স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেফতার অতিরিক্ত সচিব

স্টাফ রিপোর্টার: স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়ে জাতীয় জরুরি সেবার হটলাইন ‘৯৯৯’-এ ফোন করেন ডা. ফাতেমা জাহান বারী। নির্যাতন থেকে বাঁচতে দ্রুত উদ্ধারের আকুতি জানান তিনি। গতকাল শনিবার রাতে ডা. ফাতেমার এমন কল পেয়ে ‘৯৯৯’ থেকে তার নিকটস্থ রমনা থানাকে জানানো হয়। এরপর রাত সাড়ে ৭টার দিকে পুলিশের একটি টিম ১৮, বেইলি রোডের সুপিরিয়র সরকারি কোয়ার্টারে অভিযান চালিয়ে আহতাবস্থায় ডা. ফাতেমাকে উদ্ধার করে। তাকে রাতেই ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি)। এরপর ফাতেমা (৩৯) তার স্বামী অতিরিক্ত সচিব ডা. জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে রমনা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। মামলার পর সরকারি কোয়ার্টার থেকে জাকির হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জাকির হোসেন বর্তমানে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত রয়েছেন।
জানা গেছে, অতিরিক্ত সচিবের গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায়। তার স্ত্রীর গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে। এই দম্পতির কোনো সন্তান নেই। গ্রেফতারের পর অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে অতিরিক্তি সচিব বারবার বলছেন, ‘কোনো প্রশ্নের জবাব দিতে তিনি প্রস্তত নন।’
রমনা থানার ওসি মনিরুল ইসলাম জানান, ‘৯৯৯’-এ ফোন করে ডা. ফাতেমা জানিয়েছেন তাকে বাসার ভেতরে মারধর করা হচ্ছে। এরপর পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। তার মুখসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ফাতেমা পুলিশকে জানান, সপ্তাহখানেক আগেও জাকির হোসেন তাকে মারধর করেন। এতে তার শরীরে ৯টি সেলাই দিতে হয়। তখন লোকলজ্জার কারণে তিনি বিষয়টি পুলিশকে জানাননি। শনিবার ফের তার ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। উপায়ান্তর না দেখে তিনি ‘৯৯৯’-এ ফোন করতে বাধ্য হয়েছেন।
নির্যাতন চালানোর কারণ হিসেবে ফাতেমা পুলিশকে জানিয়েছেন, এরই মধ্যে তিনি দুটি শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করেছেন। সেখানে কাজ করা বাবদ বেশ কিছু টাকা তিনি পেয়েছেন। অনেক দিন ধরে ওই টাকা জাকির হোসেন চেয়ে আসছিলেন। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে বারবার তার ওপর নির্যাতন চালান তার স্বামী।
নির্যাতনের নেপথ্যে অর্থ ছাড়া অন্য কোনো ঘটনা রয়েছে কি-না জানতে চাইলে পুলিশের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, ফাতেমা যে অভিযোগ করেছেন প্রাথমিকভাবে সেই তথ্যের বাইরে অন্য কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। পুলিশ জানায়, এক সময় রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালের চিকিৎসক ছিলেন ডা. ফাতেমা। সেই চাকরি ছেড়ে বর্তমানে স্বাস্থ্য অধিদফতরে কর্মরত আছেন তিনি।
গতকাল শনিবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ওসিসিতে ভর্তি রয়েছেন ডা. ফাতেমা। সেখানে কাউকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। রেজিস্ট্রারে তার ঠিকানায় লেখা আছে ১৮ বেইলি রোড। ফাতেমার অভিভাবক হিসেবে আব্দুল বারী নামে একজনের নাম ও মোবাইল নম্বর সেখানে ছিলো। তবে আব্দুল বারীর নম্বরে ফোন করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশের রমনা বিভাগের সহকারী কমিশনার এসএম শামীম বলেন, মামলার পরপরই অতিরিক্ত সচিবকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রোববার তাকে আদালতে নেয়া হবে।