মেহেরপুরে গবাদিপশুর ভাইরাসজনিত চর্মরোগে আতঙ্কিত খামারী

মেহেরপুর অফিস: অ্যানথ্রাক্স রোগের প্রাদুর্ভাব শেষ হতে না হতেই মেহেরপুর জেলায় নতুন রোগ হিসেবে দেখা দিয়েছে গবাদিপশুর ভাইরাসজনিত চর্মরোগ (লাম্পি স্কিন ডিজিজ)। রোগাক্রান্ত গরু নিয়ে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে জেলার তিন উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে চিকিৎসা নিয়েছে ৪২৮টি গরু। তবে এই হিসেবের বাইরেও বিভিন্ন গ্রামে প্রতিদিনই নতুন নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে গবাদিপশু। এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই বলে জানিয়েছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
গবাদিপশুর (গরু-মোষ) ভাইরাসজনিত চর্মরোগ (লাম্পি স্কিন ডিজিজ) জেলার বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। রোগটি শুধুমাত্র গরু ও মোষকে আক্রান্ত করে। বাংলাদেশে রোগটি নতুনভাবে আবির্ভূত হয়েছে। এ রোগের ভ্যাকসিনও বাংলাদেশে নেই; তাই চিকিৎসা দিতে পারছেন না প্রাণিসম্পদ বিভাগের চিকিৎসকরা। তবে এ রোগে মানুষ আক্রান্ত হয় না।
লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগটি মাছি, মশা, আঠালি ও ব্যবহৃত নিডল ও সিরিঞ্জ একাধিক বার ব্যবহারের মাধ্যমে রোগটি ছড়িয়ে পড়ে। রোগাক্রান্ত হলে গরুর দুধ উৎপাদন কমে যায়, গবাদিপশু দুর্বল হয়ে পড়ে, ওজন কমে যায়, চামড়ার গুনাগুন নষ্ট হয়ে যায়। নতুন এই রোগের প্রাদুর্ভাবে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে খামারি ও চাষিরা। গত ২ মাসে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে মেহেরপুর সদর উপজেলায় ১৯৭টি, গাংনী উপজেলায় ১৫৬টি ও মুজিবনগর উপজেলায় ৭৫টি গরু। তবে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা খামারিদের আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন ও সাবধানতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে এখনই এর প্রতিকার করতে না পারলে এ জেলার ২১০ টি দুগ্ধখামার ও গরু লালন পালনের ৪৩৫ টি খামার মালিক অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়বে।
মেহেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের দেয়া তথ্যানুযায়ী, লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগটি ১৯২৯ সালে প্রথম জাম্বিয়াতে দেখা যায়। এরপরে আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এ বছর এশিয়া মহাদেশের চিন ও ভারতের কিছু কিছু অঞ্চলে দেখা যায়।
সদর উপজেলার চকশ্যামনগর গ্রামের শাহাবুল ইসলাম জানান, তিনি চাষি মানুষ কৃষি কাজের পাশাপাশি বাড়িতে দুইটি গরু পালন করেন। বেশ কয়েকদিন আগে দেখেন একটি গরুর শরীরে চামড়া গোল গোল আকৃতিতে ফুলে উঠেছে। তারপর সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে আসলে চিকিৎসক জানান এটা ভাইরাসজনিত চর্মরোগ। এখনও এ রোগের তেমন কোনো চিকিৎসা আমাদের দেশে নেই। এখন এই গরুটি মারা গেলে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন এই চাষি।
গাংনী উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের গরু খামারি সুলতান মাহামুদ শান্ত জানান, তার খামারের আশেপাশে কয়েক জনের বাড়ির গরুর এ রোগ হয়েছে। তবে এ রোগ প্রতিকারে দ্রুত ভ্যানসিনের ব্যবস্থা না করলে বসত বাড়িতে পশুপালনকারী ও খামারিরা বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হবে।
মেহেরপুর সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নুর আলম জানান, এটি ভাইরাসজনিত চর্মরোগ (লাম্পি স্কিন ডিজিজ), বাংলাদেশে রোগটি নতুনভাবে আবির্ভূত হয়েছে। এ রোগের ভ্যাকসিনও বাংলাদেশে নেই; তাই আমরা সঠিক চিকিৎসাও দিতে পারছি না। মেহেরপুরে এখন পর্যন্ত এ রোগে কোনো পশু মারা যায়নি। এ রোগে শুধুই গবাদিপশু (গরু-মোষ) আক্রান্ত হয় কিন্তু মানুষ আক্রান্ত হয় না। তবে এই রোগাক্রান্ত পশুর মাংস খাওয়া ঠিক হবে না। খামারি ও গবাদিপশু পালনকারীরা সচেতন হলেই এই রোগের প্রকোপ কমবে। সে লক্ষে প্রাণিসম্পদ বিভাগ সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন স্থানে আলোচনা করছেন ও লিফলেট বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন।