ঢাকা সিটি নির্বাচনে লড়াইয়ে তাপস-ইশরাক আতিক-তাবিথ

দক্ষিণে ২৮ জনের প্রার্থিতা বাতিল : উত্তরে এক মেয়রসহ ১৮ জনের প্রার্থিতা বাতিল

স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে প্রার্থিতা টিকে গেল হেভিওয়েট চার জন প্রার্থীর। মূলত উত্তরে আওয়ামী লীগ মনোনীত মো. আতিকুল ইসলাম আতিক, বিএনপির তাবিথ আউয়াল এবং দক্ষিণে আওয়ামী লীগের ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এবং বিএনপির ইশরাক হোসেনের মধ্যে ভোটের লড়াই হবে। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে দুই সিটিতে মেয়র পদে জমা দেয়া ১৪ জনের মধ্যে ১৩ জনের প্রার্থিতা টিকেছে। উত্তর সিটিতে সংসদের বিরোধী দল জাপার প্রার্থী জিএম কামরুল ইসলামের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে। নির্বাচনী এলাকার ভোটার না হওয়ায় উত্তরের রিটার্নিং অফিসার মো. আবুল কাসেম জাপা প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করেন। এ সময়ে তিনি জাপা প্রার্থীর উদ্দেশে বলেন, আপনার মনোনয়নপত্র আমরা দেখেছি। আপনি সিটি করপোরেশন এলাকার ভোটার নন। এটা আমরা অনেকবার দেখেছি। এ কারণে আপনার মনোনয়নপত্র আমরা গ্রহণ করতে পারছি না।
প্রতিক্রিয়ায় জাপার প্রার্থী বলেন, আমি প্রথমবারের মতো মেয়র পদে প্রার্থী হতে এসেছিলাম। এটা আমার জন্য খুব দুঃখজনক। আমি ডিওএইচএস এলাকায় থাকি বলে আমার মনোনয়ন বাতিল করা হলো। আমার যে ভোটার তালিকা আছে, দুই নম্বর ওয়ার্ড এবং সিটি করপোরেশন দেখানো হয়েছে। সেহেতু আমি যোগ্য ভোটার হিসেবে জমা দিয়েছি। এখন আমি আইনের সহায়তা নেবো। আমি অবশ্যই আইনি প্রক্রিয়ায় যাবো। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত আপিল করা যাবে। আপিল কর্তৃপক্ষ হিসেবে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারকে নিয়োগ করেছে নির্বাচন কমিশন।
উত্তর সিটিতে ছয় মেয়র প্রার্থীসহ বাছাইয়ে ৪৫২ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা হয়েছে। মেয়র পদে সাত জনসহ ৪৭০ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। এদের মধ্যে সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৩৭৪ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৮৯ জন মনোয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। মেয়র পদে একজন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৫ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ২ প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। বাতিলকৃত কাউন্সিলররা হলেন, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত কাউন্সিলর নারগিস বেগম ও নাজমা কবির। সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২নং ওয়ার্ডের মো. মনির হোসেন, ৩নং ওয়ার্ডের মো. জাকির হোসেন, ৫নং ওয়ার্ডের মো. রুহুল আমিন, ৮নং ওয়ার্ডের সেলিনা খান, ৯নং ওয়ার্ডের মো. আমজাদ হোসেন, ১১নং ওয়ার্ডের রেজাউল ইসলাম, ১৫নং ওয়ার্ডের মো. হাফিজুর রহমান, ১৭নং ওয়ার্ডের ফরিদ উদ্দিন মৃধা, ২৫নং ওয়ার্ডের মোস্তফা জামান মুন্সী, ২৬নং ওয়ার্ডের মো. নবী সোলাইমান ভুঁইয়া, ৩০নং ওয়ার্ডের মো. নাছির উদ্দিন, ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের মো. হুমায়ুন কবীর, ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের মো. মেজবাহ উদ্দিন (টুটুল), ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের মো. দেলওয়ার হোসেন এবং ৫২ নম্বর ওয়ার্ডের মির্জা মোহাম্মদ ইলিয়াস।
উত্তরে মেয়র পদে বৈধ ছয় প্রার্থী হলেন পিডিপির শাহীন খান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর ফজলে বারী মাসউদ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলাম, বিএনপির তাবিথ আউয়াল, সিপিবির সাজেদুল হক ও এনপিপির আনিসুর রহমান দেওয়ান।
বৈধ প্রার্থী ঘোষণা প্রাথমিক বিজয়-তাবিথ: ঢাকা উত্তর নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা কর্তৃক বৈধ প্রার্থী হিসেবে ঘোষণাকে দলের প্রাথমিক বিজয় বলে জানিয়েছেন বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত জাতীয় স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউট (এনআইএলজি) ভবনে উত্তর সিটির মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে তিনি এ কথা জানান। তিনি বলেন, বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত অনেক তথ্য পেয়েছি। সরকারের অনেক সংস্থা তড়িঘড়ি করে অনেক চেষ্টা করেছিলো কোনো খুঁত বের করার জন্য। আমাকে ঋণখেলাপি বলে প্রচার করার চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু তারা পারেননি। আমরা আইন ও প্রচার বিধি মেনেই নির্বাচনি প্রচারে আগাবো। আমি আশাবাদী, আগামী দিনগুলোতে নির্বাচন কমিশনে যে অভিযোগগুলো রেখেছি, সেগুলো সংলাপের মাধ্যমে সমাধান হবে।
সিপিবির প্রার্থী আহম্মেদ সাজ্জাদুল হক বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড মানে আওয়ামী লীগ আর বিএনপি নয়। যে টাকা জামানত ওয়ার্ড কমিশনারদের জন্য করেছে, এক জন সৎ মানুষের পক্ষে এ নির্বাচনে অংশ নেয়া কঠিন। আমাদের সে দাবি তারা গ্রাহ্য করেনি। রিটার্নিং অফিসার বলেন, আমাদের নির্বাচন কমিশনের এ ক্ষমতাও আছে, আচরণবিধি বেশি লঙ্ঘিত হলে কমিশনকে লেখবো। আর কমিশনের আপনাদের মনোনয়ন বাতিল করার ক্ষমতা আছে।
