লোকটির গলায় শিকল বাঁধা। সেই শিকল ধরে আবার টেনে নিয়ে যাচ্ছেন এক তরুণী। আশপাশের মানুষ ছবি তোলায় ব্যস্ত। অনেকে এটাকে হিউম্যান ডগ বা মানব কুকুর বলছেন। কিন্তু কেন তিনি এভাবে হেঁটে যাচ্ছেন? তা নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। এই চিত্র দেখা গিয়েছে রাজধানীর হাতিরঝিলে। যে ব্যক্তি হিউম্যান ডগ সেজে হাঁটছেন তার নাম টুটুল চৌধুরী। আর যে নারী তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি সেঁজুতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পেইন্টিং ও ড্রয়িংয়ের শিক্ষার্থী। আসলে এটি একটি ‘পারফর্মিং আর্ট’। বাংলাদেশে এ ধরনের আর্ট দেখা যায় না বললেই চলে। পশ্চিমা ধারণার এই পারফর্মিং আর্ট প্রথম দেখা যায় অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায়। ১৯৬৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশ্য রাস্তায় ভ্যালি এক্সপোর্ট ও পিটার উইবেল এই পারফর্মিং আর্টে অংশ নেন। আর হাতিরঝিলের রাস্তায় পারফর্মিং আর্টের শিল্পীরা হলেন টুটুল ও সেঁজুতি। সেঁজুতি তার আর্টকে ‘সমাজতাত্ত্বিক’ ও ‘আচরণমূলক’ কেস স্ট্যাডি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তার মতে এই পারফর্মিং আর্টের উদ্দেশ্য হলো- কার্টুনে যেমন বিভিন্ন প্রাণীকে মানুষের মতো কথা বলা ও আচরণগতভাবে দেখানো হয় তেমনি এখানে মানুষকে প্রাণী চরিত্রে দেখানো হয়েছে। সেঁজুতি বলেন, এই ছবিতে একজন পুরুষের গলায় রশি বেঁধে টেনে নিয়ে যাচ্ছে এক নারী। এটা আমাদের নৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বা আরও ভালো কোনও সামাজিক অবস্থার চিত্র দেখায় না। বরং সমাজ আমাদের ওপর যে সিস্টেম চাপিয়ে দিয়েছে সেটাই ফুটে উঠেছে এই আর্টে। আমরা যে কাজটা করেছি এই কাজের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি এবং এই কাজটাকে সাধারণ মানুষ কীভাবে নিয়েছে সেটাই দেখতে চেয়েছি। এ বিষয়ে অনেকে বলছেন, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলে ট্যাবু নিয়ে একটি প্রোগ্রাম আছে। সেখানে কয়েকটি এপিসোডে এ ধরণের হিউম্যান ডগ দেখানো হয়েছে। যাকে আধুনিক দুনিয়ায় পুরাতন ক্রীতদাস প্রথাও বলা যায়। আপনি মানুষ কিনে তাকে দিয়ে যা ইচ্ছে, তাই করাতে পারেন। আধুনিক সভ্যতায় এটাকে ‘সাইকো অসভ্যতা’ও বলা যেতে পারে।