দামুড়হুদায় কুকুরের জলাতঙ্ক প্রতিষেধক টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষে অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত

জলাতঙ্ক একটি ভয়ঙ্কর মরণব্যাধি। এ রোগের মৃত্যুর হার শতভাগ। দামুড়হুদায় কুকুরের জলাতঙ্ক প্রতিষেধক টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষে অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত

 

দামুড়হুদা ব্যুরো : জলাতঙ্ক একটি ভয়ঙ্কর মরণব্যাধি। এ রোগের মৃত্যুর হার শতভাগ। সুতরাং এটাকে কোনভাবেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। এই রোগটি মূলত কুকুরের কামড় বা আঁচড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। এ ছাড়াও বিড়াল, শিয়াল, বেজী, ও বানরের কামড় বা আঁচড়ের মাধ্যমেও ছড়ায়। ২০১৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন সূত্রে বলা হয়েছে পৃথিবীর কাথাও না কোথাও প্রতি ১৫ মিনিটে ১ জন করে এবং প্রতিবছর ৫৯ হাজার মানুষ জলাতঙ্ক রোগে মারা যায়। বাংলাদেশে জলাতঙ্ক জনস্বাস্থ্যের জন্য অন্যতম হুমকি স্বরূপ। জলাতঙ্ক রোগে মৃত্যুহারের দিক থেকে বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। প্রতিবছর ৪লক্ষ মানুষ কুকুর, বিড়াল, শিয়াল, বানরসহ অন্যান্য প্রাণির কামড়ে আক্রান্ত হয়। ২০২২ সালের মধ্যে দেশ থেকে জলাতঙ্ক নির্মূলের লক্ষ্যে ব্যাপকহারে কুকুরের টিকাদান কার্যক্রম সফল করতে অবহিতকরণ সভা করা হয়েছে।
এ উপলক্ষে গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল শুভ’র সভাপতিত্বে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন দামুড়হুদা উপজেলা চেয়ারম্যান আলি মুনছুর বাবু। বিশেষ অতিথি ছিলেন দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম মুনিম লিংকন, দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি সুকুমার বিশ্বাস, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল আলম ঝন্টু, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সাহিদা খাতুন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মশিউর রহমান, ঢাকা থেকে আগত স্বাস্থ্য অধিদফতর মহাখালী ঢাকার এমডিভি কনসালটেন্ট মো. জিন্নুরাইন আলী, ঢাকা সিডিসি-এমডিভির সুপার ভাইজার হযরত আলী সজিব, উপজেলা দূর্ণীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি আব্দুল গফুর, ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন, আজিজুল হক, খলিলুর রহমান ভুট্টু, প্রভাষক শরীফুল আলম মিল্টন, শফিকুল ইসলাম, শাহ মোহা: এনামুল করীম ইনু, দর্শনা পৌরসভার প্যানেল মেয়র রবিউল হক সুমন, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শেখ আব্দুল হাদী, মুন্সিপুর বিওপির কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার মতিউর রহমান, দর্শনা বিওপির কোম্পানি কমান্ডার নায়েক সুবেদার জহির উদ্দীন বাবুর, দামুড়হুদা প্রেসক্লাব সভাপতি এম, নুরুন্নবী, সাংবাদিক সমিতির সভাপতি বখতিয়ার হোসেন বকুল, সেনেটারি ইন্সপেক্টর জামাত আলী প্রমূখ।
