতানি কমলেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আবার ৩২ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে বিদায়ী বছরে।
বলাই বাহুল্য, রেমিট্যান্স ছাড়া অর্থনীতির অন্য অনেক সূচকের গতি কমে গেছে। গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে রফতানি আয় কমেছে ১৩০ কোটি ডলার বা ৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ। রাজস্ব আয়েও লক্ষ্যমাত্রার অনেক নিচে আছে সরকার। গত অক্টোবর পর্যন্ত রাজস্ব আয়ে মাত্র ৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ অবস্থার পরিবর্তন না ঘটলে তা সামষ্টিক প্রবৃদ্ধির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সংগত কারণেই বিষয়টি নিয়ে দেশের নীতি-নির্ধারকদের এখনই সতর্ক হওয়া জরুরি বলেও তারা মনে করেন।
প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স আমাদের জাতীয় অর্থনীতির সিংহভাগ পূরণ করে থাকে। ফলে এ ধারা অব্যাহত রাখতে শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ওপর জোর দিয়ে নতুন শ্রমবাজারের দিকে নজর দিতে হবে। পাশাপাশি যেসব দেশে বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মরত, তাদের দেখভালের ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে। বিপুল জনসংখ্যার এ দেশে, জনগণের কর্মসংস্থানের ওপর গুরুত্ব দেয়ার কোনো বিকল্প থাকাও উচিত নয়।