কৃষকরা যেনো ধানের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত না হয়

সুসংবাদ হলো, দেশে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। দুঃসংবাদ হলো, গত বছরের মতো এবারও ধানের ন্যায্য দাম না পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বর্তমানে প্রতি মণ ধান উৎপাদনে কৃষকের খরচ হয় ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা। অথচ হাট-বাজারে এখন প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৭৫ টাকায়। তার মানে প্রতি মণ ধানে কৃষককে লোকসান গুণতে হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। এ হিসাবে প্রতি বিঘায় গড়ে ২৫ মণ ধান উৎপাদন হলে ধান চাষ করে লোকসান গুণতে হচ্ছে কমপক্ষে ৪ হাজার টাকা। আমন কাটা ও মাড়াই শুরু হওয়ার পর মূলত চালকল মালিকরাই ধানের দাম নিয়ন্ত্রণ করেন। বাজারে ধান ওঠার পর সিন্ডিকেট করে তারা অন্তত দুই সপ্তাহ কোনো ধান কেনেন না। এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই বাজারে ধানের দাম পড়ে যায়। আর তখন ধান কিনে গুদামজাত করা হয় এবং ওই ধান দিয়ে সারা বছর চাল তৈরি করে বেশি দামে বিক্রি করা হয়। প্রতি বছর সরকারিভাবে ধান কেনা হলেও প্রকৃত কৃষকরা ফড়িয়া ও দালালদের কারসাজিতে গুদামে ধান বিক্রি করতে পারেন না। ফলে কৃষক উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। সরকার ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছে, এবার সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ৬ লাখ মেট্রিক টন ধান কেনা হবে। সঠিক উপায়ে ও প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে যাতে এসব ধান কেনা হয়, সেদিকে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। দুঃখজনক হলো, কৃষক কষ্ট করে ফসল উৎপাদন করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা ন্যায্য দাম পাচ্ছে না, এ ক্ষেত্রে প্রতারিত হচ্ছে। এটি শুধু আমন নয়, অন্যান্য ফসলের ক্ষেত্রেও ঘটছে। মূলত কৃষকের সামনে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তারা উৎপাদন খরচের চেয়ে অনেক কম মূল্যে ধানসহ অন্যান্য ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। এ অবস্থায় কৃষককে সুরক্ষা দেয়ার জন্য সরকারি নীতিমালা থাকা জরুরি। প্রতিবেশী ভারতে সরকারিভাবে দেশটির মোট উৎপাদনের ২০ শতাংশ ধান ও চাল সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। আমাদের দেশে এ হার অনেক কম; মাত্র ৩ থেকে ৪ শতাংশ। সরকার মূলত চালকল মালিকদের কাছ থেকে চাল কিনে থাকে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রায় প্রতি বছর বড় বড় চালকল মালিক ও ব্যবসায়ী গ্রুপগুলো চালের বাজার অস্থির করার অপপ্রয়াস চালায়। চাল আমাদের প্রধান খাদ্যদ্রব্য। চালের দর নিয়ে যে কোনো ধরনের অস্থিরতা রোধ করে মানুষের দুর্ভোগ লাঘব করতে হলে সরকারের কার্যকর কৌশল ও ব্যবস্থা থাকা উচিত। সরকারিভাবে ২০-২৫ শতাংশ মুনাফা দিয়ে ধানের মূল্য নির্ধারণের পর কৃষকের কাছ থেকে অন্তত ১৫ শতাংশ ধান সংগ্রহ করা উচিত। এর ফলে কৃষক লাভবান হবে। তাদের মুখে হাসি ফুটবে। বস্তুত এজন্য দেশে কৃষিপণ্যের মূল্য নির্ধারণ নীতিমালার আওতায় একটি ‘প্রাইজ কমিশন’ গড়ে তোলা দরকার। বলার অপেক্ষা রাখে না, দীর্ঘ মেয়াদে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে কৃষকের ন্যায্যমূল্য পাওয়ার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। তা না হলে কৃষক বারবার লোকসানের আশঙ্কায় ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেললে তা ভোক্তার জন্য তো বটেই, দেশের জন্যও মঙ্গলজনক হবে না।