সভায় মাল্টিমিডিয়া প্রোজেক্টরের মাধ্যমে জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত রোগীদের আচার-আচরণসহ কার্যক্রম বিষয়ে অবহিত করেন স্বাস্থ্য অধিদফতর মহাখালী ঢাকার এমডিভি কনসালটেন্ট মো. জিন্নুরাইন আলী। সভায় আগামি ১১ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর উপজেলায় একযোগে কুকুরের জলাতঙ্ক প্রতিষেধক টিকাদান কার্যক্রম পরিচালিত হবে বলে জানান দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল শুভ। তিনি জানান, অভয়ারণ্য ওয়েলফেয়ার বাংলাদেশ নামক একটি পরিবেশবাদী বেসরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে ২০১৪ সালে মহামান্য হাইকোর্টে একটি রীট আবেদনের প্রেক্ষিতে কুকুর নিধন ও ভ্যাসেকটমি না করার জন্য আদেশ দেন মহামান্য হাইকোর্ট।
আদালতের এমন আদেশের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য বিভাগ ২০১১ সালে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষেধক টিকাদান কার্যক্রম গ্রহন করে। ইতোমধ্যেই দেশের ৪৪ টি জেলায় মোট ১৩ লাখ কুকুরকে জলাতঙ্ক প্রতিষেধক টিকা দেয়া সম্পন্ন হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যান মতে দেশে মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি। সে সূত্রে দেশে কুকুরের সংখ্যা ১৬ লাখ। সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গা জেলার ৪ উপজেলায় একযোগে কুকুর ধরে ধরে জলাতঙ্ক প্রতিষেধক টিকাদান কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রাণিসম্পদ দফতর যৌথভাবে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে বলেও স্বাস্থ্য বিভাগ। কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে ৫২ জন স্পেশাল ডগ ক্যাচার কাজ করবে। জলাতঙ্ক হল ভাইরাস জনিত এক ধরনের জুনোটিক রোগ। রোগটি প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায়। সাধারণত রেবিজ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত প্রাণির কামড় বা আঁচড় অথবা লালার মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে থাকে। প্রথমে স্পেশাল ডগ ক্যাচারদের সাহায্যে কুকুর ধরা হবে। এরপর জলাতঙ্ক প্রতিষেধক টিকা দেয়া হবে। টিকা দেয়ার পর প্রতিটি কুকুরের একটি নির্দিষ্টস্থানে রঙ লাগিয়ে কালার করে দেয়া হবে। সেই সাথে প্রতিটি কুকুর মার্কিং করা হবে। তিনি আরও জানান, বছরে একটি করে ডোজ দেয়া হবে। এভাবে ৩ বছরে মোট ৩ টি ডোজ দেয়া হবে। একটি কুকুরের ৩ টি ডোজ কমপ্লিট হয়ে গেলে ওই কুকুরের কামড়ে জলাতঙ্ক রোগ হবেনা। দামুড়হুদা উপজেলায় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য থাকবে ৫২ জন স্পেশাল ডগ ক্যাচার। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের ২৬ জন এবং স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ৫২ জন কর্মসূচি বাস্তবায়ন কাজে নিয়োজিত থাকবেন।
একটি এলাকায় ৫ দিনব্যাপি কুকুরের টিকাদান কর্মসূচি পরিচালিত হবে। প্রতিটি টিমে থাকবে ২ জন স্পেশাল ডগ ক্যাচার, ১ জন স্থানীয় কুকুর ধরার লোক, ১ জন টিকাদানকারী, ১ জন থাকবে ডাটা কালেক্টর এবং ১ জন ভ্যান পোর্টার থাকবেন। ৬ সদস্যের দল প্রতিটি স্থানে শতকরা ৭০ ভাগের অধিক পোষা ও পথ কুকুরকে ধরে জলাতঙ্ক প্রতিষেধক টিকা প্রদান করবেন। টিকাদানের ফলে কুকুরের মধ্যে হার্ড ইমিউনিটি তৈরী হবে এবং এলাকায় জলাতঙ্ক রোগের ঝুঁকি হ্রাস পাবে। বর্তমানে চলমান কার্যক্রমের পাশাপাশি কুকুরের কামড়ে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা চালু রেখে ব্যাপকহারে কুকুরের টিকাদান কার্যক্রমের মাধ্যমে সমগ্র দেশে ৩ রাউন্ড টিকাদান সম্পন্ন হলে ২০২২ সালের মধ্যে জলাতঙ্কমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব বলেও জানান তিনি।

Leave a comment