মুজিববর্ষে প্রতিটি ঘরে আলো জ্বলবে : প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিববর্ষ উদযাপনকালে সারাদেশের প্রত্যেক ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বালাবার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘শুধু পার্বত্য চট্টগ্রাম নয়, বাংলাদেশের একটি ঘরও অন্ধকার থাকবে না। প্রতিটি ঘরে আলো জ্বলবে। কাজের গতি বাড়বে, সময় বাড়বে। বিদ্যুতের আলোয় কাজ হবে।’ গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ৪টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধনকালে তিনি এসব বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সৌর বিদ্যুত সরবরাহ স্থাপনা, বিশ্বের ৭ম বৃহৎ ফোর টায়ার ন্যাশনাল ডাটা সেন্টার, ভ্রাম্যমাণ গবেষণা তরী এবং শিপিং করপোরেশনের ৫টি নতুন জাহাজসহ চারটি উন্নয়ন প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লক্ষ্য ছিলো এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা না হলে স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যে এই বাংলাদেশ উন্নত দেশ হতো। স্বাধীনতার পর পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্ত পরিবেশ ছিলো। কিন্তু ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর পার্বত্য চট্টগ্রাম অশান্ত হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, ’৯৬ সালে তার ক্ষমতায় আসার পর পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যার সমাধান এবং এর কারণ চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছিলো যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাটা রাজনৈতিক। কাজেই রাজনৈতিক পথেই তার সরকার এটি সমাধানের উদ্যোগ নেয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শান্তি চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ফিরে এসেছে। সেখানকার ১ হাজার ৮শ’ অস্ত্রধারী আত্মসমর্পণ করেছে। তাদের আমরা পুনর্বাসন করেছি। এক সময়ের অন্ধকার পার্বত্য চট্টগ্রামে এখন বিদ্যুতের আলো ছড়াচ্ছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামে মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ ছিলো। এখন সেখানে উন্নয়নের ঢেউ উঠেছে। সোলার বিদ্যুত ব্যবহারের ফলে সেখানে রাতদিন কাজ হচ্ছে। অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হচ্ছে। ঢাকার বেইলী রোডে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স নির্মাণসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিচ্ছিন্ন দ্বীপ বলে গ্রিড লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুত দেয়া সম্ভব না। এ কারণে আমরা সোলার প্যানেলের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামকে আলোকিত করেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার প্রতিহিংসার কারণেই দেড় যুগ আগে চুক্তি করেও নেদারল্যান্ডসের ‘টিউলিপ’ কোম্পানির কম্পিউটার না নেয়ায় সরকারকে ৩২ কোটি টাকা গচ্চা দিতে হয়েছিলো। শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুর নাতনি টিউলিপ সিদ্দিকের (বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানার মেয়ে) সঙ্গে কোম্পানির নামের মিল থাকায় খালেদা ওই কাজ করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী (১৯৯৬-২০০১) মেয়াদে তার সরকারের সময় কম্পিউটারের ওপর সব ট্যাক্স কমিয়ে দিয়ে কম্পিউটার শেখানোর ওপর গুরুত্ব দেয়ার কথা তুলে ধরেন। মেয়াদের শেষ দিকে নেয়া ওই প্রকল্পের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘এখানে একটা দুঃখজনক ঘটনা না বলে পারছি না। আমরা চাইলাম কম্পিউটার আমাদের স্কুলের ছেলে-মেয়েদের দেবো। আমার আগ্রহ দেখে নেদারল্যান্ডস গভর্নমেন্ট এগিয়ে এলো। তারা আমাকে বললো তারা আমাদের অর্ধেক দামে, অর্ধেক তারা অনুদান দেবে, অর্ধেক দাম আমরা দেবো। সেইভাবে দশ হাজার কম্পিউটার তারা আমাদেরকে দেবে। আমাদের সঙ্গে অন্যান্য সংস্থাও আসলো। তারাও অর্থ সহায়তা দিলো। এই কম্পিউটার কিনবো বলে নেদারল্যান্ডস সরকারের সাথে আমাদের চুক্তি হয়ে গেলো। তারা সমস্ত কিছু দেবে। সবকিছু ঠিক হয়ে গেলো, টাকা পয়সা দিয়ে দেয়া হলো। এর কিছুদিন পরই ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার বিদায় নিলে সরকারে আসে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা জানেন, নেদারল্যান্ডসের জাতীয় ফুল হচ্ছে টিউলিপ। টিউলিপ ফুলটা ওদের দেশে খুব ভালো হয়। খালেদা জিয়াকে বুঝালো আমরা যে কোম্পানির (কম্পিউটার) কিনবো, সেই কোম্পানির নাম টিউলিপ। এই টিউলিপ নাম নিয়ে হলো বিভ্রান্ত। কি বিভ্রাট? সেটা হলো খালেদা জিয়াকে বোঝানো হলো যে শেখ রেহানার মেয়ের নাম টিউলিপ, নেদারল্যান্ডসের ওই কোম্পানি, ওটার নামও টিউলিপ। যেহেতু এই কোম্পানির নাম টিউলিপ কাজেই ওদের থেকে কম্পিউটার নেয়া যাবে না। শুধুমাত্র এখানে অপরাধটা হলো শেখ রেহানার মেয়ের নাম টিউলিপ আর নেদারল্যান্ডের কোম্পানির নাম টিউলিপ। সেজন্য সেটা বন্ধ করে দিলো।’