দক্ষিণে সাত মেয়র প্রার্থীসহ ৫৪১ জনের মনোনয়ন বৈধ: দক্ষিণ সিটি নির্বাচনের সাত মেয়র প্রার্থীসহ বাছাইয়ে ৫৪১ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা হয়েছে। আর বাতিল হয়েছে ২৮ জনের মনোনয়ন। ডিএসসিসির রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন দিনভর বাছাই শেষে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মেয়র পদে সাত জনসহ ৫৬৯ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। এদের মধ্যে সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৪৬০ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ১০২ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৬ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে দুই প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
দক্ষিণে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস, বিএনপির ইশরাক হোসেন, জাতীয় পার্টি-জাপার হাজী মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, ইসলামী আন্দোলনের মো. আবদুর রহমান, এনপিপির বাহরানে সুলতান বাহার, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. আকতার উজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লা ও গণফ্রন্টের আব্দুস সামাদ সুজন।
আচরণবিধি মানার অঙ্গীকার তাপস-ইশরাকের: দক্ষিণ সিটি মেয়র প্রার্থীদের বৈধতা নিশ্চিত হওয়ার পর পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ভোট চান আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস ও বিএনপির মো. ইশরাক হোসেন। এ সময়ে নিজেরা নির্বাচনি আচরণবিধি মেনে চলার অঙ্গীকার করে নিজ দলের নেতাকর্মীদের তা মেনে চলার অনুরোধ জানান। ফজলে নূর তাপসকে ‘বড়ো ভাই’ সম্বোধন করেন ইশরাক। রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, আসছে ৩০ জানুয়ারির নির্বাচন ইসি সুষ্ঠু ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করবে বলে আশা করছি। আমি মনে করি সবার অংশগ্রহণে এটি উৎসবমুখর নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, যদি তীব্র শীতও থাকে আমি আপনাদের অনুরোধ করবো ভোরে ঘুম থেকে উঠে নিজের ভোটকেন্দ্রে এসে আপনাদের সেবককে নির্বাচন করবেন। আমার দল এবং আমার নির্বাচনি কার্যক্রমে যারা অংশ নিবেন সবাইকে অনুরোধ করব কমিশনের সব নিয়মকানুন মেনে প্রচারণা চালাতে। এসময় শেখ ফজলে নূর তাপসকে ‘বড়ো ভাই’ সম্বোধন করে বিএনপির প্রার্থী মো. ইশরাক হোসেন জানান, আমার বড়ো ভাই পাশে রয়েছেন। তিনি আমার প্রতিদ্বন্দ্বী। আগামী ৩০ জানুয়ারি নির্বাচনে ভোটাররা অবশ্যই ভোটকেন্দ্রে আসবেন। এটি আপনাদের অধিকার, আপনারা প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে প্রার্থী নির্বাচন করবেন। আমি প্রতিজ্ঞা করছি নির্বাচনি আচরণবিধি মেনে চলবো। তফসিল অনুযায়ী, আপিল নিষ্পত্তি করতে হবে ৮ জানুয়ারির মধ্যে। প্রার্থিতা প্রত্যাহার ৯ জানুয়ারি। প্রতীক বরাদ্দ ১০ জানুয়ারি। আর ভোটগ্রহণ হবে ৩০ জানুয়ারি।
বাতিল ২৮ কাউন্সিলর প্রার্থী: ঋণখেলাপির কারণে প্রার্থিতা অবৈধ হয়েছে ১২ নম্বর ওয়ার্ডের খ ম মামুন রশিদ, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইলিয়াছুর রহমান, ২২ নম্বর ওয়ার্ডের মো. রিন্টু, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের মুস্তাফিজুর রহমান, ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদ রায়হান, ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন, ৬১ নম্বর ওয়ার্ডের মো. পারভেজ চৌধুরীর। টিন সার্টিফিকেট, আয়কর রিটার্ন, ফরম পূরণে ত্রুটি-বিচ্যুতিসহ বিভিন্ন কারণে বাতিল হয়েছে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মো. বাবুল ও মোহাম্মদ শওকত আলী ভূঁইয়া, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুল মোতালেব, ২০ নম্বর ওয়ার্ডের মো. মনোয়ার হোসেন মনু, ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুর রহিম বাবু, আনোয়ার পারভেজ বাদল, শাহ আলম লাকি, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের নাজিম উদ্দিন নাজু, ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদ ইলিয়াস, ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদ এরশাদ আলী, ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের আবু সাঈদ, ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডের আপেল মাহমুদ, ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের মো. কোরবান আলী ও মো. কালু মিয়া, ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডে মো. আতাবর রহমান ও আব্দুল্লাহ আল মোমেন, ৬১ নম্বর ওয়ার্ডের এসএম সোহেল ও বদরুদ্দিন আহমেদ, ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডের সেলিম রেজা, ৬৯ নম্বর ওয়ার্ডের হোসেন মিয়ার প্রার্থিতা। এছাড়া আয়কর রিটার্নের কাগজপত্র জমা না দেয়ার কারণে সংরক্ষিত ৪ নম্বর নারী কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে ইসরাত সরকার ঝুনা ও মল্লিকা জামান মুক্তার।