হাইকোর্টের সামনে রণক্ষেত্র : ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ভাঙচুর

পুলিশের কাঁদানে গ্যাসে সমাবেশ ছত্রভঙ্গ : বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে বিএনপি কর্মীরা
স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপি নেতাকর্মীদের রাজপথে অবস্থান করা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলে নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। মঙ্গলবার রাজধানীর হাইকোর্টের সামনের সড়কে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার প্রজন্মের উদ্যোগে সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশ শেষে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম দল জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে মিছিল বের করে। মিছিলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ, শওকত মাহমুদ, গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ, শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাধারণ সম্পাদক সাদেক খানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। পুলিশের বাধা এড়িয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা সুপ্রিমকোর্টের গেটের কাছে সড়কে অবস্থান নেয়। এ সময় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সরিয়ে নেয়া হয়।
হাইকোর্টের প্রধান ফটক থেকে মাজার গেট পর্যন্ত অবস্থান নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা স্লোগান দেন। সেখানে অনেক নেতাকর্মী শুয়ে পড়েন। হাইকোর্টের আইনজীবীরাও কর্মসূচিতে অংশ নেন। খালেদা জিয়ার মুক্তি, পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে প্ল্যাকার্ড নিয়ে তারা নানা স্লোগান দেন। হাইকোর্ট এলাকাসহ আশপাশে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে পুলিশ তাদের সড়কে থেকে সরে যেতে বলে। এতে তারা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এ সময় পুলিশ বেশ ধৈর্যের পরিচয় দেয়। বারবার অনুরোধের পরও নেতাকর্মীরা সরে না যাওয়ায় পুলিশ কিছুটা মারমুখী হয়ে ওঠে। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়ে মারে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি কর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুঁড়লে ছত্রভঙ্গ হয়ে তারা পল্টনের দিকে চলে যায়। যাওয়ার সময় তারা সড়কে বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে।
এ প্রসঙ্গে ডিএমপির রমনা জোনের সহকারী কমিশনার শেখ মো. শামীম বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা রাস্তা দখল করে মিছিল করলে প্রথমে তাদের সরে যেতে বলা হয়। এক পর্যায়ে পুলিশের ওপর তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। যানবাহন চলাচল ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে রাস্তা থেকে তাদের সরিয়ে দেয়া হয়।
এর আগে সড়কে অবস্থানকালে আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, আমরা কোনো অসাংবিধানিক কাজ করছি না। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে হাজার হাজার নেতাকর্মী রাজপথে নেমেছেন। রাজপথই আমাদের ঠিকানা। যতক্ষণ পারি অবস্থান করব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আন্দোলন করার অধিকার আমাদের আছে। এটা সংবিধান বহির্ভূত নয়। বাধা না দিয়ে কর্মসূচি পালন করতে দিন। আপনাদের কাছ থেকে কোনো প্রকার উসকানি আশা করি না। তিনি আরও বলেন, রাস্তায় নামা অসাংবিধানিক নয়, আইনবিরোধীও নয়। জনগণ রাষ্ট্রক্ষমতার মালিক হওয়া সত্ত্বেও সবকিছু থেকে তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। এসব নিয়ে আমাদের আন্দোলন করার অধিকার আছে। জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আন্দোলন করার অধিকার আমাদের আছে।
খালেদা জিয়ার মুক্তি চাইলে রাজপথে নামতে হবে : বিএনপি, বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে ততক্ষণ পর্যন্ত রাজপথে হাজির হয়ে আন্দোলন করতে হবে। তিনি বলেন, আজ দেশের যে অবস্থা তাতে মুক্তিযুদ্ধের গৌরব ভূলুণ্ঠিত। মুক্তিযুদ্ধের সেই গৌরব ফিরিয়ে আনতে হলে এবং খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে চাইলে রাজপথে নামতে হবে। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মের উদ্যোগে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, অবৈধ সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে মুক্তিযোদ্ধা-জনতা সংহতি সমাবেশে ডা. জাফরুল্লাহ এসব কথা বলেন।
মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, কাদের গনি চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য দেন।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী আরও বলেন, বিচারপতিদের সাহস জোগানোর জন্য আমাদের একটাই কাজ করতে হবে- আর তা হলো আমাদের সবাইকে রাজপথে নামতে হবে। হাইকোর্টের চতুর্দিকে মানববন্ধন করে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়ার দাবি জানাতে হবে। তাহলে খালেদা জিয়া মুক্ত হবেন।
বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের বিক্ষোভে পুলিশের বাধা : খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের উদ্যোগে দুপুরে বার ভবনের সামনে সমাবেশ করে। সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে আইনজীবীরা সুপ্রিমকোর্ট থেকে বের হতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশ সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণের সব গেট বন্ধ করে দিলে আইনজীবীরা মাজার গেট এলাকায় অবস্থান করে কিছু সময় বিক্ষোভ করেন। এ সময় সমাবেশে বক্তব্য দেন আইনজীবী ফোরামের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, সুপ্রিমকোর্ট বারের সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন, ফোরামের সদস্য সচিব মো. ফজলুর রহমান, সুপ্রিমকোর্ট বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার, আবেদ রাজা, মনির হোসেন, আইয়ুব আলী আশ্রাফী ও আনিছুর রহমান খান প্রমুখ।
বার ভবন প্রাঙ্গণে খালেদা জিয়া মুক্তি আইনজীবী পরিষদ বিক্ষোভ সমাবেশ করে। অ্যাডভোকেট এসএম জুলফিকার আলী জুনুর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন অ্যাডভোকেট এম আমিনুল ইসলাম মুনির, শামসুল ইসলাম মুকুল, মো. মোসলেম উদ্দিন, ড. হামিদুর রহমান রাশেদ, আবুল কাশেম রাজু, সাঈদ হাসান বক্তিয়ার, একেএম মোক্তার হোসেন, হাসনা হেনা, সাবিনা ইয়াসমিন লিপি, শেখ সালাম, টিপু সুলতান, রবিউল হোসেন, আকবর হোসেন, শেখ আব্দুস সালাম, এমদাদুল বশির, ওয়ালিওল ইসলাম শুভ, মহীদ উদ্দিন জুবায়ের, মনিরুজ্জামান, রিপন আলী, ওবায়দুল ইসলাম ও রুবি চিশতি প্রমুখ।